Loading..

ম্যাগাজিন

১৩ মে, ২০২২ ০৩:৩৪ অপরাহ্ণ

নেত্রকোনা, কেন্দুয়া উপজেলায় মুজাফরপুর সাগর দিঘীর ইতিকথা।

নেত্রকোনা জেলায় কেন্দুয়া উপজেলার  মোজাফরপুর ঐতিহাসিক সাগর দিঘীর ইতিকথা

নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ায় ১৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে কেন্দুয়া উপজেলা গঠিত।  এই উপজেলায় ১৪নং ইউনিয়ন মোজাফরপুর ইউনিয়ন। গ্রামের নাম অনুসারে এই ইউনিয়ন নামকরন করা হয়েছিল। মোজাফরপুর গ্রামে  ঐতিহ্যপূর্ণ সদাগর বাড়ির সামনে বিশাল একটি দিঘী রয়েছে। যাকে সাগরদিঘী বলা হয়। ঐ দিঘীর ইতিহাস জানার জন্য ঐ গ্রামের প্রবিন ও সদাগর পরিবারের উত্তরসুরিদের সাথে কথা বলে যে তথ্য সংগ্রহ করা গেছে তা বিশ্লেষনে দেখা যায় যে মোজাফরপুর গ্রামের সদাগরবাড়ির মফিজদ্দিন সদাগর ১৯১৭ সালে তার বাড়ির সামনে ৭ একর ভূমির উপর বিশাল এই দিঘী খনন করেন। এলাকার মধ্য সবচেয়ে বড় দিঘী হওয়ায় মানুষ এটিকে ‘সাগরদিঘী’ বলে আখ্যায়িত করেন। ফলে সবার কাছে এটি সাগর দিঘী নামেই পরিচত।

লোকেশানঃ- কেন্দুয়া – তারাইল সড়কে কেন্দুয়ার প্রায় শেষ সীমানায় একটি মোড় রয়েছে। ওখান থেকে পিচ রাস্তায় ঐতিহ্যবাহী জালিয়ার হাওরে যাওয়ার পথে অল্প কিছু এগুলেই দৃষ্টি  কারবে এই সাগরদিঘীর সবুজাভ বিশাল জলরাশি ও নান্দনিক পুকুরের দৃশ্য।

পুকুরের মালিকানা ইতিহাসঃ- মোজাফরপুর গ্রামের মোঃ মাফিজউদ্দিন, মোঃ মফিজউদ্দিন, মোঃ নওফিজউদ্দিন , মোঃ হাফিজ উদ্দিন, মোঃ আফিজউদ্দিন, নামে ৫ ভাই ছিলেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে চিটাগাং থেকে জাহাজে করে মারমা মিয়ানমার সহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে ব্যবসা বানিজ্য করতেন।তখনকার সময়ে চট্টগ্রামের সুনাধন্য ব্যবসায়িদের সদাগর বলাহতো। সেই থেকে মাফিজউদ্দিনের নামের পাশে সদাগর উপাধী যুক্ত হয়। আর তখন থেকেই এই বাড়িটি সদাগর বাড়ি নামে পরিচিতি পায়। তারা মাঝেমধ্যে বাড়িতে এসে এলাকার প্রচুর ভূ-সম্পত্তি ক্রয় করতেন । তাছারা বাড়িতে আসলে এলাকার গরিব অসহায় মানুষদের মধ্য আর্থিক সহায়তা দান করতেন।

পারিবারিক পরিচিতিঃ- সদাগর বাড়ির নতুন প্রজন্মের এস এম মতিউর রহমান, এস এম বাবু নাইম, এস এম নুরুলহুদা, মামুন সদাগর,এস এম সায়েম, রফিকুল ফেরদৌস জানান ঐ ঐতিহ্যবাহী সদাগর বাড়ির প্রান পুরুষ হলেন মাফিজউদ্দিন সদাগর, - ( জন্ম ১৮৭৫ – ১৯২২) ,  মোঃ মফিজউদ্দিন- ( জন্ম -১৮৭৭ – ১৯৪২), মোঃ নওফিজউদ্দিন- ( জন্ম- ১৮৮০- ১৯৬৬) , মোঃ হাফিজ উদ্দিন- ( জন্ম ১৮৮৮- ১৯৩৮) , মোঃ আফিজউদ্দিন- (জন্ম- ১৮৯০- ১৯৪৯)।

পুকুরটি খননের উদ্দেশ্যঃ- মাফিজ উদ্দিন সদাগর ও তার ভাইয়েরা প্রায় সময়েই একত্রে বাড়িতে আসত তখন তারা বাড়ির সৌন্দয্য এবং এলাকার এলাকার লোকজনের ফাল্গুন-চৈত্র মাসের পানির অভাব অনটন ও কষ্টের কথা চিন্তা করে বাড়ির সামনে বিস্তর ভূমিতে বড় একটি দিঘী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই ভাবনা থেকে ১৯১৭ সালে ৭একর ভূমিতে এই পুকুর খনন করেন।

দিঘীটির নাম করনঃ- দিঘীটি এলাকার মধ্য সবচেয়ে বড় দিঘী। পুকুকেরের পাড়গুলোও  অনেক বড় এবং দেখতে অনেক সুন্দর । পুকুরটি সদাগর বাড়ির হওয়ায় এলাকার মানুষ  একে সদাগর দিঘী বলে ডাকত। ।   দিঘীটি দূর থেকে দেখে অনেক বড় দেখা যাওয়ার ফলে এলাকার মানুষ অনেকে সময় একে সাগরের সাথেও তুলনা করত। কিন্তু কাল পরিক্রমায় বর্তমানে নাম পরিবর্তন হয়ে দিধীটির নাম সাগরদিঘী হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।

দিঘীটির বৈচিত্রঃ-  দিঘিটির উত্তর ও দক্ষিন পড়ে দুইটি পাঁকা ঘাট আছে। এগুলো বর্তমানে ভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে। যার মধ্য এখনও প্রতিদিন শত শত মানুষ ব্যবহার  করছে। যা কালের সাক্ষি হিসাবে এখনও দাড়িয়ে আছে। দিঘীটির চার পাশে পাড় বড় হওয়ায় আনেক বৃক্ষ সজ্জিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দিঘীটির উত্তর পাশে একটি প্রাচীন বটবৃক্ষ রয়েছ।তার নিচে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কলকাকলিতে মূখরিত করে তুলে।

  

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি