Loading..

খবর-দার

০১ আগস্ট, ২০২২ ০৮:১৬ অপরাহ্ণ

শিল্প কারখানা স্থাপনে পরিবেশে রক্ষার কথা ভাবতে অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি শিল্প কারখানা ও অন্যান্য সব স্থাপনা নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্টদের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, দেশব্যাপী আমরা পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার ঘটাচ্ছি। আমাদের পরিবেশ রক্ষা করাটা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা প্রতিটি শিল্প কলকারখানা থেকে শুরু করে যতো প্রতিষ্ঠান আমরা তৈরি করছি, সেখানেই পরিবেশবান্ধব যাতে হয়, তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এমনকি গার্মেন্ট শিল্পের গ্রিন ইন্ড্রাস্ট্রিজ সারা পৃথিবীতে ১০টার মধ্যে এখন সাতটাই কিন্তু এখন বাংলাদেশে। পরিবেশ-প্রতিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি।

নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও অন্যান্য চার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ১০ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) ও নরসিংদীর সার কারখানা প্রকল্প এলাকা থেকে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী একই সময়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের ১৪ তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়সহ আরও চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে মাদারীপুর বিএসসিআইসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট সম্প্রসারণ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টার (বিআইটিএসি) এর আওতায় টুলস ইনস্টিটিউশন স্থাপন এবং বাংলাদেশ স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (বিএসইসি) আওতায় এলইডি লাইট অ্যাসেম্বিং প্লান্ট স্থাপন। 

অনুষ্ঠানের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কৃষিপণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষি ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন, বিভিন্ন ফলমূল, তরিতরকারি সবজি উৎপাদন, মাছ-মুরগির ডিম, মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে অর্থাৎ ভ্যালু অ্যাড করতে পারলে আমরা যেমন বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হব, পাশাপাশি নিজের দেশের মানুষেরও যেহেতু ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, সেখানে আমাদের বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।

শিল্পায়নের সম্প্রসারণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনীতি- এটা কৃষিভিত্তিক ঠিক, কিন্তু সাথে সাথে শিল্পায়ন আমাদের প্রয়োজন। শিল্পায়ন যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, রপ্তানি করার সুযোগও সৃষ্টি করে। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা- যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ হয়; সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারে ৫৭টি শিল্প নগরী, আমরা যখন ক্ষমতায় আসি আমরা স্থাপন করি এবং ১৩টি শিল্পনগরী স্থাপনের কাজ আমরা শুরু করি। আর বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমাদের কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাস করা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা সম্প্রসারণ করা-  এ ধরনের বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা হাতে নিই।

দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আমাদের মোট রপ্তানি আয় ছিল ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে আমরা উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে আমরা প্রায় ২০২টি দেশ ও অঞ্চলে ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করতে পারছি। আমাদের সরকারের নীতি এবং কর্মসূচির ফলে বর্তমানে জিডিপিতে আমাদের শিল্পখাতের অবদান প্রায় ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ঘোড়াশাল এবং পলাশে দুইটি পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানার স্থলে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানা ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। নতুন এ সার কারখানায় দৈনিক ২৮০০ মে. টন (বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মে. টন) দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ১০% ইউরিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে ঘোড়াশাল থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্টিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান শাহ মো. ইমদাদুল হক। 

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বিআইসিসি থেকে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে এই প্রকল্পগুলোর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। 

পরে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকাশিত শিল্পায়নে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বিষয়ক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।