Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

০১ নভেম্বর, ২০২১ ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

শিক্ষা, স্বশিক্ষা ও সুশিক্ষা


মোহাম্মাদ আবু সাইদঃ একদা মানুষ যাযাবর জীবন যাপন করত। সমাজ পরিবর্তনে, সময়ের অগ্রগমনে মানুষ একদিন দুটো শিলার ঘর্ষণে আগুন উৎপন্ন করল, এল হাতিয়ার ও অস্ত্রশস্ত্র। তারপর মানুষ একদিন তার সৃজনশীল মনের বিকাশ ঘটিয়ে কৃষি আবিষ্কার করল। সঙ্গে সঙ্গে গোটা আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় সূচনা হলো এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের, যাকে সভ্যতার বুকে প্রথম জাগরণ বলে আখ্যা দেওয়া চলে।


বিশেষত পরিবারের সৃষ্টি, সমাজ গঠন ও সর্বোপরি সমাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য কিছু প্রথা, রীতি-নীতি বা পন্থার প্রবর্তন করা হয়। এর মধ্যে যে বিষয়টির ওপর অতীতকাল থেকেই সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে, তার নাম হলো শিক্ষা। ‘মানুষ গঠন’ করাই হলো যার মূল কথা।

 বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হার্বার্ট স্পেনসার শিক্ষার গূঢ়ার্থ বিশ্লেষণে মন্তব্য করেছেন, ‘শিক্ষা একটি শিশুকে প্রকৃত জীবন যাপনের উপযোগী করে তুলতে পারে। শিক্ষা একটি শিশুকে প্রশিক্ষণ দেবে কীভাবে সে শরীর প্রতিপালন করবে, কীভাবে মনের উৎকর্ষ সাধন করবে, কীভাবে দৈনন্দিন বিবিধ সমস্যাকে যুক্তি ও বুদ্ধির সহায়তায় সমাধান করবে, কীভাবে পরিবারের তথা পরিজনের ভরণ-পোষণ বা রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং সর্বোপরি কীভাবে নিজেকে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।' অর্থাৎ শিক্ষা হলো জীবন-দর্শন। জীবনকে সুপথে, সুকাজে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিশল্যকরণী। মানুষ যেদিন থেকে সভ্যতার স্পর্শ লাভ করে, সেদিন থেকে তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষালাভ করতে শুরু করে। বিখ্যাত ইউরোপীয় শিক্ষাবিদ ও লেখক জর্জ বার্নার্ড শ তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘Life is a bigger school’। জীবন আমাদের যা শিখিয়েছে, তাই হলো শিক্ষার প্রধান উপাদান। জীবনের মধ্য দিয়ে আত্মিক ত্রুটি শোধনের দ্বারা, সুস্থ-সবল ও সজাগ মানব গঠন শিক্ষার কারখানার মৌলিক উৎপাদন। জন ডিউয়ের মতে, ‘শিক্ষার কাজ হলো, একটি অসহায় ক্ষুদ্র প্রাণীকে একজন সুখী ও নৈতিকভাবে সবল ও উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করা।’

 সমাজ পরিবর্তনশীল। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার আঙ্গিক যেভাবে ব্যাপ্তি লাভ করেছে, ঠিক সেভাবে এ বিষয়টির পরিধি ও ব্যাপকতা প্রসারিত হচ্ছে। এর পেছনে যে সত্যটি নিহিত রয়েছে, তা হলো সভ্যতার আলো বিকিরণে মানুষ অজ্ঞানতার তমসা ভেদ করে যে নতুন উপলব্ধির অনুভূতি লাভ করেছিল, তা স্থান করে নিতে থাকে শিক্ষার সিলেবাসে। অজানাকে জানার তাগিদ মানুষকে এ কাজে খুব বেশি উৎসাহী করে তুলেছিল। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, শিক্ষাই জীবন, জীবনই শিক্ষা। শিক্ষাকে বলা চলে জীবনব্যাপী চলতে থাকা এক বিকাশমুখী প্রক্রিয়া। ভুল সংশোধন করে সত্যের উদ্‌ঘাটন করাই শিক্ষার মূল উপজীব্য।

 ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘To err is human’। একটি শিশু যখন ভুল করে, তখন আমরা তাকে মারতে যাই, না হলে চড়া গলায় বকাঝকা করি। পড়াশোনার প্রসঙ্গ হলে তো আর কথাই নেই। তখন মায়ের মা-গিরি, আর বাপের বাপ-গিরির যে অন্তহীন বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তার প্রতিফলন শিশুর মননে প্রগাঢ় ছাপ ফেলে চলে যায়। ধীরে ধীরে তার মনের কোরকে বিষাক্ত পতঙ্গের মতো জন্ম নেয় এক ধরনের ফোবিয়া বা ভীতি। বিশেষত শিক্ষার্থীরা এ ভীতির শিকার হয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখেই আমি উপরিউক্ত বিষয়টির অবতারণা করতে চাইছি।

 আমার বাসা সিলেট শাহজালাল উপশহরে। পাশের বাসার একটি মেয়ে দীর্ঘ তিন বছর ধরে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। এমনিতে চোখের দেখায় কারও এটি বোঝার সাধ্য নেই যে, সে একজন মনোরোগী। চাল-চলনে তার সমবয়সী আর পাঁচটি ছেলেমেয়ের চেয়ে সে কোনো অংশে কম নয়। সে বর্তমানে ‘Nimhans’ সাইক্রিয়া টিক বিভাগের এক জটিল রোগী। বিশেষত পরীক্ষা এলে বা স্কুল ও স্যারের বাড়িতে পড়াশোনার অত্যধিক চাপে পড়লে, তার মধ্যে অদ্ভুত সব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। গোটা শরীর কাঁপতে থাকে, অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়, চোখের কোণ বেয়ে অনবরত গড়িয়ে পড়তে থাকে পানি। বিশেষ যে উপসর্গ তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়, তা হলো, সে তখন একদম বাচ্চা মেয়ের মতো ব্যবহার করতে শুরু করে। সামনে যাকে পায় তার কোলে ঝাঁপিয়ে উঠতে চায়, ঘরের অতিথিকে কোনো খাবার দিলে সে খাবারে ভাগ বসাতে চায় এবং এর কিছুক্ষণ পর সে মূর্ছিত হয়ে পড়ে। রোগটি যখন তাকে প্রথম আক্রান্ত করে, তখন তার মা-বাবা তার শিশুসুলভ মনোবৃত্তিতে বিরক্ত হয়ে তাকে বেশ গালাগাল দিয়েছিলেন। কোনো কোনো সময় অতিশয় রাগান্বিত হয়ে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বসেছেন। আসলে তাঁরা বুঝতেই পারেননি তার মনোজগতের জটিল রাসায়নিক সমীকরণ। এক সন্ধ্যাবেলা রোগে আক্রান্ত হলে মেয়েটিকে তাঁরা এক অদ্ভুত মহিমায় দেখেন। তাঁরা দেখেন, মেয়েটি দাঁড়িয়ে থাকলেও শারীরিক ও মানসিক দুভাবেই ঘুমিয়ে রয়েছে।

 শেক্‌সপিয়ারের ম্যাকবেথ নাটকের মূল নারী চরিত্র লেডি ম্যাকবেথের মধ্যে আমরা এমন ‘Somnambulism’ দেখতে পাই। পরীক্ষার ফল ঘোষিত হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকে মেয়েটির মধ্যে মনোযোগের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে, যার মধ্যে উপরিউক্ত ‘Somnambulism’ রয়েছে। সবার ক্ষেত্রে যে এ বিচিত্র রোগের লক্ষণ দেখা দেবে, তা নয়। সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে বিচার করলে হয়তো দেখা যাবে, এটি লাখের মধ্যে একজনের হয়েছে বা বেশি হলে পাঁচজনের। প্রশ্নটি এখানে নয়, প্রশ্নটি শিক্ষাদানের পদ্ধতির ওপর। ‘তোতা কাহিনি’র পাখিটাকে যেভাবে শিক্ষিত করে তুলতে চাওয়া হয়েছে, সেভাবে শিক্ষিত করার যে অপচেষ্টা আজকালকার অধিকাংশ অভিভাবকের মধ্যে রয়েছে, তা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। তাদের মূল্যায়নটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবমূল্যায়নে পর্যবসিত হচ্ছে।

