Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

২৫ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:১৪ অপরাহ্ণ

আদর্শ ছাত্র হতে যা করতে হবে


মোহাম্মাদ আবু সাইদঃ আমরা যারা ছাত্র আছি মনে-প্রাণে অবশ্যই কামনা করি আমি একজন আদর্শ ছাত্র হবো। আমি হবো আমার অনুজ দের জন্য উদাহরণস্বরূপ। নিজেকে উত্তীর্ণ করতে চাই প্রকৃত ছাত্রের সংজ্ঞাপনে। তবে শুধু মনে মনে চাইলেই তো আর আদর্শ ছাত্রের সংজ্ঞায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। আদর্শ ছাত্র হতে হলে কিছু আদর্শিক গুণাবলীসম্পন্ন হতে হবে। নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে আদর্শ ছাত্রের যাবতীয় বৈশিস্ট্য সমূহ।


 শুধু দিন-রাত লেখা-পড়া করে গেলেই কিংবা সমস্ত পাঠ্যবইগুলোর শুরু থেকে শেষ অব্দি মুখস্থ করলেই আদর্শ ছাত্র হতে পারা যায় না । এর জন্য অতীব প্রয়োজন একটি আদর্শ রুটিনের। কতিপয় আদর্শিক নিয়ম-কানুন মেনে চলার । কারণ বিদ্যমান প্রতিটি কাজ, প্রতিটি ক্ষেত্র কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এতে করেই আসে উক্ত কাজ, ক্ষেত্রর সফলতা। তাই প্রতিটি ছাত্রকে আদর্শ ছাত্র হতে হলে, ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর, সফল ও গৌরবোজ্বল করে গড়ে তুলতে হলে এবং পরিক্ষা’য় ভালো ফলাফল অর্জনে তাদের মেনে চলতে হবে কতিপয় আদর্শিক নিয়ম-কানুন । তাদের সময় কে পরিচালনা করতে হবে একটি আদর্শ রুটিনমাফিক


 নিম্নে আদর্শ ছাত্র হতে যা করতে হবে তা তুলে ধরা হলঃ


 ভবিষ্যতমুখী চূড়ান্ত লক্ষ্য স্থির করণ:


 একজন ছাত্রকে শিক্ষাজীবনের শুরুতেই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য কি হবে তা ঠিক করে নিতে হবে । আমি কি হতে চাই? একজন শিক্ষাবিদ, একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক, সুবিজ্ঞ আলেমে দ্বীন, ইতিহাসবেত্তা, অর্থনীতিবীদ, সমাজসেবী, বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার না অন্য কিছু। কারন লক্ষ্যহীনভাবে এগুতে থাকলে কোন কাজে সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। সাময়িক যা সফলতা আসবে তাও কার্যকরী হবে না।


 নিজের উপর আস্থাবান হওয়া বা দৃঢ় ইচ্ছা ও বিশ্বাস লালন করা:


 বিশ্বাস ও দৃঢ় ইচ্ছা হচ্ছে আত্মার খোরাক পথ চলনের শক্তি। বিশ্বাস হতে চিন্তা এবং চিন্তা হতে কার্যের উৎপত্তি। প্রত্যেক এর কাজের ফলাফল তার বিশ্বাসের অনুরূপ হয়ে থাকে। তাই হচ্ছেনা, আমার দ্বারা হবেনা ধরণের সমস্ত মনোভাব ঝেড়ে ফেলে আমি পারবোই এমন একটি চালিকাশক্তি অন্তরে সঞ্চার করে সামনে এগুতে থাকো। আমি শিক্ষাজীবন শেষে আমার লক্ষ অর্জন করবোই এমন একটি তেজ জমাও। আর দৈনন্দিন কার কাজ করে যাও। তোমার লক্ষে তুমি পৌছাবেই।

 নিজেকে যাচাই করন:


 ভবিষ্যতের লক্ষ নির্ধারণে সঠিক সাইড বেছে নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন নিজেকে গভীর ভাবে যাচাই করার। নিজেকে নিয়ে চুড়ান্তভাবে ভেবে দেখার। যাতে লক্ষ নির্ধারণে ভুল লক্ষ কে বেছে না নেই। একজন ছাত্র যখন নিজেকে ভালোভাবে যাচাই করত আপন জীবনের ভবিষ্যতমুখী একটি চুড়ান্ত লক্ষ্য স্থির করে নিবে এবং নিজের উপর পূর্ণ আস্থাবান হয়ে সফলতা অর্জনের প্রতি দৃড় বিশ্বাসি পড়ালেখার’র পথে যাত্রা আরম্ভ করবে এবং কাঙ্খিত ফলাফল অর্জনে সচেষ্ট হবে। পরীক্ষায় তাক লাগানো ভালো রেজাল্ট পেতে চাইবে তাকে কিছু পদক্ষেপ মেনে সামনে এগুতে হবে।


 প্রথমত দৈনন্দিন জীবন যাপনের একটি রুটিন ম্যাপ একে নিন:


