Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৯ আগস্ট, ২০২১ ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন
মাকালকান্দি গ্রামটি বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত। 
১৯৭১ সালে, হবিগঞ্জ সিলেট জেলার অধীনে একটি উপ-বিভাগ ছিল এবং বানিয়াচং এশিয়ার সবচেয়ে বড় গ্রাম ছিল। বানিয়াচংয়ের উত্তর-পশ্চিম দিকে, উত্তর থেকে দক্ষিণদিক বরাবর ৭মাইল এবং পূর্ব-পশ্চিম দিকে ৫ মাইল ভূখণ্ডের একটি হাওর রয়েছে, যার আয়তন প্রায় ৩৫ বর্গমাইল। এই ভূখণ্ডের অভ্যন্তরেই মাকালকান্দি, ১৫০০ হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটি অবস্থিত ছিল। যেহেতু এখানে মাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল, তাই স্বাক্ষরতার হার ৩৫% এর কিছু বেশি  এই গ্রামের অনেক  লোক চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং অধ্যাপক ছিলেন। অর্থনৈতিকভাবে গ্রামটি সমৃদ্ধ ছিল। এখানে একটিও খুঁড়ে ঘর ছিলনা।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে এই গ্রামের অধিবাসীগণ আওয়ামীলীগকে পূর্ণ সমর্থন দেন। তাই  তারা জাতীয় পরিষদ প্রার্থী লে. ক. এম এ রবকে এবং প্রাদেশিক পরিষদ প্রার্থী বাবু গোপাল কৃষ্ণ মহারত্নকে শতভাগ ভোট প্রদান করেন। যার ফলে তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধবাদীদের কুনজরে পড়েন। 
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে, মাকালকান্দি গ্রামের লোকেরা তাদের নিরাপদ মনে করেছিল যেহেতু গ্রামটিকে চারিদিকে হাওর প্রাকৃতিক দুর্গের মতো বেষ্টন করে রেখেছিল। সুতরাং, তারা ভারত চলে যায়নি। এমনকি স্থানীয় এম.পি গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন তার পরিবারকে সুরক্ষার জন্য মাকালকান্দি গ্রামে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। আশপাশের গ্রাম থেকে অনেক হিন্দু শরণার্থী হিসেবে মাকালকান্দি গ্রামে আশ্রয় নেয়। 
যাইহোক, বানিয়াচং গ্রামের সৈয়দ ফজলুল হক মোতাওয়াল্লী রাজাকার হিসেবে যোগ দেয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে। ১৭ই আগস্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং সহচরদের মধ্যে একটি আলোচনা হয়, যেখানে হক পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনীদের মাকালকান্দি গ্রামে আক্রমণ চালাতে প্ররোচিত করে। 
১৮ই আগস্ট, মেজর দুররানির নেতৃত্বে পাকহানাদারের একটি দল খুব ভোরে নৌকায় করে মাকালকান্দির দিকে আসতে থাকে। তাদের সাহচর্যে ছিল পুলিশ অফিসার জয়নাল আবেদিন এবং স্থানীয় রাজাকার সৈয়দ ফজলুল হক মোতাওয়াল্লী । দুর্যোগময় বর্ষার বৈরীভাবাপন্ন আবহাওয়া, প্রবল ঢেউয়ের মধ্যেই  সকালের দিকে পাকসেনারা মাকালকান্দি গ্রামের অভিমুখে  যাত্রা শুরু করে। ঐদিন  ছিল মনসা পূজার যাত্রার দিন অর্থাৎ পুজার ঠিক পরের দিন।  গ্রামবাসীরা পূজার মুর্তি বিসর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। প্রবল ঝড়বৃষ্টি ও ঢেউয়ের মধ্যেই  হঠাৎ, পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রায় ২০টি ৫০০ মনা আইটলা নৌকা নিয়ে গ্রামের কাছে চলে আসে।  গ্রামবাসী প্রথমে বুঝতেই পারেনি যে এগুলো পাকিস্তানিদের নৌকা। বেদের নাও বহর বা মালবাহী আইটলা নৌকা ভেবে তারা যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু যখন পাকসেনারা বন্দুকের  গুলি চালানো শুরু করে তখন নিরুপায়  গ্রামবাসীরা যে যেদিকে পারে, নৌকা নিয়ে  পালাতে থাকে। অনেকে শাখা বরাকে  নদীতে ঝাঁপ দেয়। বৃষ্টির মতো গুলি করতে করতে  পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা নৌকা থেকে নেমে পড়ে  এবং তারা প্রথমেই পূর্ব হাটিতে  আগে আক্রমণ করে। তেমন কাউকে বাড়িতে না পেয়ে তারা এবার নেমে আসে পশ্চিম হাঁটিতে। প্রবেশ করেই পশ্চিম হটির পালিয়ে যেতে অসমর্থ অসহায় বৃদ্ধ- নারী পুরুষ উপরে চলে   অকথ্য নির্যান ননা ব ন
। কাউকেই  কিনতি নিয়তির নির্মম পরিচান্দি মণ্ডপের দিকে যায়। তারা বারজন গ্রামবাসীকে ধরে ফেলে এবং চণ্ডী মণ্ডপের সামনে একই সারিতে দাঁড় করায়। একশো এগার (১১১) জন ব্যক্তিকে গুলি করে মারা হয়। তখন কংস মোহন দাশ নামে একশোবারতম ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত হয়েও গণহত্যা থেকে বেঁচে যায়। পাক হানাদাররা সারা গ্রাম তন্নতন্ন করে গ্রামের  লোকদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে  গুলি করে হত্যা করে। এরপর এই দেহগুলো শাখা বরাক  নদীতে ফেলে দেয়। আহত হয়ে ৪০ জনের মতো লোক পালাতে সক্ষম হয়। যদিও আহতদের মধ্যে কিছু লোক  ভারত যেতে সক্ষম হয়েছিল, তবে বেশিরভাগ লোক আহত হয়ে মারা যায়।  রাজাকাররা সারা গ্রাম লুটপাট করে নেয়। সারা গ্রামে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে বানিয়াচংয়ের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী গ্রাম মাকালকান্দি পরিণত হয় এক ধ্বংসস্তূপে। সদ্যজাত শিশুকে বুটের নিচে পিষে মারা হয়। আরেকটি শিশুকে ঐ বর্বরেরা উলটে ধরে হাতে নিয়ে গুলি করে। 
এই হত্যাযজ্ঞের পর প্রায় সপ্তাহব্যাপী এই নগ্ন নিঃসঙ্গ গ্রাম থেকে সর্বস্ব লুট করে নেয় দেশীয় দালালরা। দেশ ডিসেম্বর মাসে স্বাধীন হয় কিন্তু ১৮ আগষ্ট প্রাণদাতারা কি আর ফিরে আসবে?  
২০০৮ সালে, নূরে আলম সিদ্দিক বানিয়াচংম উপজেলার ঐসময়কার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গণহত্যার ৩৭তম বার্ষিকীতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন। স্মৃতিস্তম্ভে গণহত্যার শিকার ৭৮ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়।
এ বছর জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে  গ্রামের বাইরে বৃহৎ পরিসরে নতুন করে মাকালকান্দি মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা স্মৃতিসৌধ তৈরী  করা হয়।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি