সিনিয়র শিক্ষক
১৯ অক্টোবর, ২০২১ ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ
শেখ রাসেল , আমাদের শিশুদের অনূপ্রেরণা
রাসেলের জন্মের আগের
মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল,
রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড়ফুফু ও মেজোফুফু মা’র সাথে। একজন
ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায়
আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার
অপেক্ষায়। মেজ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা
আত্মহারা। কতক্ষণে দেখবো? ফুফু বললেন, তিনি
ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন
কালোচুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড়সড় হয়েছিল রাসেল।’ -- এ কথাগুলো রাসেলের অত্যন্ত
প্রিয় হাসু আপার।
শেখ রাসেলের নামকরণের
পেছনেও এক সুন্দর কাহিনী রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বরাবরই ছিলেন বিশ্বশান্তি ও
সহাবস্থানের পক্ষপাতী এবং যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। এই সূত্র তিনি বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী
দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয়
বার্ট্রান্ড রাসেল নোবেলবিজয়ী দার্শনিক কিংবা সমাজবিজ্ঞানীই ছিলেন না, ছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ
বিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের নেতাও। যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে
আবির্ভূত হয়েছিলেন বার্টান্ড রাসেল। সেই মহান ব্যক্তির ব্যক্তিত্বে অনুপ্রাণিত
হয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন রাসেল।
শেখ রাসেলের জন্মের ইতিহাস
বড়ই সুন্দর। ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখ। দেশ তখন ভরা হেমন্তের গন্ধে আকুল
হয়ে আছে। গ্রাম্য সভ্যতা ভিত্তিক আমাদের দেশের ঘরে ঘরে তখন নতুন ফসল তোলার আনন্দ।
এমনই আনন্দের দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসায় জন্ম গ্রহণ করলেন শেখ রাসেল।
তার জন্ম হয়েছিল বড় আপা শেখ হাসিনার ঘরে। সমগ্র বাড়ি জুড়ে সেদিন আনন্দের
জোয়ার। জন্মের কিছুক্ষন পর শেখ হাসিনা এসে ওড়না দিয়ে তার ভেজা মাথা পরিষ্কার
করে দেন। জন্মের সময় শেখ রাসেল চেহারায় ছিলেন স্বাস্থ্যবান। এ যেন শুধু
বঙ্গবন্ধুর পরিবারেরই আনন্দ নয়, সমগ্র জাতির আনন্দ।
অন্যদিকে তার নির্মম
মৃত্যুর কাহিনী বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের দেশের করুন ইতিহাসের কথা। সেই সমস্ত
নৃশংস ক্ষমতালোভী মানুষের কথা যারা কেবলমাত্র ক্ষমতার লোভে ১১ বছরের একটি ছোট্ট
শিশুকে অবধি রেহাই দেয়নি।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট
খন্দকার মোশতাক চক্র শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর
ও নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে শিশু রাসেলকেও হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুসহ
পরিবারের অন্য সদস্যদের বুলেটের আঘাতে একবারই হত্যা করেছে। কিন্তু শিশু রাসেলকে
বুলেটের আঘাতে হত্যা করার আগেই কয়েকবার হত্যা করেছে।
পৃথিবীতে যুগে যুগে
রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে,
কিন্তু এমন নির্মম, নিষ্ঠুর এবং পৈশাচিক
হত্যাকাণ্ড আর কোথাও ঘটেনি। মা, বাবা, দুই
ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার লাশের পাশ
দিয়ে হাঁটিয়ে নিতে-নিতে শিশু রাসেলকে প্রতিটি লাশের সামনে মানসিকভাবেও খুন করেছে।
একান্ত আপনজনের রক্তমাখা নীরব, নিথর দেহগুলোর পাশে নিয়ে গিয়ে
শিশু রাসেলকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল, জঘন্য কর্মকাণ্ডের
দৃশ্যগুলো দেখিয়ে তাকে ভেতর থেকেও হত্যা করে সর্বশেষে বুলেটের নির্মম আঘাতে
রাসেলের দেহ থেকে অবশিষ্ট প্রাণ ভোমরাটিকেও চিরতরের জন্য নীরব-নিস্তব্ধ করে দিয়েছে
বর্বর খুনিরা। আজ শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্মবার্ষিকী। বাঙালি জাতি ঘাতক মোশতাক চক্রকে
আজীবন ঘৃণাভরে স্মরণ করবে। শুভ জন্মদিন শেখ রাসেল।