 কেননা সফলতা লাভে সঠিক প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন সঠিক সময় নির্দেশনা। তাই রুটিনমাফিক দিন অতিবাহন অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত মোটা দাগের বিষয়াদির জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন। উদাহরণত কটায় ঘুমাবেন, কটায় ঘুম থেকে উঠবেন, নাস্তা ও খাবার গ্রহণ, খেলাধুলা এবং শারীরিক ব্যায়াম এর জন্য সময় নির্ধারণ করা। দৈনিক পাচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য নামাজের সময় গুলো সর্ব ধরণের ব্যস্ততা মুক্ত রাখা। এবং নামাজ ও উপাসনার প্রতি যত্নবান হওয়া। এতে আপনার কাজে গতিময়তা আসবে।


 পড়ালেখার জন্য নির্ধারিত সময় কে প্রতিটি বিষয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান ভাগ করে নিয়ে একটি টাইম রুটিন তৈরি করে ফেলুন। এতে করে সকল বিষয় যেমন সমান গুরুত্ব দেয়া যায় তেমনি পড়াটাও সহজতর হয়। এবং সব বিষয়ে’র দূর্বলতা কেটে যাবে। যাবতীয় সব বিষয়ের মৌলিক জ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারনা রাখা। এতে প্রাসঙ্গিক বিষয় সমুহ আয়ত্ত করতে সুবিধে হবে।


 অতিরিক্ত রাত জাগা পরিহার করুন:


 আমরা সাধারণত মোবাইল আড্ডাবাজি ইত্যাদির পিছে পড়ে প্রায়শই রাত জেগে কাটাই। এতে আমাদের মেধাশক্তি’র উপর প্রচন্ড প্রভাব ফেলবে। ফলে সহজে পড়া বুজে আসবেনা। তখন নৈরাশ হয়ে অনেকেই পড়ালেখা ছেড়ে দিতে চাইবে। অথচ সে ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে পারেনা তার এই দূর্দশার মূল কারন সে নিজেই। মূলত মানবের মস্তিষ্কে স্মৃতি তৈরীর কাজটি ঘুমের মধ্যে হয়। নিয়মিত রাতের ঘুম তাই অত্যন্ত জরুরী। লরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত রাত জাগা মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন করে। নর্থ টেক্সাসের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত রাত জাগা চোখের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রে রাত্রে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে সকালে দ্রুত উঠে পড়া’র চেষ্টা করা।

নিয়মিত ক্লাশে উপস্থিতি:


 একজন ছাত্রে’র আদর্শ ছাত্র হওয়ার সর্বপ্রধান গুন হতে হবে ক্লাশে অনুপস্থিত না থাকা। নিয়মিত সব ক্লাশে অংশ নেয়া। মনাযোগ দিয়ে লেকচার শুনা এবং লেকচারের গুরত্বপুর্ন পয়েন্টগুলো খাতায় নোট করে নেয়া। পরবর্তী তে বাসায় ফিরে ক্লাশের পড়া তৈরি করা রিভাইস দেয়া রিহার্সাল করা। এবং সকল বিষয়ের জন্য আলাদা নোট খাতা রাখা। নোট করে পড়া ভাল ফলাফলের জন্য বেশ কার্যকর। ভাল নোট পাঠে মনোযোগ বাড়ায় এবং পাঠকে আকর্ষণীয় করে তুলে। তাছাড়া নোট করলে পরীক্ষার আগেই একবার বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এতে প্রস্তুতি নিতে বেশ সুবিধা হয়। পড়াগুলোকে সুবিন্যস্ত করে সাজিয়ে পড়া শুরু করা পড়া শুরু করতে হবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে। পড়াগুলোকে নিজের মতো করে সাজাতে হবে। মুখস্থ করা বিষয় সমুহ না দেখে লিখার অভ্যাস গড়ে তোলা। এতে লংটাইম পড়া মুখস্থ থাকে। অংকের ক্ষেত্রে একবার অংক বুঝে’ই পরিতৃপ্তি তে না ভুগা বরং বার কয়েক অংক রিহার্সাল করা।


 সবশেষে সব থেকে প্রয়োজনীয় পয়েন্ট:


 সব সময় শিক্ষক দের কে সম্মান দিয়ে চলা শিক্ষক দের সাথে কোনরুপ বেয়াদবি না করা। উনাদের অসম্মানিত না করা। সমালোচনা থেকে বিরত থাকা।


 বিঃদ্রঃ একটানা অনেকক্ষণ পড়ার চেয়ে বিরতি দিয়ে পড়া অনেক বেশি কার্যকর। এক নাগাড়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পড়লে পড়ায় মনযোগ ধরে রাখা যায় না। এ কারনে টানা অনেকক্ষণ না পড়ে প্রতি ২০-২৫ মিনিট পর পড়ার মাঝে অন্তত ৫ মিনিট বিরতি দিন। বিরতি নেওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পড়া খুব সহজেই আয়ত্ত করা যায়।


 পরিশিষ্টঃ কোন ছাত্র যদি উপরোল্লিখিত পয়েন্ট সমূহ আয়ত্ত করত নিজের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করে এবং নিজের পড়ালেখার জীবন কে একটি সুন্দর আদর্শ টাইম রুটিনের আওতায় নিয়ে আসে তাহলে বাজি ধরে বলা যায় উক্ত ছাত্র তার লক্ষে পৌছাবেই। সে নিজেকে আবিস্কার করতে পারবে একজন আদর্শ ছাত্র রুপে। আর একজন আদর্শ ছাত্রের রেজাল্ট কি কখনো খারাব হয়। তাই বলাই যায় তার রেজাল্ট হবে সবার থেকে অন্যতম রেজাল্ট।