Loading..

খবর-দার

০৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অন্যজনের সনদে চাকরি করছেন শিক্ষ​ক আলাউদ্দিন

অন্যজনের সনদে চাকরি করছেন শিক্ষ​ক আলাউদ্দিন 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খেসবা দাখিল মাদরাসার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার উত্তর মেরুণ্ডী গ্রামের কোকিল উদ্দিনের ছেলে মো. আলাউদ্দিনের স্নাতক (পাস) সনদে ১৪ বছর ধরে এই মাদরাসায় চাকরি করছেন নাচোলের খেসবা গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দেশের ছেলে মো. আলাউদ্দিন। পাঁচ বছর ধরে এমপিওভুক্তির সরকারি বেতন-ভাতাও তুলছেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে নকল আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে হরিরামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন আসল আলাউদ্দিন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খেসবা গ্রামের মো. আলাউদ্দিন ১৯৯৯ সালে নওগাঁর মঙ্গলবাড়ী এম এস ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক (পাস) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ওই বছর তাঁর ফল স্থগিত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০১ সালে হরিরামপুর উপজেলার এম এ রউফ ডিগ্রি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক পাস করেছেন মর্মে সনদ দিয়ে ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি নাচোলের খেসবা দাখিল মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) পদে যোগ দেন আলাউদ্দিন। ২০১৩ সাল থেকে এমপিওভুক্তির সরকারি বেতন-ভাতাও নিয়মিত তুলছেন। কিন্তু তাঁর স্নাতক পাসের বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ করে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামলে বেরিয়ে পড়ে রহস্য।

নাচোলের খেসবা দাখিল মাদরাসায় চাকরির জন্য জমা দেওয়া শিক্ষক আলাউদ্দিনের স্নাতক সনদে পাসের বছর (২০০১), রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জের এম এ রউফ ডিগ্রি কলেজে যোগাযোগ করলে জানা যায়, এই আলাউদ্দিন সেই আলাউদ্দিন নন। যাঁর সনদে নাচোলের আলাউদ্দিন চাকরি করছেন, সেই আলাউদ্দিনের বাড়ি হরিরামপুরের উত্তর মেরুণ্ডী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম কোকিল উদ্দিন। তিনি বর্তমানে একটি ওষুধ কম্পানিতে সিলেটে কর্মরত। শুধু নামের মিল থাকায় তাঁর সনদ নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাকরি করছেন আরেক আলাউদ্দিন।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে প্রতারক আলাউদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আড্ডা মোড় এলাকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী জনৈক সাব্বিরের সহায়তায় মানিকগঞ্জের আলাউদ্দিনের সাময়িক সনদটি সংগ্রহ করেন। স্নাতক সনদে শিক্ষার্থীর বাবার নাম না থাকার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এই জালিয়াতি করেন আলাউদ্দিন।


যোগাযোগের চেষ্টা করলে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন সাক্ষাৎ দেননি। মাদরাসায় গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে সনদ জালিয়াতির কথা স্বীকার করে আলাউদ্দিন বলেন, তিনি মানিকগঞ্জের এম এ রউফ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিলেন না। তাই সেখান থেকে স্নাতক পরীক্ষায় অংশও নেননি। তবে তিনি দাবি করেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভুল করে তাঁকে ওই কলেজের নামে স্নাতক পাসের এই সনদ দিয়েছে। কিন্তু এই ভুল সনদ দিয়ে কিভাবে চাকরি করছেন, এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

এদিকে খেসবা দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুর রশিদ তাঁর প্রতিষ্ঠানের ‘স্বার্থে’ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ না লেখার অনুরোধ করেন। 

নাচোল উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দুলাল উদ্দিন খান জানান, অন্যের শিক্ষা সনদ নিয়ে চাকরি করার বিষয়টি শোনার পর তিনি আলাউদ্দিনকে তাঁর কাগজপত্র নিয়ে ডেকেছিলেন। কিন্তু নানা টালবাহানা করে তিনি আর দেখা করেননি।

নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা সুলতানা বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।