Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

১২ মে, ২০২২ ০৭:৪৫ অপরাহ্ণ

উদ্ভাবনী গল্প শিক্ষকের আড্ডা

উদ্ভাবনী গল্প

শিক্ষকের আড্ডায়

সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি

  • আমি শামছুন নাহার
  • সহকারী শিক্ষক বলারদিয়ার সপ্রাবি, 
  • সরিষাবাড়ি, জামালপুর।
  • ICT4E District Teacher Ambassador, Jamalpur.

আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি ২০১০ সালে।যোগদানের পর থেকেই চিন্তা করতাম,আমি যদি বাংলাদেশের প্রতিটি বিদ্যালয় ঘুরে ঘুরে দেখতে পেতাম, কার পাঠদান কৌশল কেমন?

তাহলে হয়তো অনেক কিছুই শিখতে পেতাম। এই চিন্তা আমার মাথায় সবসময় ঘুরপাক খেত। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে যখন সারা বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

তার কিছুদিন পর যখন অনলাইন ক্লাস শুরু হয় তখন আমিও শিক্ষার্থীদের মতো ক্লাস গুলো খুব মনোযোগ সহকারে দেখতে থাকি এতে ঘরে বসেই বাংলাদেশের অনেক গুণী শিক্ষকদের পাঠদান কৌশল দেখার সুযোগ হয় এবং আমার ইচ্ছা কিছুটা হলেও পূরণ হয়। সবার ক্লাস দেখে দেখে আমার মনে ও খুব ইচ্ছে জাগে।

তাই আমিও করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে সরিষাবাড়ী অনলাইন প্রাইমারি স্কুল নামে ফেইজবুক পেইজ ওপেন করে নিজে প্রথম ক্লাস নিয়েছি এবং পরে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জনপ্রিয় ৫৫ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করেছি বিদ্যালয় খোলার পূর্ব পর্যন্ত। “সরিষাবাড়ি অনলাইন প্রাইমারি স্কুল” যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১০ আগস্ট ২০২০। অনলাইন স্কুলটি শিক্ষক বাতায়নে নিবন্ধিত হয় ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০।

করোনার সময় যখন বিভিন্ন পেইজে শুধু অনলাইনে কাজ করা শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হতো তখন আমার মাথায় আসে অনলাইনে এবং অফলাইনে কাজ করা শিক্ষকদের নিয়ে যদি একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান করা হয় তাহলে কেমন হয়? যেখানে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তের শিক্ষক অনলাইনে যুক্ত হয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবেন। এই ভাবনা নিয়ে ফেইসবুকে একটি পোস্ট করি এবং অনেকের সাড়া পাই।

তারপর থেকে অনলাইন লাইভ ক্লাসের পাশা-পাশি প্রতি মঙ্গলবারে শিক্ষকদের পাঠদান কৌশলগুলো শেয়ার করে এবং মনের কথা বলার জন্য শিক্ষকের আড্ডা অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আসছি।

এই আড্ডায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তেরশিক্ষক। পেইজের ফাউন্ডার এডমিন হিসেবে পেইজটি পরিচালনা ও সার্বিক দ্বায়িত্ব পালন করে আসছি আমি শামছুন নাহার। গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে  মার্চ ২০২২ পর্যন্ত ৩৫ টি পর্ব হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করে আসছেন বাংলাদেশের অত্যন্ত মেধাবী এবং জনপ্রিয় দুইজন শিক্ষক জনাব আয়েশা সিদ্দিকা লক্ষীপুর জেলার রামগতি থেকে এবং জনাব কাজী রুনা  মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থেকে। মাঝে মাঝে জনাব শিরিন সুলতানা এবং জনাব মনিকা কর্মকারও সঞ্চালনা করে থাকেন। ৩5 টি পর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১5০ জন শিক্ষক অতিথি হয়ে এসেছিলেন।সারপ্রাইজ গেস্ট হিসেবে এসেছিলেন সারিষাবাড়ি উপজেলার নির্বাহী অফিসার জনাব শিহাব উদ্দিন আহমদ ,  a2i  কর্মকর্তা মোহাম্মদ কবির হোসেন স্যার গাজীপুরের ডিপিইও মোফাজ্জল হোসেন স্যার, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভিন ম্যাম। আরও এসেছিলেন বেশ কয়েকজন জাতীয় পদক প্রাপ্ত ইউআরসি ইন্সট্রাকটর জোহরা খাতুন ম্যাম, সাইফুল ইসলাম স্যার, ড. আব্দুর রহিম স্যার ও বিপুল মজুমদার  স্যার। এছাড়াও দেশের বাইরে থেকেও অতিথি হয়ে এসেছিলেন দুইজন। একজন ইন্ডিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইয়োগেশ সানোয়ান স্যার  এবংঅন্যজন রুমানিয়ার একজন প্রাথমিক শিক্ষক করিনা সুজদা ম্যাম । এছাড়াও আমাদের শিক্ষক আড্ডায় সারপ্রাইজ গেস্ট হয়ে এসেছিলেন প্রিয় সুপার টিচারগণের মধ্যে জনাব শিরীন বকুল, জনাব এস. এম রাব্বি, জনাব রুপা মল্লিক, জনাব মল্লিকা সাহা, জনাব সুবর্নারায় লিপা , জনাব অসীম কুমার সেন, জনাব রেহানা সুলতানা মনি , জনাব শিমুল সুলতানা সহ আরও অনেকে।

মূলত শিক্ষকের আড্ডা একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার এবং শিক্ষা ও বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান।

আমাদের শ্লোগান- “পাঠদান কৌশল শেয়ার করি, নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করি”। এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষকগণ এসে তাদের নিজেদের পাঠদান কৌশলের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে পারেন।পাশাপাশি নিজেদের ভালোলাগা মন্দলাগা গুলোও শেয়ার করতে পারেন।

আর এই অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারবো বলে আমি মনে করি।

সারা বাংলাদেশের শিক্ষক বাতায়নে যারা সেরা কনটেন্ট নির্মাতা হয়েছেন, সেরা অনলাইন পারফর্মার হয়েছেন, সেরা উদ্ভাবক এবং যারা সেরা নেতৃত্বে রয়েছেন।তাদেরকে অতিথি করে এনে তাদের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ পেয়ে থাকি এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ।

বাতায়নে কাজ করার মাধ্যমে নিজেদেরকে আরও কিভাবে সমৃদ্ধ করা যায় এবং কিভাবে পাঠদান সফল করা যায় সেটাও আমরা জানতে পারি এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ।

সর্বোপরি অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় এটাই আমাদের শিক্ষকের আড্ডার মূল লক্ষ্য।

আমি চাই শিক্ষকের আড্ডা অনুষ্ঠানটি আজীবন চলতে থাকুক।

আমার পেইজে আমার সাথে যারা কাজ করেন তাদের সবসময় বলি একদিন আমি হয়তো থাকবোনা  কিন্তু আপনারা থাকবেন আর আপনারা এই আয়োজন কখনো বন্ধ করবেন না এটা চালিয়ে যাবেন এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইডিয়া শেয়ারের মাধ্যমে আড্ডাকে সমৃদ্ধ করবেন।

শিক্ষক থাকবে যতদিন এই অভিজ্ঞতা শেয়ার মূলক আড্ডা থাকবে ততদিন ।

আমাদের আড্ডায় ইতিমধ্যে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকগণ অংশগ্রহণ করেছেন তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি ।যা আমাদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করছি।

বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তের শিক্ষকদের জন্য এটি একটি উন্মুক্ত প্লাটফরম। আশা করি সকলে সাথেই থাকবেন এবং আমাদের আড্ডাকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবেন।

     ধন্যবাদ সবাইকে