Loading..

প্রকাশনা

১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলা ব্যাকরণে 'ফলা' রিজিয়া পারভীন, সহকারী শিক্ষক, কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, কাপাসিয়া, গাজীপুর ।

বাংলা বানানের নিয়মকানুন

রিজিয়া পারভীন

সহকারী শিক্ষক ( বাংলা )

কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়

কাপাসিয়া, গাজীপুর ।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, বাংলা বানান চর্চায় ভাষাকে শুদ্ধভাবে জানা ও লেখা আমাদের যেমন কর্তব্য তেমনি এর সঠিক ব্যবহার আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও আমাদেরই । কোনো ভাষার বাক্‌ প্রবাহকে সূক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা কতগুলো মৌলিক ধ্বনি পাই । বাংলা ভাষাতেও কতগুলো মৌলিক ধ্বনি রয়েছে । বাংলা ভাষার মৌলিক ধ্বনিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে । এগুলো হচ্ছে ‘স্বরধ্বনি’ ও ‘ব্যঞ্জনধ্বনি’।

আমরা জানি, ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বর্ণ বলে

সে মতে, আমরা স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির লিখিতরূপকে বলবো যথাক্রমে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ ।

স্বরবর্ণ ১১টি আর ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯ টি এর মধ্যে অর্ধমাত্রার বর্ণ 8 (আট)টি । এটা  তোমরা সহজে মনে রাখতে পারো কেননা অ এর পরে আ ধ্বনি আসে । আবার অর্ধ বানানে অ আসে আর আট বানানে আ আসে । অর্থাৎ অর্ধমাত্রা=আটটি (০৮) । মাত্রাহীন বর্ণ আছে দশটি (১০), পূর্ণমাত্রার বর্ণ আছে =৩২ টি। এই মোট -৫০টি ।

বন্ধুরা, আমরা জানি স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্তরূপকে বলা হয় ‘কার’ এগারোটি স্বরবর্ণের মধ্যে ‘কার’ চিহ্ন আছে ১০টির । ‘অ’ বর্ণটির কোনো সংক্ষিপ্তরূপ নেই ।

 ‘অ’ কে নিলীন বর্ণ বলা হয় । নিলীন শব্দের অর্থ হচ্ছে বিলীন বা নিমগ্ন থাকা । ‘অ’ যখন কোন ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত থাকে তখন তা ঐ ব্যঞ্জনের ভেতরে বিলীন/একাকার হয়ে থাকে । অর্থাৎ কোনো শারীরিক অস্তিত্ব ( physical Existence ) থাকে না । যেমন : ক= ক+অ, খ= খ+অ, কথা= ক+অ+থ+আ কার ইত্যাদি ।

‘অ’ বর্ণটি ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণে সহায়তা করে থাকে । যেমন : ক+অ=ক। যেসব ক্ষেত্রে অ ধ্বনি ব্যবহৃত হয় না সেসব ক্ষেত্রে উক্ত বর্ণের নিচে হস্‌ বা হল্‌ (্‌) চিহ্ন বসে। যেমন: কর্‌, পড়্‌। এখানে আমরা কর, (করো) পড় ( পড়ো) বলবো না ।

-কার এবং ঈ-কার ব্যঞ্জনবর্ণের পরে যুক্ত হয় । ই-কার, -কার এবং ঐ-কার ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্বে যুক্ত হয় । উ-কার, -কার এবং ঋ-কার ব্যঞ্জনবর্ণের নিচে যুক্ত হয় । ও-কার এবং ঔ-কার ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্বে এবং পরে দুই দিকে যুক্ত হয় ।

উদাহরণ : বানান, কীর্তি, কিরণ, কেশ, কৈ, ভুল, ভূত, কৃপণ, কোণ, কৌশল

আবার বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় " ফলা "।
আর ফলা মনে রাখার জন্য যদি আমরা এই ছন্দটি ব্যবহার করি তো কেমন হয়...

