প্রধান শিক্ষক
০২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৭:৪৮ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রায় সারা বছরই ঢেঁড়স চাষ করা সম্ভব, মোছাঃ মার্জুয়ারা বেগম, প্রধান শিক্ষক, দক্ষিণ বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডিমলা, নীলফামারী।
মাটি ও জলবায়ুঃ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি ঢেঁড়শ চাষের জন্য উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এটেঁল মাটিতেও এর চাষ করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রায় সারা বছরই ঢেঁড়স চাষ করা সম্ভব। তবে উঞ্চ জলবায়ু তথা শুষ্ক এবং আর্দ্র অবস্থায় ভাল জন্মে।
জাতঃ
বারি ঢেঁড়স-১ঃ ঢেঁড়স এটি উচ্চ ফলনশীল জাত সারাবছর চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুল ফোটার ৫-৬ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে ১ দিন পর পর ফল সংগ্রহ করতে হয়। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ২৫-৩০ টি।ঢেঁড়সের হলুদ শিরা রোগ প্রতিরোধী এবং উচ্চ ফলনশীল জাত বারি ঢেঁড়স-১।
বারি ঢেঁড়স-২ঃ এটিও উচ্চ ফলনশীল জাত তবে ঢেঁড়স আগাম জাত। বীজ বপনের ৪০-৪২ দিনের মধ্যে ফুল আসে। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৩২-৩৮ টি।
এছাড়াও কাবুলি ডোয়ার্ফ, ডোয়ার্ফ প্রলিফিক, ঝুম আর্লি, শ্রাবনী, পুশা মলমলি, পুশা সাওয়ানী, পেন্টা গ্রীন, শাউনি,জাপানী প্যাসিফিক গ্রীন ইত্যাদি ঢেঁড়সের জাতের চাষ হচ্ছে।
কাবুলী ডোয়ার্ফ, জাপানী প্যাসিফিক গ্রীন এই দুটো জাত সারা বৎসর ব্যাপী চাষ করা যায়।
বীজ বপনের সময়ঃ
রবিঃ মধ্য আগষ্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বরসারা বছরই ঢেঁড়স চাষ করা যায়। তবে ফাল্গুন ,চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
বীজের পরিমাণঃ
ঢেঁড়স শতক প্রতি ২০ গ্রাম এবং হেক্টর প্রতি ৪- ৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
জমি তৈরিঃ
জমি ৫-৬ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে।মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হয়।ঢেলা ভেঙ্গে এবং আগাছা পরিষ্কার করে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
বীজ বপনঃ
বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়। সারি করে বীজ বপণ করা হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪৫ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩০ সে.মি. রাখতে হয়। অর্থাৎ লাইনে ৩০ সেমি. দূরে দূরে ২ টি করে বীজ বুনতে হয়।
মাটির ২-৩ সেমি গভীরে বুনতে হয়। ঢেঁড়স জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে।
শীতকালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর ৭ দিন পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি চারা গর্ত থেকে তুলে ফেলতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ (এক শতকে)
সার সারের পরিমাণ গোবর ৭৫ কেজি
সরিষার খৈল ১.৭৫ কেজি
ইউরিয়া ২৩০ গ্রাম
টিএসপি ৩৫০ গ্রাম
এমও পি ২৩০ গ্রাম
জিংক সালফেট ৪০ গ্রাম
বোরন ৪০ গ্রাম
সার প্রয়োগের নিয়মঃ
জমি তৈরি করার সময় ইউরিয়া সার বাদে বাকি সব সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানের ১০-১৫ দিন পর জমিতে ঢেঁড়শ বীজ বপন করতে হয়।
ইউরিয়া সার সমান দু‘কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তিতে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং ২ য় কিস্তিতে দিতে হবে চারা গজানোর ৪০-৫০ দিন পর।
অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ
১)গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধির সময় নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে
২)মাটির উপরিভাগ মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে।
৩)পানি সেচ দেওয়ার পর জমিতে ‘জো’ আসলে কোঁদাল দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হয়।এতে মাটির ভিতরে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে এবং মাটি অনেক দিন রস ধরে রাখতে পারে।
৪)আগাম মৌসুমে ঢেঁড়স চাষ করলে পানি সেচ দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে।
৫)মাটির প্রকারভেদ অনুসারে ১০-১২ দিন পর পর সেচ দেওয়া দরকার।
৬)বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য ২৫-৩০ সেমি. উঁচু করে বেড তৈরি করে নিতে হবে।
৭)আগাম ফসলের জন্য বীজ ঘন করে বপন করতে হবে।
সবজির জন্য ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বোনার ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে এবং ফুল ফোটার ৩-৫ দিনের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়। জাত ভেদে ফল ৮-১০ সেমি. লম্বা হলেই সংগ্রহ করতে হয়।এ সময় ঢেঁড়সের ফল নরম থাকে এবং আঙ্গুল দ্বারা সহজেই ভাঙ্গা যায়।
সবজি হিসেবে ঢেঁড়সের গুণাগুণ ঠিক রাখতে হলে ধারালো ছুরির সাহায্যে গাছ থেকে ঢেঁড়স কাটা উচিত।জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ৬০ – ৭০ কেজি।
বীজের জন্য ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বুনার প্রায় ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে ঢেঁড়সগুলো শুকিয়ে লম্বালম্বিভাবে ফাটতে শুরু করে। ঢেঁড়স শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারালো ছুরি দিয়ে পাকা ফলগুলো সংগ্রহ করে ও রোদে ভালো করে শুকিয়ে মাড়াই করার পর বীজ ঠান্ডা করে প্লাষ্টিক ব্যাগে ভরে রাখতে হবে। বীজ হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ৪০৪-৬০৭ গ্রাম/ শতক।