Loading..

ভিডিও ক্লাস

৩০ জুন, ২০২২ ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি ‘ডিজিটাল টুইন’

ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি ‘ডিজিটাল টুইন’

ডিজিটাল টুইন হলো একধরনের ভার্চুয়াল মডেল। এই মডেলের সাহায্যে কোনো বস্তু, যন্ত্র বা ডিভাইস বাস্তবে কীভাবে কাজ করে, তা ভার্চুয়াল মাধ্যমেই দেখে নেয়া যায়।

ডিজিটাল টুইন কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে একটা স্মার্ট উইন্ড টার্বাইনের কথা চিন্তা করা যাক।

টার্বাইনকে আরো দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে এতে কী কী পরিবর্তন বা সংস্কার আনা দরকার, তা যন্ত্রটির ডিজিটাল টুইন মডেলের মাধ্যমে বের করা সম্ভব।

এজন্যে টার্বাইনে থাকা বিভিন্ন সেন্সর থেকে যন্ত্রটি কীভাবে কাজ করে, সে ব্যাপারে প্রথমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। যেমন, তাপমাত্রা, আবহাওয়া বা সেই টার্বাইন থেকে কতটা শক্তি পাওয়া যাচ্ছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য প্রসেস করা হবে। আর সেসব তথ্য কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হবে টার্বাইনের ডিজিটাল কপি।

পরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে টার্বাইনের ডিজিটাল টুইন মডেলটি চালানো হলে তাতে খুব সহজেই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করা যাবে। এর মাধ্যমে যন্ত্রটিতে কোনো সমস্যা থাকলে তা খুব দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব। এছাড়া সম্ভাব্য কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনলে টার্বাইন থেকে আরো বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন হবে, সেটাও বের করা যাবে।

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির ধারণার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯৯১ সালে ‘মিরর ওয়ার্ল্ডস’ (Mirror Worlds) নামের এক বইয়ে। বইটি লিখেছিলেন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডেভিড গেলার্নটার। এরপর ২০০২ সালে প্রথম উৎপাদন শিল্পে ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি প্রয়োগ করেন সে সময়ের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডক্টর মাইকেল গ্রিভস। তিনিই প্রথম ডিজিটাল টুইন সফটওয়্যারের ধারণা সামনে নিয়ে আসেন।

ডিজিটাল এই যুগে যেকোনো শিল্পেই ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যায়। আর তাতে অনেক ধরনের সুবিধাও পাওয়া যায়। মূলত এই প্রযুক্তি কাজে লাগানো হলে যেকোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের যেই খাত সবচেয়ে বেশি উন্নত হয়, সেটা হলো রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। মূলত যেকোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সময়ের সাথে সাথে আরো নিখুঁত করে তুলতে ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি কাজে লাগানো যায়।

বিভিন্ন শিল্পে ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি প্রয়োগ করা গেলেও এ থেকে নির্মাণ শিল্প, স্বাস্থ্যখাত, মোটরগাড়ি শিল্প, নগর পরিকল্পনা, উৎপাদন শিল্প এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে।

ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তিকে বেশ কয়েকটা অংশে ভাগ করা যায়। সেগুলি হলো:
.

# কম্পোনেন্ট টুইনস

কম্পোনেন্ট টুইনস’কে ডিজিটাল টুইন-এর মৌলিক একক বলা যায়। যেকোনো কার্যকরী ডিজিটাল টুইন মডেলের ক্ষুদ্রতম উদাহরণ হলো কম্পোনেন্ট টুইনস।
.

# অ্যাসেট টুইনস

যখন দুই বা তার চেয়ে বেশি কম্পোনেন্ট একসাথে কাজ করে, তখন ‘অ্যাসেট টুইনস’ গঠিত হয়। কম্পোনেন্টগুলি কীভাবে একটা আরেকটার সাথে কাজ করে, তা অ্যাসেট টুইনস-এর মাধ্যমে বোঝা যায়।
.

# সিস্টেম বা ইউনিট টুইনস

যেকোনো মডেলের পারফর্মেন্স উন্নত করতে তাতে কী পরিবর্তন আনা দরকার, তা নির্ণয় করতে এ পর্যায়ের ডিজিটাল টুইন ব্যবহার করা হয়। মূলত মডেলের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে, তা বোঝা যায় সিস্টেম বা ইউনিট টুইনস-এর সাহায্যে।
.

# প্রসেস টুইনস

প্রসেস টুইনস-এর সাহায্যে সামগ্রিকভাবে মডেলটি নিয়ে গবেষণা করা যায়। যেকোনো বড় আকারের প্রডাকশন ফ্যাসিলিটির মতো ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে, তা জানা যায় প্রসেস টুইনস-এর মাধ্যমে।
.

মোটকথা, ডিজিটাল টুইন একটি উদীয়মান আর সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি। গত বছরে ডিজিটাল টুইন-এর আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ছিল ৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে সময়ের সাথে সাথে খুব দ্রুতই এ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই এই বাজার বেড়ে ৪৮.২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।

ডিজিটাল টুইন-এর বাজারমূল্য বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন খাতে এই প্রযুক্তি কাজে লাগানোর নতুন সব সম্ভাবনা তৈরি হবে। ফলে ভবিষ্যতে সহজ হয়ে আসবে প্রযুক্তি সংক্রান্ত জটিল অনেক কাজ।

সৌঃ সি বি