Loading..

খবর-দার

২০ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

"সৃষ্টির ঋণশোধ ধ্বংস দিয়ে"

সবমিলিয়ে ৩০০/৩৫০ বছর আগে আমার কোনো পিতৃপুরুষ একবুক স্বপ্ন নিয়ে, হাতে কঠোর কুঠার আর বর্শাকে ভরসা করে অক্লান্ত পরিশ্রমে আবাদ করেছিলো সাতক্ষীরা জেলার বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্যামনগর থানার মুন্সীগঞ্জের জেলেখালী মৌজার কিছু অংশ । দিনে কঠোর পরিশ্রম আর রাতে গাছের উপর টোঙ(গাছের উপরে ঘর) করে বসবাস করত । তাই আমাদের সম্পত্তি হলো হাতকাটারি সম্পত্তি ।
অবশ্য সমগ্র দক্ষিণ বঙ্গের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ ও প্রাচীন । রাজা দক্ষ কন্যা ও শিব জায়া সতীর দেহখণ্ডের ৫১ টির থেকে একখণ্ড এই দক্ষিণ অঞ্চলে বনের মধ্যে পড়ে । সেইস্থানে আনারি নামক এক ব্রাহ্মণ একটি মন্দির তৈরি করেন কিন্তু তার সময় নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি । দ্বাদশ শতকে লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালে মন্দিরটি পুননির্মাণ হয়েছিলো । এই বঙ্গের স্বর্ণালি সময় ছিলো রাজা প্রতাপাদিত্যর আমলে । ধূমঘাট ছিলো তার রাজধানী, এবং এই মন্দির সংস্কার করে নাম রেখেছিলেন যশোরেশ্বরী মন্দির । সেই সোনালি সময়ের মন্দির ছাড়া আর কিছুই টিকে নেই । প্রচণ্ড লবণাক্ততা এবং প্রকৃতির তাণ্ডবতা বারেবারে লণ্ডভণ্ড করেছে এই জনপদকে ।
অষ্টাদশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের "অন্নদামঙ্গল" কাব্যে ঈশ্বরী পাটুনীর সেই বিখ্যাত উক্তি 'আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে-ভাতে'। তারি নামাঙ্কিত ঈশ্বরীপুর এখনো শোভাপায় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ থানা শ্যামনগরে । কিন্তু এই ইতিহাসের অনেক কাছেই আমার অঞ্চল তবুও মাত্র ৩০০/৩৫০ বছর আগে নতুন করে আবাদ করা হয় । সেই থেকে ৭/৮ প্রজন্ম ধরে পূর্বপুরুষের সংগ্রামী পথে প্রকৃতির সাথেই যুদ্ধে বেঁচে চলেছি আমরা ।
সুন্দরবন আমাদের মা । সেই বড়বড় আঘাতগুলো বুকে ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দী বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের । কিন্তু আর কতো; ১৯৭০, ১৯৯১, ২০০৭, ২০০৯, ২০১৯, এরমধ্যে ছোটছোট অসংখ্য আঘাত । এর শেষ কোথায়?
ধ্বংসলীলার রাত পোহাতেই শুরু হয়, উপকূলবাসীর নতুন সংগ্রাম । চলছে----চলবে । হয়তো কোনোদিন এই সৃষ্টির ঋণশোধ হবে ধ্বংস দিয়ে । হয়তো সেদিন সুদূর নয় ।