Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৭:৪৩ অপরাহ্ণ

ইন্টারনেট কি ও কিভাবে কাজ করে..........

ইন্টারনেট – বর্তমানে এই শব্দটি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেট এর ব্যবহার আমাদের জীবনে এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকে অনেকে দম বন্ধ থাকার সাথেও তুলনা করে। অনেকেই তো ইন্টারনেট ব্যবহার এর অধিকারকে রীতিমতো মানবাধিকার হিসেবে গণ্য করে।

চলুন জেনে নিই দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত এই ইন্টারনেট কাকে বলে, ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে, ইন্টারনেট ইতিহাস, ইন্টারনেট এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ইন্টারনেট কী?

ইন্টারনেট হলো মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অগণিত কম্পিউটার ও ডিভাইস সমূহের মধ্যে আন্তঃসংযুক্ত একটি নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার ও ডিভাইস নেটওয়ার্কের সমষ্টি হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট সকল ধরনের জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত একটি নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা।

ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে

আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত আন্তঃসংযুক্ত ডিভাইসগুলোর মধ্যকার বিভিন্ন ধরনের ডাটা ও মিডিয়া আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম। প্যাকেট রাউটিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট কাজ করে, যা ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ও ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রটোকল (টিসিপি) এর মাধ্যমে সংযুক্ত। টিসিপি ও আইপি একইসাথে এটি নিশ্চিত করে যাতে বিশ্বের যেকোনো কেন্দ্র থেকেই যেকোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়।

ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ডাটা প্যাকেট ও মেসেজ আকারে প্রেরিত হয়। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে পাঠানো ডেটাকে মেসেজ বলা হয়, যা প্রেরণের আগে ছোট ছোট অংশ বা প্যাকেটে পরিণত হয়।

এই মেসেজ ও প্যাকেটসমুহ এক সোর্স থেকে অন্য সোর্সে আইপি ও টিসিপি ব্যবহার করে ট্রাভেল করে। আইপি হলো মূলত কিছু সিস্টেম এর কিছু নিয়ম যা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা প্রেরণের সময় তা মনিটর করে।

ইন্টারনেট এর ইতিহাস

পৃথিবী কিংবা মানবসভ্যতার বয়স হিসাব করলে ইন্টারনেটকে অপেক্ষাকৃত নতুন একটি আবিস্কার হিসাবে গণনা করা যেতে পারে। সৌভিয়েত ইউনিয়ন যখন ১৯৫৭ সালে স্পুটনিক-১ স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে প্রেরণ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরেকবার নড়েচড়ে বসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে মাথা ঘামাবার জন্য। সেই লক্ষ্যের জের ধরে ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রীয় এডমিনিস্ট্রেশন অনেকগুলো এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করে। আরপা (ARPA) ছিলো এই সদ্য নির্মিত এজেন্সিগুলোর মধ্যে একটি।

আরপা ছিলো মূলত ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট এর কম্পিউটার সাইন্স বিষয়ক রিসার্চ প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য ছিলো বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যকার তথ্য আদান প্রদানের সহজ একটি মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা। জে.সি.আর. লিকলাইডার সে সময়ে আরপা এর ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি ছিলেন এই তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে তৈরীর অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা, যা কিছু বছরের ব্যবধানেই সত্যি হতে যাচ্ছিলো।

আরপা ছাড়া বর্তমানের ইন্টারনেট পর্যন্ত আসা কোনোদিনও সম্ভব হতোনা। এই প্রতিষ্ঠানের চেষ্টার ফসল হিসেবে ইন্টারনেট এর প্রথম সংস্করণ “আরপানেট” জন্ম নেয়। আরপানেট তৈরীর কিছুবছর আগেই লিকলাইডার আরপা ছেড়ে গেলেও তাঁর চিন্তাভাবনা ও দূরদর্শিতা আরপানেটের সৃষ্টির পেছনে প্রধান শক্তির অংশ ছিলো।

শুর থেকেই আরপানেট কে সফলতার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছিলো। ১৯৭১ সালে ইউনিভার্সিটি ও সরকারী গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে একই ছাদের নিচে আনার লক্ষ্যে আরপানেট এর হোস্ট সংখ্যা ২৩ এ গিয়ে দাঁড়ায়।

১৯৭৪ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে জনসম্মুখে ধীরে ধীরে আরপানেট সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, যাতে এটিকে কমার্সিয়ালাইজ করতে সুবিধা হয়। মিলিটারি ও রিসার্চ এর লক্ষ্যে তৈরী আরপানেট ১৯৭৪ সালে বেরানেক ও নিউম্যান এর হাতে ধরে “টেলনেট” এর রুপ পায়৷ ১৯৮১ সালে আরপানেট এর হোস্ট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২১৩ তে এবং প্রতি ২০ দিনে একটি করে নতুন হোস্ট যুক্ত হচ্ছিলো।

১৯৮২ সালে “ইন্টারনেট” শব্দটি প্রথমবার ব্যবহার করা হয়৷ ১৯৮৪ সালে ইন্টারনেট হোস্ট সংখ্যা ১০০০, ১৯৮৭ সালে ১০০০০ ও ১৯৯০ সালে ৩০০০০ এর মাইলফলক অতিক্রম করে।

