Loading..

প্রকাশনা

১১ অক্টোবর, ২০১৯ ০৯:৪৭ অপরাহ্ণ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ও আত্মকথন

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। এই কথাটি অনেকের কাছেই বোধগম্য। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উচ্চ শিখরে উঠতে পারে না । আমরা সবাই শিক্ষার কথা বলে থাকি। শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা ও উন্নয়নের কথা বলে থাকি। কিন্তু পেশাগত উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক ও অবিরত প্রক্রিয়া। এটি এমন বিষয় নয় যে, শুধু এক সপ্তাহের কিংবা দুই সপ্তাহের একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাম তো পেশাগত উন্নয়ন ঘটে গেল তা নয়। পেশাগত উন্নয়ন জীবনব্যাপী ঘটে থাকে। বিভিন্ন ধরণের শিক্ষক বা শিক্ষা সেমিনার বা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষা ও শিক্ষকের পেশাগত উন্নয়নের একটি উল্লেখযোগ্য দিক।

বাংলাদেশ সরকারের '২০২১ রুপকল্প' বাস্তবায়নে তথা ডিজিটাল বাংলা রুপায়নে শিক্ষক বাতায়ন একটি উল্লেখযোগ্য আইটি পোর্টাল। বাতায়নকে কেন্দ্র করে শিক্ষার তথা শিক্ষকদের মান-উন্নয়নে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বিভিন্নভাবে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষকদের যোগ্য করে তুলতে শিক্ষক বাতায়ন সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। সম্মেলন  শিক্ষকদের পরিচয় করিয়ে দেয় তাঁদের যোগ্যতার উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে এবং সব ধরনের শিক্ষকের মধ্যে গড়ে তোলে এক চমৎকার সেতুবন্ধন যা শিক্ষা ও শিক্ষকের পেশাগত উন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের ভূমিকা, যথাযথ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি অনুশীলন, আইসিটির ব্যবহার ও পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের নানা দিক তুলে ধরার একাডেমিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হয় একেকটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সম্মেলন। শিক্ষাসংক্রান্ত সেমিনার বা কনভেনশনে এসে শিক্ষকরা পরিচত হতে পারেন কোন শিক্ষক কী করছেন, কিভাবে করছেন, কিভাবে সমস্যার সমাধান করছেন, কিভাবে সীমিত সম্পদ ও হাজার সমস্যার মধ্যেও কার্যকর উপায়ে শিক্ষাদান করছেন ইত্যাদি। এগুলো শুধু শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান করা যায় না।


পৃথিবীতে নতুন নতুন ধারণা, পদ্ধতি ও বিষয়ের প্রকাশ ঘটছে প্রায় প্রতিদিন। একজন আধুনিক ও সফল শিক্ষককে এগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের চেয়ে বহুগুণে এগিয়ে আছে তথ্য ও প্রযুক্তিসহ নানা দিক দিয়ে। ইন্টারনেটের ব্যবহার গোটা বিশ্বকে আমাদের পড়ার টেবিলে এনে দিয়েছে এক যুগান্তকারী অধ্যায়। আর এর বেশির ভাগ ব্যবহারকারীই হচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। অতএব, শ্রেণিকক্ষে তাদের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য আমাদেরকে একজন শিক্ষার্থীর চেয়ে এসব বিষয়ে বেশি অবগত হতে হচ্ছে একজন শিক্ষকককে। আর তারই ধারাবাহিকতায় "শিক্ষক বাতায়ন" নামক প্লাটফর্মটি  আবারও এক নবরুপ নিয়ে সূচিত হয়েছে আরও একটি অধ্যায়। যাহাতে শিক্ষার্থীর তুলনায় বর্তমানে শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষকের মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদানে বেশি মনোযোগী হতে হচ্ছে।এছাড়া শিক্ষক বাতায়নকে ঘিরে নানাবিধ প্রশিক্ষণ গ্রহণ চলমান এবং পরবর্তী ফিডব্যাক দেওয়া-নেওয়া শিক্ষা উন্নয়নের প্রধান চাবিকাঠি হয়ে উঠছে। ভূতপূর্বে  যখন আমরা শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিতাম তখন আমাদের মধ্যে নতুনত্বের কোন চিন্তা-চেতনা কাজ করত না। বর্তমান আমাদের শিক্ষাদান পদ্ধতি 'মাল্টিমিডিয়া ক্লাস' পরিচলনা করায় যেমন নতুনত্ব সৃষ্টির অধ্যায় সূচিত হয়েছে, তেমনি ক্লাসের পরিবেশও মনোমুগ্ধকর হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহটাও বেশি বেড়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহার করে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে, শিক্ষায় আইসিটি এর প্রসার ঘটাতে, সরকারের কল্পনায় ছিল একটি ক্লাসরুমে ন্যুনতম একটি ল্যাপটপ/ডেস্কটপ, একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং একটি পর্দা বা সাদা রং করা দেয়াল থাকলেই চলবে। এর জন্য দরকার হবে প্রচুর টাকা। দেশের প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের যথেষ্ট সামর্থ্য নেই এরকম জল্পনা-কল্পনা চলতে না চলতেই; দেশের বিভিন্ন টি টি কলেজে শিক্ষকদের 'ডিজিটাল কন্টেন্ট' তৈরির প্রশিক্ষণ পর্যায়ক্রমে শুরু হয়ে যায়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্তমান সরকার পরিকল্পনা মাফিক প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করছে যা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ মাত্র। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের নিমিত্তে সকল উপকরণ প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করে সরকার "ডিজিটাল বাংলাদেশ” গঠনের গৌরব অর্জন করার মহতী উদ্যোগ ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনার জন্য একজন শিক্ষকের কম্পিউটারে ব্যাপক দক্ষতার প্রয়োজন নেই,বরং কয়েকটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলেই তা করা সম্ভব।যেমনঃ কম্পিউটার অন ও অফ, বিভিন্ন আইকন সম্পর্কে পরিচিতি, ফাইল ও ফোল্ডার খোলা, এম এস পাওয়ার পয়েন্ট ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি। তবে এম এস পাওয়ারপয়েন্ট সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে কয়েকটি সেশনের প্রয়োজন হয়। শিক্ষক বাতায়নকে ঘিরে এব্যাপারে অনেক প্রশিক্ষণ হয়েছে। একটি কথা না বললেই নয়, এই কাজের জন্য ইন্টারনেট  তথ্যের একটি মহাসমুদ্র। যেখানে রয়েছে পাঠ সম্পৃক্ত লাখ লাখ ছবি, এ্যনিমেশন, ভিডিও, টেক্সট প্রভৃতি। সেখান থেকে চাহিদামত উপকরণ বেছে নিয়ে 'মডেল কন্টেন্ট' তৈরি করা যায়। ইন্টারনেটে যে কোন একটি বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ছবি, এ্যানিমেশন এবং ভিডিও অনুসন্ধান করা যায়। এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করার জন্য একজন শিক্ষকের আগ্রহটাই একান্ত প্রয়োজন। তাই তাঁর পেশাকে শক্ত করে আটকে ধরে তাঁর মেধা ও মননশীলতাকে প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষক সম্প্রদায়কে অকপট মনে এগিয়ে আসলেই উত্তর-উত্তোরণ শিক্ষক বাতায়নকে আরও সম্মৃদ্ধ করতে ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে শিক্ষক জাতির অনবদ্য ভূমিকা অপরিহার্য।


ধন্যবাদান্তে--

মো: জমির উদ্দিন

সহকারি শিক্ষক (আইসিটি)

হামকুড়িয়া দাখিল মাদরাসা

তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ। 

তারিখঃ ১১ অক্টোবর ২০১৯খ্রি:

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি