Loading..

ভিডিও ক্লাস

২৩ জুন, ২০২২ ০২:৫৪ অপরাহ্ণ

'বার্ন আউট' কী—কীভাবে এ অবস্থা থেকে আপনি বের হয়ে আসবেন

'বার্ন আউট' কীকীভাবে অবস্থা থেকে আপনি বের হয়ে আসবেন

বার্ন আউট এমন একটা অবস্থা যখন আমরা শারীরিক মানসিক এবং আবেগের জায়গায় নিঃশেষ হয়ে যাই। অবসাদের চূড়ান্ত অবস্থা এটি। আমাদের যে কারোই বার্ন আউট হতে পারে।

অস্বস্তিকর কাজের পরিবেশে দীর্ঘ ধরে সময় থাকতে বাধ্য হলে, টানা রাত জাগলে, কোনো কিছুকে না বলতে না পারলে বার্ন আউট হয়ে থাকে।

পরিবার পেশার বাইরের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ না থাকার কারণেও বার্ন আউট ঘটতে পারে।

এর বাইরে অদক্ষ নেতৃত্ব, চাপমূলক অফিস কালচার, অস্পষ্ট প্রত্যাশা, উন্নতির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া এসবেও বার্ন আউট হতে পারে।

যখন বার্ন আউট হবে, আপনি অন্যভাবে সব কিছু করতে থাকবেন। অনেক সময় আপনি নিজেও বুঝবেন না যে কী ঘটছে।

বার্ন আউটের লক্ষণের সাথে ডিপ্রেশন কিংবা অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডারের লক্ষণের বেশ মিল আছে, ফলে আপনার লক্ষণগুলি যে ডিপ্রেশন কিংবা অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডার না সেটা ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে নিন।

বার্ন আউটের কিছু প্রধান চিহ্ন:
.

#
. কাজের পারফরমেন্স খারাপ হয়ে যাওয়া এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা

যে কাজগুলি আগে সহজেইে করতে পারতেন সেসব এখন করতে পারছেন না কিংবা কোনো মতে করছেনএটা বার্ন আউটের লক্ষণ।

আপনার মনে হতে থাকবে অফিসে কাজের চাপ হঠাৎ খুব বেড়ে গেছে, আগের থেকে দ্রুত চলছে সব কিছু। কাজ করার চেয়ে শূন্যে তাকিয়ে থাকা কিংবা নতুন চাকরি খোঁজা আপনার কাছে তুলনামূলক ভালো কিছু মনে হতে থাকবে।

কাজে খারাপ পারফরমেন্স একটা নিয়মিত ঘটনা হবে এবং এই অবস্থায় যে কারো মনে হবে, এটা কীভাবে ঘটছে! আপনার মনে হতে থাকবে আপনাকে যে কোনো সময় আপনার বস পারফরমেন্স নিয়ে কথা বলতে ডাকবেন।

অবস্থা থেকে যেভাবে ফিরবেন:
ভাবার চেষ্টা করুন, যখন আপনি কাজগুলি ঠিকমত করতেন তখন আপনার মোটিভেশন কী রকম ছিল। আপনার চিন্তা এবং কোন অ্যাকশনগুলি কাজকে সহজ করতে পারে। ভাবুন, আপনার আগের মত কিংবা কাছাকাছি পর্যায়ে কাজ করার ক্ষমতা সবসময় আপনার নাগালের মধ্যে আছে।

আশেপাশে থেকে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটায় এমন জিনিসগুলি সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করুন। কাজে আসার আগে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করুন।
.

#
. হতাশা

আগে আপনার এসব অভিযোগ ছিল না, কিন্তু এখন ছোটখাট বিষয়ে অভিযোগ করতে শুরু করেছেনএটা হতাশার লক্ষণ।

আপনার সহকর্মীরাও ব্যাপারটা লক্ষ্য করবে যে আপনি দিন দিন আপনার কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক হয়ে উঠছেন।

আপনার জীবন, বিশেষত কাজ আপনার কাছে অসহ্য হয়ে উঠছে। আপনি কোনো কিছুতেই ইতিবাচক কিছু দেখতে পাচ্ছেন না।

যেভাবে ফিরবেন:
আপনি আপনার বর্তমান অবস্থানকে যেভাবে দেখছেন সেই ভঙ্গিটি চেঞ্জ করুন। আপনার চিন্তা আর মাইন্ডসেট যদি আপনার কাজের সাথে ঠিক থাকে, আপনার শরীর সেটাকে যেভাবেই হোক সামাল দেবে।

আপনার নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে যাতে যেকোনো নেতিবাচক চিন্তা আসার আগে আগে আপনি সচেতন হয়ে যান। এমন চিন্তা আসতে শুরু করলে নিজেকে জিজ্ঞেস করবেন, “এটা আমাকে কেমন অনুভব করাবে?”

এরপর সিদ্ধান্ত নিন যে এটা কি আপনাকে আপনার লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে, নাকি আপনাকে একদম কাজ করতে দিচ্ছে না।

প্রথম প্রথম এরকম চেষ্টা একটু উদ্ভট লাগবে আপনার। কিন্তু ইতিবাচক চিন্তা না আসার আগ পর্যন্ত এই চেষ্টা চালিয়ে যান।
.

#
. অতৃপ্তি বোধ করা

আপনার কাজের জায়গা কিছু কিছু সময় খুব দ্রুতগতির অতিরিক্ত চাপের পরিবেশ হয়ে উঠতে পারে। আপনি টিমের একজন সদস্য এবং আপনার কন্ট্রিবিউশন টিমে গুরুত্বপূর্ণ এরকম হলে আপনার নিজেকে তৃপ্ত মনে হবে।

আমাদের প্রত্যেকেই বেশ কিছু বিষয় ভালো পারি কিংবা সেসবে আগ্রহী। যে পরিবেশে আমাদের এই মেধা আর শক্তির জায়গাগুলি সামনে আসে আমরা সেখানে কাজ করার স্পৃহা পাই। আবার যখন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় আমরা থাকি না তখন আমাদের নিজেকে বাদ পড়া বা পরিত্যক্ত মনে হতে পারে।

যেভাবে ফিরবেন:
আপনার বসকে নিজের উদ্বেগের কথা জানান। বসের সাথে কথা বলার আগে ভালো হয় যদি আপনি আপনার বিশ্বস্ত এবং ব্যাপারগুলি বোঝে এমন কোনো সহকর্মীর সাথে কথা বলে নেন। তাতে বসের সাথে আপনার কমিউনিকেশন টু দ্যা পয়েন্ট হবে।

আপনার বস কিংবা টিম লিডারের সাথে একটা লক্ষ্য এবং সময়সীমা ঠিক করে নিন যেটা আপনার তৃপ্তিবোধ বাড়াতে সাহায্য করবে। এই অনুযায়ী আপনার অ্যাকশন প্ল্যান ফলো আপে রাখুন।

একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, আমাদের একটা পর্যায় পর্যন্ত কমবেশি আপস করতেই হয়, কিন্তু এই যে আপনি আপনার বসকে আপনার মনোভাব আর অনুভূতি সম্পর্কে জানালেন এটাই আপনাকে সম্পূর্ণ বা তৃপ্ত বোধ করাবে, এবং টিমে অবদান রাখা একজন হিসেবে নিজেকে ভাবাবে।
.

#
ভালো ভাবে ঘুম না হওয়া

অনেক রাত জেগে জেগে এদিক-ওদিক করতে করতে আপনি যদি আপনার দিনের কাজের কথা ভাবেন আপনার ঘুমে সমস্যা হবে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ঘুমের ঘাটতির জন্য আমাদের মানসিক সামর্থ্যে এবং পারফর্মেন্সে বড় রকমের সমস্যা দেখা দেয়।

যেভাবে অবস্থা কাটাবেন:
বিছানায় যাওয়ার একটা রুটিন ঠিক করে নিন এবং সেটা ঠিকঠাক ভাবে মেনে চলুন। আপনার বেডরুমের পরিবেশ যেন ভালো ঘুমের উপযোগী হয় তা নিশ্চিত করুন।

সোশ্যাল মিডিয়া কখনো ঘুমায় না, সুতরাং ঘুমানোর কমপক্ষে একঘণ্টা আগে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বের হয়ে আসুন। ব্লু লাইট (ইলেকট্রনিক ডিভাইস যে আলো তৈরি করে) আমাদের ঘুমকে প্রভাবিত করে এবং স্লিপিং সাইকেল এলেমেলো করে দেয়। আপনার ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলির আলো যতটুকু পারেন ঘুমানোর সময় কমিয়ে রাখবেন।
.