"মজার লবণ"

ম - ম ফলা - গ্রীষ্ম, পদ্মা ।
জ - য ফলা - ব্যাকরণ, ব্যাগ ।
র - র ফলা - আম্র, ত্রাণ ।
ল - ল ফলা - অম্ল, ক্লান্ত ।
ব - ব ফলা - তত্ত্ব, আশ্বাস, আশ্বিন

ণ - ণ/ন ফলা - চিহ্ন, মধ্যাহ্ন,পূর্বাহ্ণ অপরাহ্ণ ।

এসো আমরা ম-ফলা ও ব-ফলার উচ্চারণ দেখে নিই :
--------------------------------
## ম-ফলার উচ্চারণ :
ক. পদের প্রথমে ম-ফলা থাকলে সে বর্ণের উচ্চারণে কিছুটা ঝোঁক পড়ে এবং সামান্য নাসিক্য স্বর হয় । যেমন
: শ্মশান ( শঁশান্), স্মরণ (শঁরোন্) ।
কখনো কখনো ‘ম’ অনুচ্চারিত থাকতেও পারে । অর্থাৎ যে বর্ণের সাথে ‘ম’ ফলা যুক্ত হবে সে বর্ণের দ্বিত্ব উচ্চারণ হবে । যেমন
: স্মৃতি (সৃতি বা সৃঁতি), গ্রীষ্ম ( গ্রীশশো)
খ. পদের মধ্যে বা শেষে ম-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে সে বর্ণের দ্বিত্ব হয় এবং সামান্য নাসিক্য স্বর হয় । যেমন
: আত্মীয় (আত্‌তিঁয়), পদ্ম (পদ্‌দোঁ), বিস্ময় (বিশ্‌শঁয়), ভস্মস্তূপ (ভশ্‌শোঁস্‌তুপ্‌), ভস্ম (ভশ্‌শোঁ), রশ্মি (রোশ্‌শিঁ) ।
গ. গ, , , , , বা ল বর্ণের সঙ্গে ম-ফলা যুক্ত হলে, ম-এর উচ্চারণ বজায় থাকে । যুক্ত ব্যঞ্জনের প্রথম বর্ণের স্বর লুপ্ত হয় । যেমন
: বাগ্মী (বাগ্‌মি), যুগ্ম (যুগ্‌মো), মৃন্ময় (মৃন্‌ময়), জন্ম (জন্‌মো), গুল্ম (গুল্‌মো) ।


## ব-ফলার উচ্চারণ :
ক. শব্দের প্রথমে ব-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে শুধু সে বর্ণের উপর অতিরিক্ত ঝোঁক পড়ে। যেমন
:  ক্বচিৎ (কোচিৎ), দ্বিত্ব (দিত্‌তো), শ্বাস (শাশ্), স্বজন (শজোন), দ্বন্দ্ব (দন্‌দো) 
খ. শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা যুক্ত হলে যুক্ত ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন
:  বিশ্বাস (বিশ্‌শাশ্), পক্ব (পক্‌কো), অশ্ব (অশ্‌শো) ।
গ. সন্ধিজাত শব্দে যুক্ত ব-ফলায় ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে । যেমন
:  দিগ্বিজয় (দিগ্‌বিজয়), দিগ্বলয় (দিগ্‌বলয়) ।
ঘ. শব্দের মধ্যে বা শেষে ‘ব’ বা ‘ম’-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে । যেমন
:  তিব্বত (তিব্‌বত). লম্ব (লম্‌বো)

বিশিষ্ট ভাষাবিদ হায়াৎ মামুদের ভাষায় বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণে দুটো ব রয়েছে। একটি  হচ্ছে প-বর্গীয় ব । আরেকটি হচ্ছে অন্তঃস্থ ব । এবং তাঁর মতে প-বর্গীয় –ব এর উচ্চারণ হয় । যেমন : উদ্বায়ী, উদ্বোধন, উদ্বেল, উদ্বৃত্ত, দিগ্বিজয়, কদম্ব ইত্যাদি । অন্যদিকে অন্তঃস্থ-ব এর উচ্চারণ উহ্য থাকে । থাকে যে বর্ণের সাথে অন্তঃস্থ-ব যুক্ত হয় সেই বর্ণের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় । যেমন : অশ্ব, বিশ্ব, আশ্বিন, দ্বিত্ব, দ্বিরুক্ত, বিদ্বান, দ্বিতীয়, ধ্বনি ইত্যাদি ।


( সূত্র : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম/দশম শ্রেণি , বাংলা লেখার নিয়ম-কানুন- হায়াৎ মামুদ এবং প্রায়োগিক বাংলা, বাওবি )

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমরা আমাদের সৃজনশীলতা দিয়ে তোমাদের জন্য বাংলা বানান লেখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এতে তোমাদের উপকার হবে ।

বন্ধুরা, আরও জানতে চোখ রাখো ফেইসবুক পেইজে “বাংলা বানানের নিয়মকানুন” গ্রুপে এবং দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার অনুশীলন পাতায় আমরা আছি তোমাদের সাথে নতুন নতুন বানান নিয়ে ।

 

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি