Loading..

খবর-দার

০৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:১৫ অপরাহ্ণ

ওমিক্রন রোধে প্রস্তুতি সমন্বয়হীন, শিথিল স্বাস্থ্যবিধি

করোনা সংক্রমণের নতুন ধরন ওমিক্রন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। দ্রুত সংক্রমণশীল এ ধরনটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন’ ঘোষণা করেছে, করোনার সুনামি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অথচ এই সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার যে প্রস্তুতি নিয়েছে, তা অনেকাংশেই সমন্বয়হীন। একই সঙ্গে জনগণের মধ্যে আগের তুলনায় স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতাও অনেক কম।

ওমিক্রন ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১৯ নভেম্বরে ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়। এর অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে ৪ জানুয়ারি নতুন করে একই নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কীভাবে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যায়, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ওই দিন। নির্দেশনা না মানলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে বাস্তবে এই নির্দেশনার প্রভাব চোখে পড়েনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ সারা বিশ্বে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি চার দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে। তবে এখনও সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। এ কমিটি সব প্রকাশ্য মেলা বন্ধের সুপারিশ করলেও এখনও বন্ধ হয়নি বাণিজ্য মেলা। নির্বাচনের প্রচারণায় নেতাকর্মীরা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। এমন পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়বে বলে শঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন প্রতিরোধে অন্যান্য দেশ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার পাশাপাশি টিকাদানে গতি বাড়ানোর ওপর জোর দিলেও এসব ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ওমিক্রন রোগী শনাক্ত করা, জিনোম সিকোয়েন্সিং ও আক্রান্তদের কোয়ারেন্টিন করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাড়তি উদ্যোগ নেই।

সংশ্লিষ্টদের এমন ঢিলেঢালা মনোভাবে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। দেশের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে টিকাদানে গতি বৃদ্ধিসহ শিগগিরই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

দেশে প্রতিদিন করোনা রোগীর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কিন্তু আক্রান্তরা সাধারণ করোনা, নাকি ওমিক্রন, নাকি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ভুগছেন, সে ব্যাপারে জানা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগের ঢিলেঢালা নির্দেশনা ও পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার অভিযোগ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার পর ডেল্টার ভয়াবহতা পার না হতেই এবার ওমিক্রন চোখ রাঙাচ্ছে। সাধারণ মানুষ পরীক্ষা করে শুধু করোনার উপস্থিতি জানতে পারলেও তারা ওমিক্রন নাকি, ডেল্টায় আক্রান্ত, তা বুঝতে পারছেন না। আবার স্বাস্থ্য বিভাগও স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। ফলে ধরন দুটিতে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যাও জানা যাচ্ছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা কীভাবে হবে, চিকিৎসা পদ্ধতি কী, তা নির্ধারণে সরকারের পদক্ষেপ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা বিশ্বে গত শুক্রবার এক দিনে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী, সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো কিছুই স্পষ্ট করছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ওমিক্রন শনাক্ত করতে ব্যাপক ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা পরিধি বাড়ানো হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৫০ কোটি ডোজ টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ওমিক্রনের উপস্থিতি আছে। দিন যত যাবে, এটি বাড়বে। ওমিক্রন রোগী শনাক্তে জিনোম সিকোয়েন্সিং শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আইইডিসিআর; আইসিডিডিআর,বি; আইদেশি (ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস) সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও এটা করছে। এখন পর্যন্ত ২০ জনের সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। রোগীদের এপিডেমোলজিক্যাল লিংক দেখে সিকোয়েন্সিং করা হয়। তবে এ মুহূর্তে জিনোম বিশ্লেষণের চেয়ে ধরনটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে, এটি প্রমাণিত। গুচ্ছভাবে এটি ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে সন্দেহ নেই। সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হলেই ধরে নিতে হবে ওমিক্রন বাড়ছে। তবে ওমিক্রনের জন্য আলাদা কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই। সাধারণ করোনার ক্ষেত্রে যে কাজ, ওমিক্রনেও তাই হবে। সুতরাং কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন সময় যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন করা জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওমিক্রনের এখনও গণসংক্রমণ শুরু না হলেও তা প্রতিদিন বাড়ছে। বলা হচ্ছে ২০ জনের ধরা পড়েছে। কিন্তু নমুনা পরীক্ষার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকে। পরীক্ষাটা মূলত ভাইরোলজিক্যাল ও এপিডেমোলজিক্যাল বিষয়। এতে আমরা সতর্ক থাকতে পারি যে দেশে কতটুকু পর্যায়ে ছড়াল বা নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট এলো কি না।

‘এখন যদি জিনোম সিকোয়েন্স বাড়ানো হয়, তাহলে ভালো হয়। পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়। এর কারণে ওমিক্রন, ডেল্টা বা করোনা, যেটি বলা হোক তা বাড়ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওক্রিমন প্রতিরোধে বা শনাক্তে জিনোম সিকুয়েন্সিং করার দায়িত্ব বেশ কয়েকটি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। তবে এই পরিসংখ্যান অবশ্যই আইইডিসিআর ভালো বলতে পারবে।

‘রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা হাসপাতালে বেড বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের চিকিৎসকদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যে ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি ও টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে বেশি জোর দিচ্ছি। চলতি মাসে আমাদের চার কোটি টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’