Loading..

খবর-দার

০৯ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:৩৭ অপরাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বে ও পরবর্তীতে আমাদের করণীয়

প্রায় প্রতিবছর বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যায় ছোট-বড় বিভিন্ন ধরণের ঘূর্ণিঝড়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আমাদেরকে প্রলয়ংকরী এসব ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।  ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত সহায়-সম্বল হীনেরা পুণরায় ঘুরে দাড়াতে পারলেও প্রিয়জন হারারা ফিরে পায়না তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনকে। তবে আমরা যদি সচেতন হই তাহলে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহুলাংশে কমাতে পারি।আসুন জেনে নেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বে ও পরবর্তীতে আমাদের করণীয় সংক্রান্তে।

পূর্বাভাসের আগে করণীয় :

১. দূর্যোগের সময় কোন এলাকার লোক কোন আশ্রয়ে যাবে, গরু মহিষাদি কোথায় থাকবে তা আগে  ঠিক করে রাখুন এবং জায়গা চিনিয়ে রাখুন।

২. নিজের কাছে ব্যাটারীচালিত রেডিও রাখুন বা মোবাইলে রেডিও শুনুন। নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনার অভ্যাস করুণ।

৩. সম্ভব হলে বাড়িতে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম (ব্যান্ডেজ, ডেটল প্রভৃতি) রাখুন।

৪. জলোচ্ছ্বাসের পানির প্রকোপ থেকে রক্ষায় নানারকম শস্যের বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন।

৫. ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্য আশ্রয়ে যাবার সময় কি কি জরুরি জিনিস সঙ্গে নেয়া যাবে এবং কি কি জিনিস মাটিতে পুঁতে রাখা হবে তা ঠিক করে সে অনুসারে প্রস্তুতি নেয়া উচিত।

৬. আর্থিক সামর্থ থাকলে ঘরের মধ্যে একটি পাকা গর্ত করুন। জলোচ্ছ্বাসের পূর্বে এই পাকা গর্তের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে পারবেন।

৭. ডায়ারিয়া মহামারীর প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশুদের ডায়ারিয়া হলে কিভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে পরিবারের সকলকে প্রশিক্ষণ দিন।

৮. ঘূর্ণিঝড়ের মাসগুলোতে বাড়িতে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট জাতীয় শুকনো খাবার রাখা ভাল।

৯. নোংরা পানি কিভাবে ফিটকারি বা ফিল্টার দ্বারা খাবার ও ব্যবহারের উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে মহিলাদের এবং আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিন।

১০. ঘূর্ণিঝড়ের পরে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করুন। বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ। মাটির বড় হাঁড়িতে বা ড্রামে পানি রেখে তার মুখ ভালভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে যাতে পোকা-মাকড়,     ময়লা-    আবর্জনা ঢুকতে না পারে।

পূর্বাভাস পাবার পর দুর্যোগকালে করণীয়:

১. আপনার ঘরগুলোর অবস্থা পরীক্ষা করুন, আরও মজবুত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যেমন মাটিতে খুঁটি পুঁতে দড়ি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন অংশ বাঁধা।

২. সিপিপি এর স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।

৩. বিপদ সংকেত পাওয়া মাত্র বাড়ির মেয়ে, শিশু ও বৃদ্ধাদের আগে নিকটবর্তী নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে প্রস্তুত হোন এবং অপসারণ নির্দেশের পরে সময় নষ্ট না করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যান।

৪. বাড়ি ছেড়ে যাবার সময় আগুন নিভিয়ে যাবেন।

৫. আপনার অতি প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী যেমন- ডাল, চাল, দিয়াশলাই, শুক্নো কাঠ, পানি ফিটকিরি, চিনি, নিয়মিত ব্যবহৃত ঔষধ, বইপত্র, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরস্যালাইন ইত্যাদি পানি নিরোধন পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে রেখে ঢাকনা দিয়ে পুঁতে রাখুন।

৬. আপনার গরু-ছাগল নিকটস্থ উঁচু বাঁধে অথবা উঁচুস্থানে রাখুন। কোন অবস্থায়ই গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখবেন না। কোন উঁচু জায়গা না থাকলে ছেড়ে দিন, বাঁচার চেষ্টা করতে দিন।

৭. শক্ত গাছের সাথে কয়েক গোছা লম্বা মোটা শক্ত রশি বেঁধে রাখুন। রশি ধরে অথবা রশির সাথে নিজেকে বেঁধে রাখুন যাতে প্রবল ঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিতে না পারে।

৮. আশ্রয় নেয়ার জন্য নির্ধারিত বাড়ির আশেপাশে গাছের ডালপালা আসন্ন ঝড়ের পূর্বেই কেটে রাখুন, যাতে ঝড়ে গাছগুলো ভেঙে বা উপড়িয়ে না যায়।

৯. রেডিওতে প্রতি ১৫ মিনিট পর পর ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনতে থাকুন।

১০. দলিলপত্র ও টাকা-পয়সা পলিথিনে মুড়ে নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখুন অথবা সুনির্দিষ্ট স্থানে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখুন।

১১. টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং টিউবওয়েলের খোলা মুখ পলিথিন দিয়ে ভালভাবে আটকে রাখতে হবে যাতে ময়লা বা লবনাক্ত পানি টিউবওয়েলের মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে।

দূর্যোগ পরবর্তী করণীয়:

১. রাস্তা-ঘাটের উপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়।

২. আশ্রয়কেন্দ্র হতে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন এবং নিজের ভিটায় বা গ্রামে অন্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন।

৩. অতি দ্রুত উদ্ধার দল নিয়ে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করুন।

৪. ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ যাতে শুধু এনজিও বা সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজে যেন অন্যকে সাহায্য করে সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।

৫. দ্বীপের বা চরের নিকটবর্তী কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য দলবদ্ধ হয়ে দড়ি ও নৌকার সাহায্যে লোক উদ্ধার কর্মআরম্ভ করুন। কাদায় আটকে পড়া লোকের কাছে দড়ি বা বাঁশ পৌঁছে দিয়ে তাকে উদ্ধার কাজে সাহায্য করা যায়।

৬. ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। পরে আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

মোঃ মেশবাহুল হক,প্রভাষক

হাপানিয়া দোগাছী জান্নাতুল উলুম আলিম মাদরাসা

তানোর,রাজশাহী

মোবাইল নং ০১৭১৮৮৯১৪৪৭