#
. শঙ্কা

কাজের চিন্তা আপনাকে অনেক নেতিবাচক ভাবনায় ফেলে দেয়, আপনার শারীরিক অস্বস্তি হতে থাকে। আপনার মনে হবে এটার কি কোনো শেষ আছে? আপনার মনে হবে আপনার কাঁধে যে কাজের বোঝা চেপে আছে সেটা সর্বোচ্চ।

কাজে ফিরতে হবে এই ভয় নিয়ে সারাদিন থাকলে, আপনার আর কাজ করা হবে না। এই ভয়ের অনুভূতি আপনার প্রচুর সময় নষ্ট করবে।

যেভাবে অবস্থা কাটাবেন:
আপনি রিল্যাক্স করার একটা রুটিন বানান। আর বড় বড় নিঃশ্বাস নিন।

স্বল্প সময়ের জন্য একটা ব্রিদিং এক্সারসাইজের কথা ভাবতে পারেন, যেটা আপনার কাজের জায়গায়ও করতে পারবেন। যখন আপনার মধ্যে ভয় ঢুকতে শুরু করছে আপনি কোনো ফাঁকা ঘরে কিংবা বাথরুমে যান, চোখ বন্ধ করুন, ১০ বার বড় করে শ্বাস নিন। আপনার শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করুন।

লক্ষ্য করুন দিনের কোন সময়টায় আপনার শ্বাস নেয়ার জন্য সময় বের করতে হচ্ছে, তারপর সময়টাকে একটা রুটিনে নিয়ে আসুন।

ঘুমানোর সময় ঘাড় ম্যাসাজ কিংবা ম্যাসাজ থেরাপিও আপনার শরীরকে রিল্যাক্স করবে, যেটা সারা সপ্তাহে আপনাকে কাজের গতি দিবে। মনে রাখা দরকার নিজের যত্ন নেয়া খুব দরকারি।
.

#
. আপনি প্রিয়জনের সাথে বেশি দুর্ব্যবহার করছেন

বার্ণ আউটের আর একটা লক্ষণ আপনি রগচটা হয়ে উঠছেন এবং আপনি যাদের ভালবাসেন তাদের দিকে অল্পতেই তেড়ে যেতে শুরু করেছেন। আপনি নিজেই বোঝেন আপনি তাদের সাথে এমন আচরণ করতে চান না, আপনি চাচ্ছেন আগের মত শান্ত পরিবেশে ফিরতে।

আপনার কাজের পরিবেশ কীভাবে আপনাকে আক্রান্ত করছে সেটা কিন্তু আপনার প্রিয়জনরা জানেন নাএই ব্যাপারটা বুঝতে থাকুন। আপনি নিজেই ভেবে দেখতে পারেন, আপনি গোটা ব্যাপারটা না জেনে হঠাৎ রকমের দুর্ব্যবহারের শিকার হলে কেমন অনুভব করতেন।

সুতরাং প্রিয়জনকে গোটা পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে বলুন। কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার যে এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে আপনার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার প্রিয়জনরা আপনাকে ভালোবাসে, কিন্তু তারা এই পরিস্থিতি থেকে আপনাদের বের করে আনার মত এক্সপার্ট হয়তো নন।
.

#
. মানসিক অবসাদ

আপনার কাছে কি এমন মনে হচ্ছে যেকাজ আমার সবটা শুষে নিচ্ছে”—তাহলে আপনি বার্ন আউটের ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন। বার্ন আউটে এরকম মানসিক অবসাদ আসে।

এই অবস্থায়, আপনি যে কাজ করতে এক সময় ভালবাসতেন সেগুলি করতেই বিরক্ত আর ক্লান্ত হয়ে উঠবেন।

যেভাবে অবস্থা কাটাবেন:
আপনার প্রায়োরিটি নিয়ে আবার ভাবেন। ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে নিন। আপনার যদি ঘর পরিষ্কার রাখা কিংবা বন্ধুদের সাথে সপ্তাহে একদিন আড্ডা দেয়ার প্ল্যান থাকে, আপনি সেই প্ল্যানে ঠিক থাকুন।

আপনার নিজেকে তেমন নিঃশেষ মনে হবে না যদি আপনি আপনার লক্ষ্য আর প্রায়োরিটিকে এক সঙ্গে রাখতে পারেন।

#

ভেবে দেখুন, কখনো আপনার এমন বার্ন আউটের অবস্থা হয়েছিল কি? কী করেছিলেন আপনি তখন