Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

০৫ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:২২ পূর্বাহ্ণ

পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য
img
Chameli Afroz

প্রভাষক

ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ হচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি শাখা যা বাংলাদেশে ইংরেজি ও ব্রিটিশ শিক্ষা প্রদান করে থাকেভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়ে ১৯৪৭ সালে যে দেশ গঠিত হয়েছিল, মাত্র ২৫ বছরের মধ্যে তার মৃত্যু কেন হলো - তা নিয়ে গত পঞ্চাশ বছরে বিস্তর গবেষণা-ব্যাখ্যা-বিতর্ক হয়েছে, এখনও হচ্ছে।

সন্দেহ নেই যে পাকিস্তান তৈরির পেছনে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর যুক্তিতে সায় দিলেও পূর্ববঙ্গের মুসলিমরা কখনই তাদের বাঙালি জাতিসত্তা এবং স্বাধীনভাবে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেনি।“প্রথম থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানে পাঞ্জাব প্রদেশের একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য ছিল। পাকিস্তানের ঐ অংশে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ছিল পাঞ্জাবে। সবচেয়ে বেশি উর্বর কৃষি জমি ছিল সেখানে। সবচেয়ে বড় কথা সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব ছিল পাঞ্জাবের। অনেক পাঞ্জাবি সেনা কর্মকর্তা মনে করতেন পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। তাদের অনেকেই বাঙালিদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করতেন, মনে করতেন বাঙালিদের লড়াই করার ক্ষমতা নেই।““প্রথম থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানে পাঞ্জাব প্রদেশের একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য ছিল। পাকিস্তানের ঐ অংশে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ছিল পাঞ্জাবে। সবচেয়ে বেশি উর্বর কৃষি জমি ছিল সেখানে। সবচেয়ে বড় কথা সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব ছিল পাঞ্জাবের। অনেক পাঞ্জাবি সেনা কর্মকর্তা মনে করতেন পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। তাদের অনেকেই বাঙালিদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করতেন, মনে করতেন বাঙালিদের লড়াই করার ক্ষমতা নেই।“অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা শেষ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে পূর্ব পাকিস্তানে ঐ দশ বছরে ৩২ শতাংশ কমে গিয়েছিল, পশ্চিমে বেড়েছিল ২১ শতাংশ। সরকারি বৃত্তি, অনুদান প্রধানত পেয়েছে পশ্চিমের শিক্ষার্থীরা,কারণ বিজ্ঞাপন যখন পূর্বে প্রকাশিত হত তখন আবেদনের সময় থাকতো না।

চাকরির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এবং একাধিক গবেষণায় বলা হয়েছে সুযোগ প্রচারে এই দেরি করা হতো উদ্দেশ্যমুলকভাবে।সিআইএর ঐ গোপন রিপোর্টে বলা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যত বেড়েছে দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য সেই সাথে বেড়েছে, জীবনযাত্রার মানের তারতম্য বেড়েছে।

“পূর্ব পাকিস্তানকে বিনিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে। তবে সেই বিনিয়োগ কখনই ঠিকমত আসেনি, বিশেষ করে ষাটের দশকের আগে। বেসরকারি বিনিয়োগও ছিল নামে মাত্র। ফলে পূর্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল খুবই নিম্ন। “উনিশ'শ সাতচল্লিশ সালে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা মাথাপিছু আয়ের বিবেচনায় তেমন কোনও তারতম্য না থাকলেও, অব্যাহত এই বৈষম্যের পরিণতিতে পরের ২৫ বছরে পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

পশ্চিম পাকিস্তানে ১৯৪৯-৫০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৩১১ রুপি (১৯৫৯-৬০ সালের মূল্যের ভিত্তিতে) এবং পূর্ব পাকিস্তানের ছিল ২৮৭ রুপি যা প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু ১৯৬৯-৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথা পিছু আয় দাঁড়ায় ৫৩৭ রুপি এবং পূর্ব পাকিস্তানে ৩৩১ রুপি।পাকিস্তানের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দলিল থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি যুক্তি তুলে ধরা হয় যে পূর্ব পাকিস্তানের অব্যাহত অনগ্রসরতার ঐতিহাসিক একটি প্রেক্ষাপট ছিল যে যুক্তি পশ্চিমা অনেক বিশ্লেষকও অংশত স্বীকার করেন।বাংলাদেশের সাবেক সচিব ড. আকবর আলী খান, যিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা ছিলেন, বিবিসিকে বলেন, সরকারি চাকুরীতে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যে কোনো রাখ-ঢাক ছিলনা। “প্রচুর বিহারী ( ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসা উর্দুভাষী) নিয়মিত বাঙালি কোটায় চাকরি পেয়েছে।“

ভারত ভাগের সময় ভারতীয় সিভিল সার্ভিস এবং ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের যে ৯৫ জন মুসলিম কর্মকর্তা পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তাদের মাত্র দুইজন ছিলেন বাঙালি। এক-তৃতীয়াংশই ছিলেন পাঞ্জাবি। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে জেলা বা মহকুমা পর্যায় পর্যন্তও প্রধান প্রশাসকরা ছিলেন অবাঙ্গালি।এই ব্যবধান থেকেই গিয়েছিল।

একজন সচিব হতে বাঙালিদের ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। উনিশ'শ চৌষট্টি সালে দুইজন বাঙালি সচিব হয়েছিলেন, তাও একজনের পোস্টিং ছিল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সেক্রেটারিয়েটে, অন্যজনের পরিকল্পনা বিভাগে। সংস্থাপন, অর্থ, প্রতিরক্ষার মত জায়গায় বড় পদে বাঙালি অফিসারদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হতো।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি