Loading..

প্রকাশনা

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

প্রত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব

ইঞ্জিনিয়ার পলাশ মজুমদার, শিক্ষক

চাঁদপুর জনতা হাই স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা।

 

সৃজনশীল পর্ব-১:

এইচএসসি পরীক্ষা-২০২২ সালের সিলেবাসের আলোকে আইসিটি বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনার আজ প্রথম পর্ব।

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো। কোভিড ১৯ প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার পুনর্বিন্যাসর্ক পাঠ্যসূচি আলোকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিষয় কোড: ২৭৫ এর তত্ত্বীয় পাঠের সৃজনশীল অংশের পাঠ নিয়ে আলোচনা করবো। প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আজকের পর্বে পাঠ্যপুস্তকে উল্লিখিত শিখনফল ভার্চয়াল রিয়েলিটির (Vertual Reality) ধারণা বিশ্লেষণের অন্তর্ভূক্ত প্রত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।

 

রাতুল ও রিয়া দুই জন সহপাঠী ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বেশ কিছুদিন আগে রাতুলের মামা কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। রাতুল বুদ্ধি করে ৯৯৯ এ কল করে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করলো। দাউদকান্দি থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে তাদের এম্বুলেন্সটি দূঃর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি অদক্ষ ট্রাক ড্রাইভারের কারণে। রাতুল বিষয়টি নিয়ে রিয়ার সাথে বিস্তারিত আলোচনা করার পর রিয়া বললো আমাদের আইসিটি শিক্ষক জনাব মোঃ নিজাম উদ্দিন স্যার বললেন আমাদের দেশের গাড়ির ড্রাইভগণ শুধু নন, বিমান পথ, নৌপথ ও রেলপথের চালকগণকে খুব সহজে দক্ষ করা ও ট্রাফিক পরিচালনার ক্ষেত্রেও দক্ষতা আনা সম্ভব যদি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্য নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতো। তাহলে অনেক দূর্ঘটনা কমে যেতো।

ক. ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কী?

খ. ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ধাপ সমূহ ব্যাখ্যা কর।

গ. ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে অদক্ষ ট্রাক ড্রাইবারের কীভাবে দক্ষতা প্রদান করা সম্ভব ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে কীভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

 

সম্ভাব্য (ক) নং প্রশ্নের উত্তর

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সস্টেম যাতে মডেলিং (Modelling) ও অনুকরণবিদ্যার (Simulation) প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য পরিবেশের সাথে সংযোগ স্থাপন বা উপলব্দি করতে পারে। প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনা উদ্রেককারী প্রযুক্তি নির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবে বাস্তবতা বা কল্পবাস্তবতা বলে।

সম্ভাব্য (খ) নং প্রশ্নের উত্তর

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মূলত দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে: যথা-

§  প্রথমে কম্পিউটারের সাহায্যে ত্রিমাত্রিক ছবি দিয়ে ভার্চুয়াল পরিমান বানানো হয়।

§  দ্বিতীয় ধাপে ব্যবহারকারীর গতিবিধি অনুসরণ করে ত্রিমাত্রিক ছবি সে অনুযায়ী পরিবর্তন করা হয়। ডান দিকে তাকালে ডানদিকের ছবি দেখাবে, যেমন- গেমে ডাইনোসর সামনে আসলে প্রয়োজন অনুযায়ী হাত নেড়ে তার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। এই নাড়াচড়াগুলো অনুসরণ করার জন্য সেন্সর ব্যবহার করা হয়। ত্রিমাত্রিক ছবি দেখার জন্য লেন্সসহ হেডসেট ব্যবহার করা হয়, যা একই সঙ্গে চোখের গতিবিধির হিসাব রাখে। ফলে ত্রিমাত্রিক ছবি ব্যবহারকারীর সামনে বাস্তব বলে পরিলক্ষিত হয়।

সম্ভাব্য (গ) নং প্রশ্নের উত্তর

আজকাল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ভার্চুয়ালি ড্রাইভিং শেখা সম্ভব। ডাইভিংয়ের নানা নিয়ম-কানুন খুব সহজেই আয়ত্ব করা সম্ভব। স্বল্পমূল্যের মাইক্রো কম্পিউটার প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ভার্চয়াল রিয়েলিটি ডাইভিং সিমুলেটর উন্নয়ন করা হয়েছে। কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের জন্য চালককে একটি নিদির্ষ্ট আসনে বসতে হয়। চালকের মাথায় পরিহিত হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে’র সাহায্যে কম্পিউটার দ্বারা সৃষ্ট যানবাহনের অভ্যন্তরীণ অংশ এবং আশেপাশের রাস্তার পরিবেশের একটি মডেল প্রদর্শন করা হয়। এর সাথে আবার যুক্ত থাকে একটি ‘সিক্স ডিগ্রি অব-ফ্রিডম’ হেড ট্র্যাকিং সেস্টেম। ডিসপ্লে গ্রাফিক্সটি ব্যবহারকারীর মাথার গতি অনুযায়ী সাড়া প্রদান করে। ফলে যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অংশের ৩৬০ ডিগ্রি দর্শন লাভ করেন এবং কম্পিউটার-সৃষ্ট পরিবেশে মগ্ন হয়ে যান। সিমুলেটরটিকে ব্যবহারকারী অটোমাবাইল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকেন যার মধ্যে রয়েছে এক্সেলারেশন ও ব্রেকিংয়ের জন্য স্টিয়ারিং হুইল এবং প্যাডেল। এ পদ্ধতিতে জরুরি মুহূর্তে যানবহন পরিচালনা ও এর নিয়ম কানন খুব সহজে শেখা যায়। তাই অদক্ষ ট্রাক ড্রাইভারগণকে যদি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তবে তারা দক্ষ হয়ে উঠবেন। তা সঠিক ভাবে করা গেলে আমাদের দেশের সড়ক দূর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।

 

সম্ভাব্য (ঘ) নং প্রশ্নের উত্তর

যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। শুধু সড়ক নয়, আকাশ পথ, রেল পথ, জল পথে চলাচলকারী যানবাহন পরিচালনায় এখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যান চালক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চালকগণকে দক্ষ করা গেলে বেশিরভাগ দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব এবং চালকগণ যদি তাদের যান চালনায় পারদর্শী হতে পারেন তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। আধুনিক যান চালনা কৌশল হিসেবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার এক্ষেত্রে এনেছে নতুন মাত্রা। সাধারণ চালনা কৌশল থেকে শুরু করে জটিল কৌশলগুলোও রপ্ত করা সম্ভব ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রত কাল্পনিক পরিবেশে সংকটপূর্ণ অবস্থায়ও কীভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা শিখতে পারা যায় থ্রিডি এর ভার্চুয়াল উপস্থাপনার মাধ্যমে। সড়ক পথের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা তীব্র যানজটে কীভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা এ পদ্ধতিতে শেখা যায় খুব সহজেই। বিমান সিমুলেশনের মাধ্যমে বিমান চলকগণ তাদের বিমান চালনার যাবতীয় কৌশল রপ্ত করতে পারেন। আকাশপথে বিমান চলাচলের ঝুঁকি সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে। প্রতিটি বিমান বন্দরে শত শত বিমানের ওঠানামা তদারকির জন্য বিমান কর্তৃপক্ষে সহযোগীতা করে যাচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে বিমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিমান আকাশ পথে ও রানওয়েতে কখন কোন বিমানটি উঠানামা করবে তার পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব পালন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে দিয়েছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। রেল ও জল পথের সিডিউল তৈরি, পর্যবেক্ষণ ও দিক নির্দেশনা প্রদান করে যাচ্ছে খুব সহজে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে। আমাদের দেশে অধিকাংশ সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে গাড়ি চালকের অদক্ষতা ও সঠিক ট্রাফিক আইন না জানার কারণে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালকরাই পারেন যানবাহনকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে উন্নয়নে সহায়তা করতে। এছাড়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ট্রাফিক সিস্টেম তৈরি করা হলে তা খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

 

আগামী পর্ব দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের মত শেষ করছি। সবাই ভাল থেকো, সুস্থ থেকো এবং অনুশীলনের সাথেই থেকো। 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি