সহকারী শিক্ষক
০২ মার্চ, ২০২২ ০৭:১৯ পূর্বাহ্ণ
শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
শিক্ষক শ্রেণীকক্ষের প্রাণ। তাকে ঘিরেই পঠন-পাঠন প্রক্রিয়া আবর্তিত হয়। তাই তার দায়িত্ব-কর্তব্যও অনেক। এসব দায়িত্বের কিছু ব্যক্তিগত, কিছু প্রতিষ্ঠান-প্রশাসন কেন্দ্রিক, কিছু শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক এবং কিছু সহকর্মী কেন্দ্রিক। শিক্ষকের মৌলিক কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য এখানে তুলে ধরা হ’ল-
ব্যক্তিগত দায়িত্ব-কর্তব্য :
১. শিক্ষক সময়নিষ্ঠ হবেন। সময় মত প্রতিষ্ঠানে হাযির হবেন এবং ছুটির পর প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করবেন।
২. পেশাগত উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ নিবেন এবং গৃহীত প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে পাঠদান করবেন।
৩. শিক্ষা সংক্রান্ত আধুনিক কলাকৌশল যেমন আই.সি.টি. ইত্যাদিতে পারদর্শিতা অর্জন করবেন।
৪. মাল্টিমিডিয়া ক্লাস গ্রহণে দক্ষতা অর্জন করবেন।
৫. পাঠটিকা প্রণয়ন করবেন এবং তদনুসারে ক্লাস নিবেন।
৬. সকল শিক্ষাগত ও অভিজ্ঞতার সনদপত্র যত্ন সহকারে ফাইলে সংরক্ষণ করবেন।
৭. নিজের চাকুরির নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র, চাকুরিবহি, বদলি অর্ডারপত্র, অব্যাহতিপত্র, বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানের যোগদানপত্র, প্রশিক্ষণ সনদ, স্কেল পরিবর্তনের কাগজ, এককথায় চাকুরির ধারাবাহিক সকল রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ করবেন।
৮. তিনি হবেন একজন পড়ুয়া। সব রকম জ্ঞান অর্জনে তিনি সদা সচেষ্ট থাকবেন।
৯. পারিবারিক, সামাজিক ও দ্বীনী ক্ষেত্রে সকলের সাথে মিলেমিশে কাজ করবেন।
১০. মানুষ ও অন্যান্য জীবের অধিকার ক্ষুণন করবেন না।
১১. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য হবে তার জীবনের ব্রত।
প্রতিষ্ঠান-প্রশাসন কেন্দ্রিক দায়িত্ব-কর্তব্য :
১. কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করবেন।
২. কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থল ত্যাগ করবেন না এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবেন না।
৩. নৈমিত্তিক ছুটিসহ যে কোন ছুটির জন্য কর্তৃপক্ষকে আগেভাগে জানাবেন এবং ছুটি মঞ্জুর করে নিবেন।
৪. চাকুরি সংক্রান্ত নিজের প্রয়োজন ও সুবিধা-অসুবিধার কথা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানাবেন।
৫. প্রতিষ্ঠান প্রধান, ব্যবস্থাপনা পরিষদ ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন। কোন কারণে মনোমালিন্য হ’লে তা মিটিয়ে ফেলতে চেষ্টা করবেন।
৬. বেতন বিল সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করবেন এবং সময় মত তা গ্রহণ করবেন।
৭. হাযিরা বহি থাকলে তাতে যথাসময়ে স্বাক্ষর করবেন এবং ডিজিটাল হাযিরা থাকলে তাতে টিপ দিবেন।
৮. প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যখন যে নির্দেশ দিবেন তখন সেই নির্দেশ পালন করবেন।
৯. মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা মেনে চলবেন।
১০. অফিস থেকে তার কাছে কোন কাগজপত্র পূরণ করে দিতে বললে তা যথারীতি পূরণ করে দিবেন।
১১. প্রতিষ্ঠানের অফিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন এবং প্রতিষ্ঠানে এসে প্রধানের সঙ্গে দেখা করবেন; যাওয়ার সময় বলে যাবেন।
১২. সময় মত এ.সি.আর. পূরণ করে অফিসে জমা দিবেন। (সরকারী চাকুরীজীবিদের ক্ষেত্রে)
শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক দায়িত্ব-কর্তব্য :
১. ক্লাস রুটিন অনুযায়ী সময় মত শ্রেণীকক্ষে হাযির হবেন এবং নির্ধারিত সময়ে শ্রেণীর কার্যক্রম শেষ করবেন।