 শিক্ষাদানের পদ্ধতি সর্বদা সহজ, সরল ও প্রকৃতিনির্ভর হওয়া প্রয়োজন। প্রাচীন মুনিঋষিদের তপোবনের শিক্ষা যা প্রতিবিম্বিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাভ্যাসে, সদর্থকভাবে তা প্রকৃতিনির্ভর ছিল। তাই তাদের শিক্ষালাভ জীবনপথের চড়াই-উতরাইয়ে সতত সহায়ক ছিল। মাদার মন্টেসরি বা ফ্রোয়েবেলও সহজ, সরল পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুমনে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত করতে চেয়েছিলেন। ভীতির চোটে যে শিক্ষা আসে, তা যেনতেন প্রকারে গলাধঃকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সহজ, সরল পাঠে যে জ্ঞান আসে, তা স্রোতস্বিনী পানির কণার মতো নিষ্কলঙ্ক; তাতে কোনো দূষণ নেই। বিজ্ঞজনেরা শিক্ষার সংজ্ঞা নিরূপণ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘যে শিক্ষা একটি শিশুর শরীর, মন ও আত্মার সমন্বিত বিকাশ নিশ্চিত করে, সে শিক্ষাই আসল শিক্ষা। শুধু সাক্ষরতা শিক্ষা নয়।’ দার্শনিক সক্রেটিস শিক্ষাকে আরও সরলভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাঁর মতে, ‘শিক্ষা একজন ব্যক্তির মধ্যে নিহিত থাকা যুক্তিসিদ্ধ ভাবধারাগুলোর যথার্থ বিকাশ নিশ্চিত করে।’

 আমরা অভিভাবক, সমাজপতি, মা-বাবারা একদম শিশু অবস্থায় শিক্ষার্থীদের কোমল মনে এক অশুভ পরিবেশের চিত্র আঁকতে শুরু করি।এর প্রভাবে একটি নিষ্পাপ শিশু যেকোনো উপায়ে প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। এতে অর্থনৈতিক অবস্থান একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এর ফলস্বরূপ শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ ‘মানুষ গড়ার’ কাজ দারুণভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাদের অন্তর থেকে এ প্রক্রিয়ায় ন্যায়-নিষ্ঠা, দয়া-মমতা, প্রেম-ভালোবাসা, ক্ষমা-সহিষ্ণুতা, সত্য-অহিংসা, পরোপকার, উদারতা প্রভৃতি সদগুণের মহাপ্রয়াণ ঘটে। আর এর ফলেই আজকের সমাজ এত অস্থির, এত অশান্ত।

 শিশুমনের সুকোমল মনোবৃত্তিকে ইতিবাচকভাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য সদগুরুর প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক। গুরু-শিষ্যের মণিকাঞ্চনযোগে শিক্ষাদানে সাফল্য আসে। অন্যদিকে, আমাদের সমাজ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় না। সার্টিফিকেটের শিক্ষা ব্যক্তির প্রয়োজনে যতটুকু আসে, ততটুকু সমাজের প্রয়োজনে আসে না। যে শিক্ষা শিক্ষার্থীর জন্মার্জিত সংস্কারের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না, সেটি কী ধরনের শিক্ষা? এক কথায় ‘Education is the manifestation of perfection already in men’। শিক্ষা হচ্ছে মানুষের অন্তর্নিহিত সদগুণের সঠিক প্রকাশ এবং এ ক্ষেত্রে সদগুরুর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 আজকের যুগে গুরু চয়নের যে প্রক্রিয়া, তা সত্যিই মর্মন্তুদ। আজকাল অধিকাংশ নিয়োগের মধ্যে রাজনৈতিক কুশীলবদের প্রভাব চোখে পড়ে। এতে পুষ্টির কাজ করে অর্থ। অর্থাৎ আজকাল নিয়োগ বিচার করে হয় না, নিয়োগ কেনা-বেচা হয়। আমি রাজনৈতিক নেতাদের খাটো না করে বলছি, যত দিন শিক্ষা ক্ষেত্রের মতো সংবেদনশীল সেবা ক্ষেত্রকে রাজনৈতিক নেতাদের ঘোড়া বেচা-কেনা করার বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হবে, তত দিন পর্যন্ত সদগুরু লাভ অসম্ভব।

 এ ক্ষেত্রে মা-বাবারও একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কারণ, একটি নিষ্পাপ শিশুর পক্ষে এসব রাশভারী তত্ত্ব বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। তাই মা-বাবাকে প্রকৃতপক্ষে শিশুদের প্রধান, তথা প্রথম শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে হয়। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য মানুষ গড়ার কাজে তাঁরাই প্রধান স্থপতি। মা-বাবা এ সমাজের সৃষ্টি। তাঁরা নিজেরা ইঁদুর দৌড়ে অংশগ্রহণ করা প্রতিযোগী। যতক্ষণ না তাঁরা এ মোহময় বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসবেন, তত দিন ভালো প্রজন্ম উপহার দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই অভিভাবকদের আজ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে যে, তাঁরা কী ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চান ছেলেমেয়েকে। তাঁদের মানুষ চাই নাকি বিশ্বায়িত দুনিয়ায় আরেকটি ‘রোবট’ চাই, যার শুধু একটি কাজ হবে ‘অর্থোপার্জন’, তা তাঁদেরই ভেবে দেখতে হবে। আজকাল কম্পিউটার নেই এমন বিদ্যালয়ে মা-বাবারা তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করতে চান না। প্রাইভেট টিউটর প্রাচীন মূল্যবোধ নিয়ে কথা বললে অভিভাবকেরা ক্ষেপে যান। বৃথা অর্থব্যয় হচ্ছে ধরে নিয়ে বেচারা শিক্ষকের চাকরি খেয়ে ফেলেন।

 আজ আমরা এমন একটি সময়ে উপনীত হয়েছি, যখন পরিবর্তনের ঝোড়ো হাওয়া গোটা আর্থসামাজিক পরিকাঠামোয়। পরিবর্তনের গতি অতি দ্রুত আমাদের শিক্ষা সম্পর্কিত সনাতন ভাবধারা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা ক্রমশ নিজেদের সমর্পিত করে ফেলছি প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে। সব চালক তো আর সমান নয়। তাই দ্রুতগতির কাছে যারা হেরে যায়, তারা হারিয়ে যায় কালের অতল তলে। কেউ কেউ থেমে যায় প্রবৃদ্ধ বটবৃক্ষের মতো গতিময় রাস্তার ওধারে। আর যে সামান্য কয়েকজন গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পৌঁছতে পারে নিজ নিজ গন্তব্যে, তারা অর্থকরী দিক দিয়ে সাফল্য লাভ করে, বাড়ি-গাড়ি নিয়ে বসবাস করতে পারে বিলাসবহুল অঞ্চলে। সাফল্যবানদের কতজন ‘মানুষ’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে? এটি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সম্মুখে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

 কিছুদিন আগে আমির খানের ‘তারে জামিন পর’ নামে একটি সিনেমা দেখেছিলাম। যেখানে ঈশান আওয়াস্তি নামে এক আত্মভোলা শিশু প্রতিদিন তার মা-বাবা ও সহপাঠীদের দ্বারা মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হতে অবশেষে প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার পর করিমুল্লাহ নামক শিক্ষকের জাদু স্পর্শে আশার দ্যুতি দেখতে পায়। শিক্ষার উপযুক্ত রসদ এ বিশ্ব সংসারে ভরপুর রয়েছে। কিন্তু সে প্রসাদ বিতরণের উপযুক্ত মা-বাবা বা শিক্ষকের অভাব রয়েছে, যার কাছে আমরা আমাদের যথাসর্বস্ব সমর্পণ করে দিয়ে বলতে পারি—‘শরণাগত কিংকর ভীত মনে দয়া কর দীন জনে’। অন্যথায় আমাদের পদস্খলন অবশ্যম্ভাবী। দিন দিন আরও বিষায়িত হতে থাকবে শিক্ষার পরিমণ্ডল। একজন সদগুরু তা মা-বাবা বা শিক্ষক যিনিই হোন, তাঁর সান্নিধ্যে এলে তবে আমাদের মোক্ষলাভ সম্ভব। আমাদের কেউ কেউ মনে করেন এ বিশ্ব সংসার উপভোগের রঙ্গমঞ্চ। এটা বাস্তব নয়। এ উপভোগ-স্পৃহা পরিত্যাগ করে আমাদের প্রকৃত অর্থে সত্যানুসন্ধানী হতে হবে। প্রাকৃতিক কশাঘাত তখন আমাদের জর্জরিত করতে পারবে না, যখন আমরা প্রকৃত শিক্ষার শিক্ষার্থী হব।