Loading..

প্রকাশনা

২৯ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৩১ অপরাহ্ণ

গুণগত শিক্ষা (Quality Education)ঃ ধারনা, পদক্ষেপ ও প্রতিবন্ধকতা সমুহঃ

গুণগত শিক্ষা (Quality Education)

 

বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল কল্যাণমুখী উন্নত রাষ্ট্রে পরিণিত করতে হলে জনশক্তি উন্নয়ন অপরিহার্য। এজন্য শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন করা আবশ্যক। এ লক্ষ্যে শিক্ষার পরিমাণগত দিকের চেয়ে গুণগত মানের দিকের অধিক নজর দিতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন উপাদানের গুণগত পরিবর্তন সাধন করতে হবে। গুনগত শিক্ষা একুশ শতকের একটি অন্যতম চাওয়া।

গুণগত শিক্ষা এমন একটি পরিকল্পিত ব্যবস্থা যার উদ্দেশ্য হলো সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা যেন শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্ণ সম্ভাবনার বিকাশ ঘটিয়ে সমাজে জন্য একজন পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল নাগরিক হয়ে ওঠে। তাই শিক্ষায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন প্রতিটি শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং স্কুলের লব্ধ জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের জন্য উৎপাদনশীল নাগরিক হয়ে উঠতে পারে।

 

গুণগত শিক্ষার ধারণা

গুণগত শিক্ষা এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের যোগান থাকবে। প্রতিটি শিশু একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করবে, উন্নত জীবনের চর্চা করবে। শিখন পরিবেশ হবে ভীতিহীন। শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে শিখন-শেখানো কাজে অংশগ্রহণ করবে ও উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ও বৃহত্তর সমাজের কাজের সম্পৃক্ত হতে শিখবে।যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকের সংস্পর্শে শিক্ষার্থীরা আত্মবিকাশের সুযোগ পাবে। তারা কর্মজীবনের জন্য তৈরি হবে এবং বৈশ্বিক পরিবেশে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

গুণগত শিক্ষা হবে একীভূত যেখানে সকল ধরনের শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীর সাথে অতি মেধাবী, ক্ষীণ বুদ্ধি, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী, পথশিশু, শ্রমজীবী শিশু, দলিত জনগোষ্ঠি যেমন পড়তে পারবে তেমনি বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতির মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিখন পরিচালিত হবে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে টেকসই রূপদানের লক্ষ্যে ২০১৬-২০৩০ মেয়াদে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণাপত্রের ৪ নং লক্ষ্যে গুণগত শিক্ষার বিশেষ জোর দিয়ে বলা হয়েছে,

To ensure inclusive and equitable quality education and promote lifelong learning.



গুণগত শিক্ষার উপাদান

গুণগত শিক্ষা একটি প্রক্রিয়া যেখানে রয়েছে বিভিন্ন রকমের উপাদান। এই উপাদানগুলোর গুণগত মানের ওপর গুণগত শিক্ষা ক্রিয়া নির্ভরশীল। কোনো একটি মানসম্মত উপাদান সরবরাহ করলেই সমগ্র প্রক্রিয়া গুণগত হয়ে যাবে এমন নয়। এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি উপাদান যথাসম্ভব মানসম্মত হতে হবে। এ উপাদানগুলো হলো:

 

# মানসম্মত শিক্ষকের পর্যাপ্ততা;

# যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন;

# মানসম্মত শিখন সামগ্রী ব্যবহার;

# শিখন-শেখানো পদ্ধতির ও কৌশলের কার্যকর ব্যবহার;

# নিরাপদ ও সহযোগিতামূলক শিখন পরিবেশ;

# উপযুক্ত মূল্যায়ন ব্যবস্থা;

# প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তার ও কর্মচারীর সুসম্পর্ক;

# শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ;

# শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সুবিধা;

 

শিক্ষার গুণগত মানন্নোয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি

 

বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এসকল উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার পরিমাণগত ও গুণগত মান বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। এমন কিছু উদ্যোগ বা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে--

প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি- PEDP-১ (১৯৯৭)

দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-PEDP-২ (২০০৫)

মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প- SEDP (১৯৯০)

ফিমেল সেকেন্ডারি স্কুল অ্যাসিসট্যান্স প্রজেক্ট- FSSAP (১৯৯৪)

প্রোগ্রাম ফর মোটিভেট, ট্রেইন অ্যান্ড এমপ্লয় ফিমেল টিচার ইন রুরাল সেকেন্ডারি স্কুল-PROMOTE (১৯৯৭)

মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন প্রকল্প-SESDP (১৯৯৮)

ফিমেল স্কুল অ্যাসিসট্যান্স প্রজেক্ট- : FSSAP দ্বিতীয় পর্যায় (২০০১)

টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রজেক্ট- TQI-SEP (২০০৫)

সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড একসেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট-SEQAEP (২০০৮)

টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রজেক্ট :

TQI-SEP দ্বিতীয় পর্যায় (২০১২)

হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট- HEQEP

 

শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে প্রতিবন্ধকতা

একুশ শতকের বিশ্বে গুণগত শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তবে এই শিক্ষা প্রদানে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো-

# মানসম্মত শিক্ষকের অভাব;

# শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা;

# শিক্ষার সাথে কর্মের দুরত্ব;

# ত্রুটিপূর্ণ মূল্যায়ন ব্যবস্থা;

# শিক্ষা বাজেটের অপ্রতুলতা;

# শিক্ষাঙ্গনে অপরাজনীতির বিস্তার;

# প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং সেন্টার

# অপর্যাপ্ত অবকাঠামো।



এসকল প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে গুণগত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তখন শিক্ষা হবে গুণগত ও টেকসই।

শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত প্রধান উদ্যোগসমূহ-

# মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন;

# মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্করণ;

# বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি পূর্ণঃপ্রতিষ্ঠা।

# শ্রেণিকক্ষে পাঠদান মনিটরিং এর জন্য কমিটি গঠন;

# শিক্ষক প্রশিক্ষণ জোরদারকরণ;

# মাদরাসা এবং কারিগরিসহ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বছরের ১ম দিনে বই বিতরণ;

# মাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম আধুনিকায়ন;

# বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা এবং কল্যাণ ফান্ড প্রদান;

# ২৯টি বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন;

# মাদরাসাসহ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০০০০ কম্পিউটার বিতরণ;

# ২৩ হাজার ৩৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন;

# মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান;

# মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান;

# শিক্ষকদের সৃজনশীল পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান।

 

 

তথ্য সংগ্রহ সম্পাদনায়

মোঃ ময়দুল ইসলাম

শিক্ষক শিক্ষক প্রশিক্ষক

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি