Loading..

খবর-দার

২১ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৩৮ অপরাহ্ণ

গলে গলে খসে পড়ছে পৃথিবীর ছাদ

কারণ একটাই। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন। ফলে প্রতিদিনই চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে একের পর এক অশনি সংকেত। দিচ্ছে ভয়ংকর ভবিষ্যতের বার্তা। এবার খবর, পৃথিবীর ছাদ খ্যাত হিমালয় পর্বতাঞ্চলের হিমবাহগুলো (গ্লেসিয়ার) নজিরবিহীনভাবে গলে যাচ্ছে। এভাবে গলতে গলতে সহসাই খসে পড়ছে বরফের বিশাল চাঙড়া।

শুধু তাই নয়, এই হিমবাহগুলোর প্রত্যেকটিই গলে গিয়ে তৈরি করছে সুবিশাল হ্রদ। যার ফলে লাগোয়া এলাকাগুলোতে বিধ্বংসী বন্যার আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে। এমনকি এই বন্যা মহাপ্লাবনের রূপ নিয়ে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে ভাসিয়ে নিতে পারে।অ্যান্টার্কটিকা ও আর্কটিকের পর হিমালয়কেই বলা হয় পৃথিবীর ‘তৃতীয় মেরু’। এই পর্বতমালায় আছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বরফের স্তূপ। যার ওপর লক্ষ কোটি বছর ধরে ঘুমিয়ে রয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার বৃহদাকারের হিমবাহ। কিন্তু এই হিমবাহগুলো দ্রুতই গলে পাতলা হয়ে যাচ্ছে। জন্ম হচ্ছে নতুন নতুন বিশালাকার হ্রদ।

২০১৯ সালে প্রকাশিত নেপালভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনটাগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট’র (আইসিআইএমওডি) ‘দ্য হিন্দুকুশ হিমালয় অ্যাসেসমেন্ট’ শীর্ষক এক রিপোর্টে আরও ভয়ংকর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। টানা পাঁচ বছর ধরে এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিভিন্ন দেশের দুই শতাধিক বিজ্ঞানী। গবেষণাটি খতিয়ে দেখেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের আরও প্রায় ৩৫০ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী।রিপোর্ট মতে, হিমালয়ের হিমবাহগুলো এত দ্রুতহারে গলে যাচ্ছ যে, একুশ শতক তথা আর মাত্র ৮০ বছরের মধ্যেই তার এক-তৃতীয়াংশ বরফ পুরোপুরি গলে যাবে। আর বিশ্ব উষ্ণায়নের তাপমাত্রার বৃদ্ধি যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখা যায়, তা হলেও অর্ধেক বরফই গলে যাবে হিন্দুকুশ পর্বতমালার। উষ্ণায়নের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেই গলে যাবে দুই-তৃতীয়াংশ বরফ।

প্রশ্ন হচ্ছে, হিমবাহগুলো যদি গলেই যায়, এর ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্যালন পানি কোথায় যাবে? জবাবে রিপোর্ট বলছে, হৃদগুলো পূর্ণ হলেই পানি উপচিয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হবে। ফলে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেকংসহ এই অঞ্চলে প্রধান ১০টি নদীর অববাহিকাগুলো পুরোপুরি ভেসে যাবে। বিপন্ন হয়ে পড়বে ভারত, পাকিস্তান, চিন, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটানসহ আটটি দেশের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ। এরপর হিমবাহগুলোর বরফ শেষ হয়ে গিয়ে সেগুলো পাথর হয়ে যাবে। পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে হিমালয়ের বিভিন্ন উৎস থেকে বেরিয়ে আসা নদীগুলো।এমনটা ঘটার দৃষ্টান্ত ইতোমধ্যে আমাদের সামনে রয়েছে। ১৯৮৫ সালের আগস্টেই ঘটেছিল ভয়াবহ এমন ঘটনা। হিমালয়ের ল্যাংমোচ হিমবাহ গলে এক পর্যায়ে ডিগ লেকের ওপর ধসে পড়ে। ধসে পড়ার সময় এটা ১৩ থেকে ২০ ফুট ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছিল। আর যে পানি উপচিয়ে পড়েছিল তার পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি গ্যালন। যার ধাক্কায় ধ্বংস হয়েছিল ১৪টি ব্রিজ, ৩০টি বাড়ি ও একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র।

রিপোর্ট জানাচ্ছে, হিন্দুকুশ হিমালয়ে হিমবাহ থেকে জন্মানো হ্রদের সংখ্যা এখনো পর্যন্ত আট হাজার ৭৯০টি। তার মধ্যে বরফ দ্রুত গলে যাওয়ার ফলে ২০৩টি হ্রদই ভয়াল বন্যা সৃষ্টি করতে পারে। গাল্ফ নিউজ।