প্রধান শিক্ষক
১৮ আগস্ট, ২০২১ ১২:০২ পূর্বাহ্ণ
রূপান্তরের চূপকথা
রূপান্তরের চূপকথা
সময়টা বর্ষাকাল। তারিখ ১৪ই
আগষ্ট, ২০১৮। জনাকয়েক শিক্ষককে নিয়ে এগিয়ে
যাচ্ছে এই নৌযান । উদ্দেশ্য স্ব স্ব কর্মস্থল । আমিও এই
যানের একজন যাত্রী । প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রথম কর্মস্থল আমার মাকালকান্দি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় । অসম্ভব রকমের একটা
ভালোলাগা কাজ করছিল ভেতরে। ভ্রমণটাও বেশ উপভোগ করছিলাম । বাংলার বর্ষার
গ্রামগুলো সত্যি অপূর্ব।কিন্তু বিদ্যালয়ে পৌঁছে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ।
বাংলাদেশে এখনো এমন টিনের চালাঘরে বিদ্যালয় আছে ! পাশেই জরাজীর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ আরেকটি আধাপাকা টিনের ঘর । স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে
। মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল । রাতে ঘুম এলো না । নিজেকে বার বার জিজ্ঞেস করলাম , আমি কি হেরে যেতে জানি ? না ! হারবো না । পরের দিনের সকালটিকে নতুন করে সাজালাম । শুরু হলো বন্ধুর
পথের এক নতুন যাত্রা ।
যাত্রাটা শুরু হলো উঠান বৈঠকের মধ্য দিয়ে । উঠান বৈঠকের
আলোচনায় ,ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে যাতায়াত ব্যবস্থা সবচেয়ে বড়
বাঁধা হিসেবে চিহ্নিত হলো । উঠান বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি আমি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহায়তায় বিদ্যালয়ে
যাতায়াতের জন্য তৈরী করলাম বাঁশ দিয়ে ভেলা । দ্বিতীয় পর্যায়ে অভিভাবক সমাবেশের
আয়োজন করে বিভিন্ন রকম শিক্ষা উন্নয়ন
কার্যক্রম হাতে নিলাম । তৈরী হলো নেতা পরিষদ, উপদেষ্টা পরিষদ, ও শিক্ষা সহায়ক
বন্ধু ।সকলের পূর্ণ সহযোগিতা ও পরামর্শে আমার পাঠদানসহ শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক
হিসেবে গড়ে তোলার কাজে হাত দিলাম । কিন্তু পুরীপুরি ভাঙা একটি কুটির যেখানে একটু
বৃষ্টি হলেই টুপটুপ করে জল পড়তো ,মেঝের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল । এবার আমায় এস এম
সি সভাপতি ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহোদয়ের শরণাপন্ন হতে হলো তারা দুজনেই আমায়
সহযোগিতা করলেন । যদিও টিনের চালাঘর ,চেষ্টা করলাম নিজের সাধ্যের মধ্যে এই
কুটীরখানাকে সাজিয়ে তুলতে । কম সময়ের মধ্যেই কাজটা হয়েও গেলো । অফিসের একটা অংশে
তৈরী করলাম প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি । শিশুদের জন্য আনা হলো নান্রকম খেলনা , খাতা ,কলম
ইত্যাদি । ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার প্রতি আকৃষ্ট হতে লাগলো । শুরু হলো শিক্ষার্থইদের মধ্যে ভালো হবার বা ভালো করার
প্রতিযোগিতা । তাদের আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাসের উপর ভর ওদের ঘরের বাইরে প্রকৃতির কাছে
নিয়ে গেলাম । তাদেরকে হাতে কলমে জীবনমুখী
শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে আপ্রাণ
চেষ্টা করতে লাগলাম । আমদের চেষটা বিফলে যা য়নি । আমরা সফলতার ছোঁয়া
শীঘ্রই পেয়ে গেলাম । ঘর থেকে বেরিয়ে আমরা পা বাড়াই বাইরে । উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও
জাতীয় পর্যায় থেকেও আমাদের ডাক আসে । ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা , উপজেলা/জেলড়
প্রতিযোগিতা , আঞ্চলিক কাব ক্যাম্পুরী , ইত্যাদি
।
দিনশেষে আমদের
ঝুলিতে অনেক কিছুই পড়তে থাকল।----- ট্যালেন্টপুল বৃত্তি, সাধারণ বৃত্তি, বিভিন্ন
ক্ষেত্র শ্রেষ্ঠত্বের পুরষ্কার ইত্যাদি ।
এসব অর্জনের সূত্রটা ধরেই আজ আমরা সফলতার
স্বাদ নিচ্ছি । এই সফলতা যেন ক্ষণিকের না হয় । এই সফলতা হোক আমৃত্যুর তরে। । হোক
কোন টিনের চালাঘর তাতে কি ? আমরা যে জয় করবোই সকল ব্যর্থতাকে ছাড়িয়ে আমাদের বিজয়ের
নিশান আজ উর্ধ্ব গগণে পত পত করে উড়ছে ।
আরো দেখুন
কোনো ভয় নাই, চলো স্কুলেতে যাই