২. শিক্ষার্থীদের নাম হাযিরা করবেন।
৩. শিক্ষার্থীদের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ডায়েরিতে লিখে নিবেন।
৪. পাঠ দানের বিষয় নিজ ডায়রীতে লিখে রাখবেন। যেন পাঠদান করতে গিয়ে কোথায় পড়া তা শিক্ষার্থীদের কাছে জিজ্ঞেস করতে না হয় এবং পূর্বপ্রস্ত্ততি ছাড়াই পাঠদান করা না হয়।
৫. বিএড/এমএড প্রশিক্ষণ থেকে লব্ধ জ্ঞান অনুযায়ী শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক পাঠদান করবেন। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ গ্রহণে সবসময় সক্রিয় থাকে।
৬. শিখনফল অর্জিত হচ্ছে কি-না তা মূল্যায়ন করবেন।
৭. তার ক্লাসগ্রহণ যেন আনন্দঘন হয়,যান্ত্রিক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
৮. পাঠ আয়ত্ব করার কৌশল শিখাবেন।
৯. শিক্ষার্থীদের কারও প্রতি বিদ্বেষ এবং কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবেন না।
১০. পরীক্ষার উত্তরপত্র যথাসময়ে মূল্যায়ন করে পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করবেন।
১১. মূল্যায়নকালে তিনি নৈর্ব্যক্তিক থাকবেন। কাউকে কম এবং কাউকে বেশী নম্বর দিবেন না।
১২. পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার কৌশল শিখাবেন।
১৩. শিক্ষার্থীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবেন, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবেন না।
১৪. শিক্ষার্থীর অসদাচরণ কিংবা পড়া না পারার জন্য দৈহিক ও মানসিক শাস্তি দিবেন না। ভালোবেসে সংশোধনের চেষ্টা করবেন।
১৫. শিক্ষার্থীদের জ্ঞানস্পৃহা বাড়াতে তাকে প্রশ্ন করতে দিবেন এবং তিনি উত্তর দিতে চেষ্টা করবেন।
১৬. তাদের বিভিন্ন ভাষা শিখতে অভিধান ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করবেন।
১৭. শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গীর উন্নয়নে সচেষ্ট থাকবেন।
১৮. শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টি করবেন।
১৯. পঠন-পাঠনে তাদের যথাযথ পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করবেন।
২০. তাদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করবেন।
২১. শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক বিকাশে কাজ করবেন।
২২. তাদের দ্বীন-ধর্ম পালন ও চরিত্র গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।
২৩. তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করবেন।
২৪. তাদের সুখ-দুঃখ, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যাদি জানা ও সমাধানের চেষ্টা করবেন।২৫. ছোটদের স্নেহ, বড়দের সম্মান ও সমবয়সীদের সঙ্গে করণীয় আচরণ শিখাবেন।
২৬. শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, দ্বীনী ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সচেতন করবেন।
২৭. শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য একজন অনুকরণীয় আদর্শ মানুষ হবেন।
সহকর্মী কেন্দ্রিক দায়িত্ব-কর্তব্য :
১. সিনিয়রদের সম্মান, জুনিয়রদের স্নেহ এবং সমবয়সীদের ভালোবাসা জানাবেন।
২. তাদের সঙ্গে ভ্রাতৃসুলভ আচরণ করবেন।
৩. শিক্ষণ-শিখন বিষয়ে পারদর্শিতা ও দক্ষতা অর্জনে তাদের পরামর্শ নিবেন।
৪. প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখবেন।
৫. সকলের সুখে-দুখে সহমর্মিতা জানাবেন এবং যথাসাধ্য সহযোগিতা করবেন।
৬. প্রতিষ্ঠানের সকলে মিলে এক পরিবার হয়ে থাকবেন।
শিক্ষক তার এসব দায়িত্ব যথাসাধ্য পালন করলে ইনশাআল্লাহ তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সমাজের মাঝে একজন গ্রহণযোগ্য ও প্রিয়ভাজন মানুষ হিসাবে বরিত হবেন। তার দ্বারা শিক্ষার্থীবৃন্দ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশানুরূপ উপকৃত হবে