Loading..

খবর-দার

১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০৩:৩০ অপরাহ্ণ

@@@ স্টিফেন হকিংয়ের শেষ সাক্ষাত্কার

দুটি নিউট্রন তারার সংঘর্ষ শনাক্ত করার এই ঘটনা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

স্টিফেন হকিং: এ ঘটনাটা আসলেই এক মাইলফলক। বিদ্যুত্চুম্বকীয় তরঙ্গসহ মহাকর্ষ তরঙ্গের উৎসের খোঁজ এই প্রথম পাওয়া গেল। এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যায়, নিউট্রন তারাগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি পুরোপুরি মিশে গেলে তা থেকে দ্রুতগতিতে ক্ষুদ্র গামা রশ্মি নির্গত হয়। মহাবিশ্বের বিভিন্ন দূরত্ব পরিমাপের জন্য এটি একটি নতুন পথ খুলে দিয়েছে। অত্যন্ত ভারী ও ঘন পদার্থের আচরণ কেমন হয়, তা-ও আমরা এখান থেকে বুঝতে পারি।


এই বিদ্যুত্চুম্বকীয় তরঙ্গ থেকে আমরা কী জানতে পারি?

বিদ্যুত্চুম্বকীয় বিকিরণ মহাকাশে এর উত্সবস্তুর একেবারে নির্দিষ্ট অবস্থান জানিয়ে দেয়। এ ঘটনা লাল সরণ বা রেড শিফট (গ্যালাক্সির দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিকিরিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে এবং লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কাছাকাছি যায়) সম্পর্কেও অনেক কিছু জানায়। মহাকর্ষ তরঙ্গও আমাদের সেই উত্সবস্তুটার দূরত্ব জানায়। এসব পরিমাপকে একত্র করেই মহাবিশ্বের বিভিন্ন দূরত্ব (কসমোলজির) পরিমাপের নতুন পথটি বেরিয়ে আসে। মহাজাগতিক বিভিন্ন দূরত্ব পরিমাপ করার জন্য এটা যেন সিঁড়ির প্রথম ধাপ। একটি নিউট্রন তারার ভেতরে যেসব পদার্থ রয়েছে, সেগুলোর ঘনত্ব অনেক বেশি। আমরা পরীক্ষাগারে এত বেশি ঘনত্বের বস্তু তৈরি করতে পারি না। দুটি নিউট্রন তারা পরস্পরের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে যাওয়ার ফলে যে বিদ্যুত্চুম্বকীয় তরঙ্গ বের হয়ে আসে, তা থেকেই এই অত্যধিক ঘনত্বের পদার্থের আচরণ কেমন, তা জানা যাবে।

কৃষ্ণগহ্বর (ব্ল্যাকহোল) কীভাবে তৈরি হয়, সে সম্পর্কে এ ঘটনা কোন ধারণা দেবে?

দুটি নিউট্রন তারা মিশে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হতে পারে—এ কথা তাত্ত্বিকভাবে আমাদের জানা ছিল। কিন্তু এবারের ঘটনাটিই প্রথম পর্যবেক্ষণ। দুটি নিউট্রন তারার মিলনে সম্ভবত একটি ঘূর্ণায়মান, অত্যন্ত ভারী নিউট্রন তারা তৈরি হয়। এরপর সেটা চুপসে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি করে। কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হওয়ার আরও যেসব প্রক্রিয়া আছে, সেগুলোর থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। যেমনটি হয় সুপারনোভায় বা যখন সাধারণ তারার থেকে কোনো পদার্থ একটি নিউট্রন তারার সঙ্গে মিশে যায়। এ ঘটনার ফলে পাওয়া তথ্য সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তারপর সুপার কম্পিউটারে তাত্ত্বিক নকশা তৈরি করে কৃষ্ণগহ্বর তৈরির তত্ত্ব ও গামা রশ্মি বিচ্ছুরণের ব্যাপারে নতুন ধারণা পাওয়ার দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

মহাকর্ষ তরঙ্গের পরিমাপ কি আমাদের আরও বড় কোনো ধারণা দেয়? যেমন কীভাবে স্থান-কাল (স্পেস-টাইম) ও মহাকর্ষ কাজ করে এবং সেটা এই মহাবিশ্বকে জানার জন্য যেসব ধারণা আছে, সেগুলো বদলে দেবে?

হ্যাঁ, সে ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। মহাজাগতিক দূরত্ব পরিমাপের একটি নতুন পন্থা তৈরি হয়েছে। এটা মহাজাগতিক বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নতুন তথ্য দেবে। অথবা এটি চমকপ্রদ কোনো তথ্যও প্রকাশ করতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে মহাকর্ষক্ষেত্র গতিশীল ও অত্যন্ত শক্তিশালী, সেসব ক্ষেত্রে মহাকর্ষ তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ আমাদের সাধারণ আপেক্ষিকতাকে পরীক্ষা করার সুযোগ করে দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, সাধারণ আপেক্ষিকতাকে কিছুটা পরিবর্তন করা দরকার, যাতে ডার্ক ম্যাটার বা ডার্ক এনার্জিকে এড়ানো যায়। মহাকর্ষ তরঙ্গ এক নতুন পথের সন্ধান দেয়। এটা থেকে সাধারণ আপেক্ষিকতায় কিছুটা পরিবর্তন আনা যায় কি না, তার দৃষ্টান্ত পাওয়া যেতে পারে। মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে এ ঘটনা। এমন চমত্কার তথ্য ভবিষ্যতে আরও পাওয়া যেতে পারে, যেটা এখন সচরাচর পাওয়া যায় না। মহাকর্ষীয় তরঙ্গের শব্দ শুনে আমরা যেন মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম, এখনো চোখ কচলে যাচ্ছি।

মহাবিশ্বে স্বর্ণ কীভাবে তৈরি হলো, সেটি ব্যাখ্যা করার জন্য যে স্বল্প কিছু পদ্ধতি আছে, নিউট্রন তারাদের এই সংঘর্ষ কি সেগুলোর একটি? অথবা সম্ভবত এটিই একমাত্র পথ? এটা কি ব্যাখ্যা করতে পারে কেন স্বর্ণ পৃথিবীতে এত দুর্লভ?

হ্যাঁ, নিউট্রন তারাগুলোর সংঘর্ষ মহাবিশ্বে স্বর্ণ সৃষ্টির একটি পথ। সুপারনোভায় দ্রুতগতির নিউট্রন সংযোজনের মাধ্যমেও এটি তৈরি হতে পারে। কেবল পৃথিবীতেই নয়, স্বর্ণ মহাবিশ্বের সব জায়গাতেই দুর্লভ। এটি দুর্লভ, কারণ লোহায় নিউক্লিয়ার বন্ধনশক্তি সর্বাধিক। ফলে নিউক্লিয়ার ফিউশনের সাহায্যে এর চেয়ে ভারী বস্তু তৈরি করা কঠিন। এ ছাড়া স্বর্ণের মতো একটি স্থিতিশীল ভারী নিউক্লিয়াস তৈরির জন্য নিউক্লিয়ার বন্ধনশক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়া দরকার, যেন তা বিদ্যুত্চুম্বকীয় বিকর্ষণ বলকে হারিয়ে দিতে পারে।

( তথ্য সংগৃহীত)