১৯৮৮ সালের মধ্যে যোগাযোগের একটি প্রধান মাধ্যমে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো ইন্টারনেট। হ্যাকার এর মত ইন্টারনেট ভিত্তিক শব্দগুলো প্রাণ পেতে শুরু করে তখন, যখন ১৯৮৮ সালের পহেলা নভেম্বরে “ইন্টারনেট ওয়ার্ম” নামে একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম তখনকার ৬০ হাজার হোস্টের মধ্যে ৬০০০ হোস্ট বিকল করে দেয়। অবশ্য তৎক্ষণাৎ ইমারজেন্সি টিম গঠন করে এই সমস্যার সমাধান খোঁজা শুরু হয়।

এভাবেই বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে সৃষ্টির ২৫ বছর সম্পন্ন করে আজকের ইন্টারনেট। বাড়তে থাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা। ধীরে ধীরে আরপানেট রুপ পায় আজকের ইন্টারনেটে।

ইন্টারনেট এর জনক কে

ইন্টারনেট এর জনক বলা হয় ভিনটন গ্রে কার্ফ (Vinton Gray Cerf) কে। তিনি টিসিপি/আইপি এর সহ-উদ্ভাবক ছিলেন। ডারপা (DARPA) তে কর্মরত অবস্থায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। এছাড়াও এমসিআই এ কর্মরত অবস্থায় তিনি এমসিআই মেইল নামক একটি ইমেইল প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেন।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা

২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে একটিভ  ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪.৬৬ বিলিয়ন, যা পৃথিবীর জনসংখ্যার ৫৯.৫ শতাংশ। এর মধ্যে ৪.৩২ বিলিয়ন মানুষ মোবাইল এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন।

ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষ দেশসমুহ

বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দিক দিয়ে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে চীন। এরপরে ইন্টারনেট ব্যবহারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। ভারত এর পর সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম।

ইন্টারনেটের কি আশীর্বাদ না অভিশাপ?

ইন্টারনেট নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য একটি আশীর্বাদ। কিন্তু অনেকেই এর ক্ষতিকর দিকগুলোকেই বড় করে দেখেন। আমরা পরের সেগমেন্টসমুহে ইন্টারনেট এর সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ জানবো।

ইন্টারনেটের সুবিধা

ইন্টারনেট এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলোঃ

  • কল্পনা করা যায়, এমন যেকোনো কিছু সম্পর্কে তথ্য ইন্টারনেটে উপস্থিত
  • ইন্টারনেটে থাকা শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য থাকে হাতের নাগালে
  • ঘরে বসেই হরেক রকমের তথ্য নিয়ে গবেষণা সম্ভব ইন্টারনেট ব্যবহারে
  • একই বিষয়ে ইন্টারেস্ট আছে এমন মানুষদের এক জায়গায় পাওয়া যায় বলে ইন্টারনেটে যেকোনো সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় খুব সহজেই
  • ফ্রি ইমেইল সার্ভিস এর মাধ্যমে খুব সহজেই যোগাযোগ সম্ভব
  • মেসেজিং, ভিডিও ও অডিও কলিং ফিচারযুক্ত প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ হয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন
  • ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ঘরে বসেই বন্ধুত্ব করা যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে
  • কোনো বিষয় জানার থাকলে প্রশ্নোত্তর ওয়েবসাইটগুলোর সাহায্যে খুব সহজেই সমাধান পাওয়া যায়
  • সকল ধরনের খবর ইন্টারনেটে উপস্থিত
  • ইন্টারনেট থেকে শিখে দক্ষতা অর্জন করা যায় নতুন নতুন ক্ষেত্রে।

ইন্টারনেটের অসুবিধা

ইন্টারনেট এর সুবিধার পাশাপাশি বেশকিছু চিন্তনীয় অসুবিধাও বিদ্যমান। ইন্টারনেট এর কিছু অসুবিধাসমুহ হলোঃ

  • যেকেউ যেকোনো কিছু ইন্টারনেটে পোস্ট করতে পারে বলে অগণিত ভূল তথ্যে ইন্টারনেট ভরা
  • ইন্টারনেট আসক্তির ফলে অসংখ্য মানুষ তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে অনিহা প্রকাশ করে
  • ইন্টারনেটে বিদ্যমান পর্ণোগ্রাফির কবলে পড়ে বিপথে যায় তরুণ-সমাজ
  • ইন্টারনেটে অনেক নকল ওয়েবসাইট রয়েছে যার মাধ্যমে ধূর্ত লোকেরা টাকা হাতিয়ে নেয়
  • হ্যাকারদের কবলে পড়ে অনেকেই ব্যাক্তিগত তথ্য হারায় ও কম্পিউটার ভাইরাসের কবলে পড়ে

ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট

ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করার জন্য অনেক ওয়েবসাইট ও অ্যাপ রয়েছে। এমন একটি ওয়েবসাইট হলো Fast.com, যাতে প্রবেশ করা মাত্রই ইন্টারনেট এর গতি মাপার প্রসেস শুরু হয়। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ইন্টারনেট এর স্পিড ও সেই সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় উল্লেখিত ওয়েবসাইটে।

ইন্টারনেট বন্ধ কেন

মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আমাদের ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করে প্রবেশ করা যায় না। এই ধরনের ব্যাপার দুইটি কারণে ঘটে। একটি হলো – যে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন সেটি ডাউন। এছাড়াও ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে এই ব্যাপারটি ঘটতে পারতে। সেক্ষেত্রে isitdownrightnow.com ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করে যে সাইটটিতে প্রবেশ করতে পারছেন না সেটির লিংক এন্টার করলেই সাইটটি কি ডাউন নাকি আপনার ইন্টারনেটে সমস্যা – সে সম্পর্কিত তথ্য পেয়ে যাবেন।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি