Loading..

প্রকাশনা

১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১২:১১ অপরাহ্ণ

"বাংলা সাহিত্যে ছন্দ"
"বাংলা সাহিত্যে ছন্দ"
বাংলা সাহিত্যে ছন্দ ৩ প্রকার । যথা :
স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ।

সব ছন্দেই মুক্তাক্ষর ১ মাত্রার হয় । আর স্বরবৃত্তে বদ্ধাক্ষর সবসময় ১ মাত্রা, মাত্রাবৃত্তে বদ্ধাক্ষর ২ মাত্রা আর অক্ষরবৃত্তে বদ্ধাক্ষর ১/২ মাত্রা হতে পারে ।
অক্ষরবৃত্তে বদ্ধাক্ষর শব্দের শুরুতে ও মাঝে হলে ১ মাত্রা এবং শব্দের শেষে ও পূর্ণ শব্দ হলে ২ মাত্রা হবে ।
স্বরবৃত্তের তাল/লয় দ্রুত হয়,
মাত্রাবৃত্তে হয় মাঝারি এবং অক্ষরবৃত্তে হয় ধীর ।
যেমন : স্বরবৃত্ত--
ছিপ খান তিন দাঁড়
তিন জন মাল্লা ।
বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর ।
মাত্রাবৃত্ত : এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে ।
রাত থম্ থম্ স্তব্ধ নিঝুম ঘোর ঘোর আন্ধার ।
অক্ষরবৃত্ত : হে দারিদ্র‍্য, তুমি মোরে করেছ মহান ।
সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে ।

কবিতার শেষ চরণে মিল থাকলে বলে মিত্রাক্ষর এবং মিল না থাকলে বলে অমিত্রাক্ষর ।

কাব্যসাহিত্যে ছন্দ সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আগে ‘মাত্রার’ ধারণা থাকা প্রয়োজন ।
মাত্রা : কাব্যে গতির সমতা রক্ষাকে 'মাত্রা' বলে ।

মাত্রা সময়-নিরূপক নির্দেশনা । কোন অক্ষরে কত সময় স্বর অবস্থান করবে, মাত্রায় তা উল্লেখ থাকে । আবৃত্তির ক্ষেত্রে মাত্রা অপরিহার্য । সময়ের পরিমাণ মাত্রা দিয়েই বোঝানো হয় ।

সংগীতে যেমন : ধা । ধিন্ । ধিন্ । ধা । = ৪ মাত্রা । তেমনি কাব্যে, ছিপ । খান । তিন । দাঁড় । তিন ।জন । মাল । লা । = ৮ মাত্রা ।
অক্ষর বলতে, আমরা একসঙ্গে কোন বর্ণে কতটা সময় অবস্থান করি---তার উপর নির্ভর করে ধরা হয় । অক্ষর অনেকটা ইংরেজি ‘সিলেবল’-এর মতো । অক্ষর আর বর্ণ সম্পূর্ণ আলাদা । যেমন, ক + ল + ম ।  এখানে বর্ণ আছে তিনটি কিন্তু যখন শব্দটা উচ্চারণ করি তখন বলি 'ক + লম' । অর্থাৎ, অক্ষর এখানে দুইটি
(kolom - ko lom উচ্চারণ অনুযায়ী) একটি মুক্তাক্ষর এবং অন্যটি যুক্তাক্ষর বা বদ্ধাক্ষর । ko-মুক্তাক্ষর আর lom-বদ্ধাক্ষর ।
সাধারণত কবিতা লেখা হয় পয়ারের ছন্দে । পয়ার ৮ + ৬ = ১৪ মাত্রার দুইটি পর্ববিশিষ্ট পদ বা চরণ । প্রতি দুই চরণে অন্ত্যমিল থাকে ।

শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রে অক্ষরের শেষে স্বরবর্ণ বা ভাওয়েল থাকলে মুক্তাক্ষর এবং শেষে ব্যঞ্জনবর্ণ বা কনসুনেন্ট থাকলে বদ্ধাক্ষর হয়।

প্রায় সব কবিরাই স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কবিতা লেখেন । আমাদের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ।
আমরা যাঁরা বাংলা বিষয়ে পাঠদান করি তাঁদের জন্য আমার এ প্রচেষ্টা ।  ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।
রিজিয়া পারভীন
সহকারী শিক্ষক (বাংলা)
কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
কাপাসিয়া, গাজীপুর ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি