Loading..

খবর-দার

২২ জুন, ২০২২ ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ

পদ্মা সেতু বাঁকা কেন?

আমরা যদি আকাশ থেকে পদ্মা সেতু দেখি, দেখব, সেতুটা সরলরেখার মতো সোজা নয়। সামান্য বাঁকা।

প্রশ্ন হলো, পদ্মা সেতু অনুভূমিকভাবে বাঁকা কেন?

এর ব্যাখ্যা হলো, পদ্মা সেতু অনেক দীর্ঘ। ৬.১৫ কিলোমিটার। এত লম্বা পথ যদি সরলরেখার মতো সোজা হয়, তাহলে গাড়ির চালকেরা অনেক সময় অমনোযোগী হয়ে পড়েন। চালকদের হাত স্টিয়ারিংয়ে না–ও থাকতে পারে। একটু বাঁকা সেতুতে চালকদের হাত স্টিয়ারিংয়ের ওপরে থাকবে, মনোযোগও থাকবে গাড়ি চালানোর দিকে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা অনেক কমে যাবে।একটা স্থলসড়কে দুর্ঘটনা আর একটা সেতুর ওপরে দুর্ঘটনার মধ্যে পার্থক্য আছে। কোনো দুর্ঘটনাই কাম্য নয়; কিন্তু সেতুর ওপরে দুর্ঘটনা ঘটলে তা সমস্যার সৃষ্টি করবে অনেক বেশি।

আরেকটা কারণ আছে দীর্ঘ সেতু অনুভূমিকভাবে একটু বাঁকা করে তৈরি করার। তা হলো বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির হেডলাইট সরাসরি চালকের চোখে পড়বে না। তাতেও দুর্ঘটনার শঙ্কা কমে যাবে।তবে অনেক সেতু যে লম্বালম্বি বা ভার্টিক্যালি ধনুকের মতো বাঁকা করা হয়, কচ্ছপের পিঠের মতো বা উটের পিঠের মতো; তার প্রধান কারণ, ওজন বা লোড সেতুর স্প্যান থেকে দুই প্রান্তে ভাগ করিয়ে দেওয়া। সেতুর নিচে ঘন ঘন পিলার দেওয়া যাবে না, কারণ নিচ দিয়ে জলযান যাবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ইঞ্জিনিয়াররা অনেক সময় ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করেন। অনেক উঁচু পিলার তৈরি করে সেখান থেকে লোহার দড়ি ঝুলিয়ে সেতুটাকে ধরে রাখেন। রাঙামাটিতে পর্যটন মোটেলের পেছনে পায়ে হাঁটার ঝুলন্ত সেতু হলো এর ছোট্ট একটা উদাহরণ।পদ্মা সেতুতে দুই পিলারের মাঝখানের লোড বা ওজন ধারণ করার জন্য ট্রাস ব্যবহার করা হয়েছে। তোমরা যদি বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ো, ট্রাস কী জানতে পারবে। সোজা বাংলায় বলি, ট্রাসে কতগুলো ত্রিভুজের সমাবেশ ঘটানো হয়। পদ্মা সেতুর নিচের ডেকে দেখবে, তিনটা করে বাহু দিয়ে পরপর ত্রিভুজ সাজানো আছে। এতে লোড বা ওজন বহন করে পিলার পর্যন্ত নিয়ে আসতে সক্ষম হবে এই ট্রাসযুক্ত স্প্যানগুলো।

পদ্মা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদীগুলোর একটা। এর ওপরে সেতু বানানো শুধু আর্থিক দিক থেকেই একটা চ্যালেঞ্জ নয়, এটা কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জও।একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো, নদীকে সেতুর নিচ দিয়ে বইতে বাধ্য করা। বাংলাদেশ পলিমাটির দেশ, নদী খুব পাড় ভাঙে, গতি বদলে ফেলে। এ জন্য নদীকে ট্রেনিং দিতে হয়, বা নদীশাসন করতে হয়। তা না হলে দেখা যাবে, সেতু সেতুর জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, আর নদী অন্য জায়গায় চলে গেছে।সুত্রঃ প্রথম আলো।