Loading..

খবর-দার

২৩ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৪৯ অপরাহ্ণ

বৃদ্ধ ও এতিম শিশুদের মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল সার্প শান্তি নিবাস

বগুড়ার সোনাতলায় অসহায় দরিদ্র বৃদ্ধ ও এতিম শিশুদের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করতে সার্প শান্তি নিবাস নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। উপজেলার বালুয়া ইউনিয়নের সমজাতাইড় গ্রামে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠান ৫০০ দরিদ্র নারী-পুরুষ ও এতিম শিশুদের আশ্রয় প্রদানের জন্য কাজ করছে। 

বগুড়া সোনাতলা উপজেলার বালুয়া ইউনিয়নের সমজাতাইড় গ্রামে অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ নাজিম উদ দৌলাহ্, মাহামুদ আখতার ও প্রভাষক মাহমুদুল হাসান রতনের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে বৃদ্ধ ও এতিমদের জন্য নিরাপদ আবাস ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। একই এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম মণ্ডল ২০১৪ সালের গরিব দুস্থদের সহায়তা ও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য তার পৈতৃক সম্পত্তি সার্প শান্তি নিবাসের নামে দান করে দেন। 

সার্প ফাউন্ডেশনের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান সার্প শান্তি নিবাস। এ প্রতিষ্ঠানে এখন ২০ জন দরিদ্র বৃদ্ধ ও এতিম শিশু আশ্রয় নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা ৫শ  করা হবে। 

ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। সেখানে গড়ে তোলা হবে অত্যাধুনিক আবাসন ভবন। বর্তমানে ওই নিরাপদ আবাসে ১৫টি কক্ষ রয়েছে। আবাসন কক্ষ ৮টি, স্বাস্থ্যসেবা কক্ষ, প্রসাধন কক্ষ, রান্না ঘর, ভোজন শালা, বিনোদন কক্ষ, পাঠদান কক্ষ, প্রশাসনিক কক্ষ, অজু ও গোসলখানা। প্রতিটি কক্ষে ২টি করে বেড, ২টি টেবিল, ২টি চেয়ার, ২টি জগ, ২টি গ্লাস, ২টি প্লেট, ২টি বাটি আছে। 

এ নিরাপদ আবাসে এলাকার দরিদ্র অসহায় বৃদ্ধ ও এতিমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। এসব দরিদ্র নারী-পুরুষ ও বালক-বালিকাদের দেখাশোনা ও তদারকি করার জন্য ৬ জন বেতনভুক্ত কর্মচারী রয়েছে। আবাসে আশ্রয় নেওয়া লোকজনদের প্রতিদিন সকালের নাস্তার জন্য দেওয়া হয় পাউরুটি ২ পিস, সঙ্গে থাকে বাটার-জেলি, কলা ১টি, ডিম সেদ্ধ ১টি। বেলা ১১টায় বিস্কুট ১ প্যাকেট, মুড়ি ১বাটি। দুপুরের খাবার সাদা ভাত, সবজি, ডাল ও ছোট মাছ। বিকালের নাস্তা কমলা ১টি, দুধ ১ গ্লাস। রাতের খাবার সাদা ভাত, সবজি, ভর্তা ও ডাল। তবে খাবারের তালিকা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে পরিবেশন করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট নিবাস সূত্রে জানা গেছে। 

বসবাসকারীদের প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নির্ধারিত চিকিৎসক দ্বারা নজর দারিতে রাখা হয়।

শান্তি নিবাসে বসবাসকারী সোনাতলা উপজেলার দক্ষিণ আটকরিয়া গ্রামের গোলেজা বেওয়া (৬৫) ও বালুয়াপাড়া এলাকার জমিলা বেওয়া (৬৩) জানান, এক সময় খাওয়া-পরা, চিকিৎসা ও থাকার জন্য চিন্তা করতে হতো। সন্তানাদি থাকলেও অভাব অনটনের কারণে তাদের দেখভাল করতো না। এখানে আসার পর এখন বাড়ির চেয়ে ভালোই আছি। প্রতিনিয়ত মানসম্মত খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। 

প্রতিষ্ঠাতা অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ নাজিম উদ দৌলাহ্ বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ৩ জনসহ আমাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করা হয়। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সার্প ফাউন্ডেশন আয়োজিত বৃদ্ধ ও এতিমদের নিরাপদ আবাস এবং পুর্নবাসন কেন্দ্র হিসেবে সার্প শান্তি নিবাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করায় যেসব সন্তানের অনিচ্ছা ও অসহায়ত্বের কারণে বৃদ্ধ পিতামাতাকে গোয়াল ঘরে কিংবা হাঁস, মুরগির ঘরে থাকতে হতো তারা এখন ভালোভাবে খেয়ে-পরে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। 

তিনি জানান, তারা ৫শ সদস্য ধারণ ক্ষমতাবিশিষ্ট শান্তি নিবাস কমপ্লেক্সের কাজ শুরু করবেন। 

সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, এমন কাজকে প্রথমে সাধুবাদ জানাই। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। মানুষ যখন বয়োবৃদ্ধ হয় তখন সে অসহায়ত্ব অনুভব করে। আর সেই সময় তারা ভালোভাবে খেয়ে-পরে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। এ সমস্ত বয়স্ক ও বয়োবৃদ্ধ মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই বগুড়ার সোনাতলায় হওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান বলেন, তার নির্বাচনী এলাকায় বৃদ্ধ ও এতিমদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ায় সার্প ফাউন্ডেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শান্তি নিবাসের প্রতিষ্ঠাকারীদের সাধুবাদ জানাই। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সহায়তা করতে পারলে তিনি আত্মতৃপ্তি পাবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।