Loading..

প্রকাশনা

২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০৯:২৫ অপরাহ্ণ

বাংলা বানানের নিয়মকানুন – উচ্চারণ

বাংলা বানানের নিয়মকানুন – উচ্চারণ

রিজিয়া পারভীন

সহকারী শিক্ষক (বাংলা )

কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়

কাপাসিয়া, গাজীপুর

 

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমরা বিগত দিনগুলোতে বাংলা বনানের বিভিন্ন নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা করে আসছি এসো আজ আমরা উচ্চারণ নিয়ে কিছু আলোচনা করি

উচ্চারণ বলতে মূলত এক ধরনের বাচনিক ক্রিয়াকে বুঝায় মানুষ বাগ্‌যন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনি উচ্চারণ করে আরও বিস্তৃতভাবে বলা যায়, ফুসফুস থেকে আগত বাতাস মুখের মধ্যে নানা প্রত্যঙ্গে বাধা পেয়ে আবার কখনো কোন রকম বাধা ছাড়াই ধ্বনি উচ্চারিত হয় বস্তুত, উচ্চারণ হলো ধ্বনির শ্রবণগত প্রকাশ বা বাগ্‌ধ্বনির শ্রুতিগত অভিব্যক্তি

আমরা জানি, বাগ্‌ধ্বনির লিখিত রূপকে বর্ণ বলা হয় ধ্বনি ও বর্ণের উচ্চারণের মধ্যে সমতা থাকা বাঞ্ছনীয় কিন্তু পৃথিবীতে এমন কোন ভাষা নেই যে - ভাষায় ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে ১:১ অনুপাত রক্ষিত হয়েছে এর অবশ্য কারণও রয়েছে ধ্বনি পরিবর্তনশীল ভাষাবিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতি ১০ মাইল অন্তর ভাষার পরিবর্তন হয় কিন্তু কোন ভাষার বর্ণয়ালার পরিবর্তন একশো বা দুশো বছরেও হয় না অনেক সময় দেখা যায়, একটি বর্ণ আদিতে যেভাবে উচ্চারিত হতো, কালান্তরে তার সেই উচ্চারণ সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে গেছে কিন্তু উচ্চারণের পরিবর্তন-অনুযায়ী নতুন বর্ণ প্রতিস্থাপিত হয় না বর্ণের উচ্চারণকে সে হিসেবে স্মৃতিতে ধরে রাখার বিষয় হিসেবে দেখা যায়

সব ভাষার মতো বাংলা ভষারও ধ্বনি দুই ধরনের, স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি এ দুই শ্রেণির ধ্বনির পরিচয় গ্রহণ করলে আমরা দেখি, স্বরধ্বনি উৎপাদনে ফুসফুস থেকে আগত বাতাস মুখের মধ্যে কোথাও বাধা পায় না এ ধ্বনি স্বাধীনভাবে উচ্চারিত হয়

বাংলা বর্ণমালায় ১১টি স্বরবর্ণ আছে কিন্তু ১১টি স্বরধ্বনি নাই এবং উচ্চারণেও আমরা তা পাই না উচ্চারণে আমরা মাত্র ৭টি স্বরধ্বনি পাই এগুলো হলো : ই, এ, অ্যা, আ, অ, ও এবং উ এগুলোকে বাংলা ভাষার মৌলিক স্বরধ্বনি বলে অবশিষ্ট স্বরবর্ণগুলোর মধ্যে ঐ ( <ও+ই) এবং ঔ (<ও+উ) হলো যৌগিক স্বর বা দ্বি-স্বরধ্বনি ঈ এবং ঊ বর্ণ বাংলা লিপিতে থাকলেও উচ্চারণে নেই

ঋ স্বরবর্ণের মধ্যে থাকলেও এর মধ্যে আছে দুটি বর্ণ র্‌+ই । সে-হিসেবে বর্ণটিকে যুক্ত বর্ণ হিসেবেও গ্রহণ করা যেতে পারে

বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনিগুলোর উচ্চারণগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এগুলোর মধ্যে ই, এ, অ্যা জিভের সামনের অংশ থেকে উচ্চারিত হয় এই তিনটি স্বরকে তাই সম্মুখ-স্বরধ্বনি বলে  জিভের পেছনের অংশ থেকে উচ্চারিত অ, ও, উ স্বর পশ্চাৎ স্বরধ্বনি রূপে পরিচিত আ স্বরধ্বনিটি উচ্চারণে জিভ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, সামনে বা পেছনে কোন দিকেই যায় না বলে একে বলে মধ্য স্বরধ্বনি

ঠোঁটের অবস্থা ভেদে স্বরধ্বনিগুলোর দু-ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় প্রথমত, ঠোঁট গোলাকৃত ও অগোলাকৃত অবস্থায় থাকতে পারে বাংলা অ, ও, উ- এই তিনটি স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট গোলাকৃত হয় সে- হিসেবে এগুলো হচ্ছে গোলাকৃত স্বরধ্বনি অন্যদিকে ই, এ, অ্যা স্বরধ্বনিগুলোর উচ্চারণে ঠোঁট গোলাকৃত হয় না বলে এগুলো হচ্ছে অগোলাকৃত স্বরধ্বনি স্বরধ্বনি বিচারে ঠোঁটের উন্মুক্তি অর্থাৎ স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট কতটুকু খোলা হচ্ছে বা আমরা কী পরিমাণ হাঁ করছি, সে –বিবেচনাও প্রাধান্য পায় এ বৈশিষ্ট্য অনুসারে স্বরধ্বনিগুলোকে সংবৃত , অর্ধ-সংবৃত, বিবৃত ও অর্ধ- বিবৃত স্বরধ্বনিরূপে বিচার করা হয়

## সংবৃত স্বরধ্বনি : এ সব স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট সবচেয়ে কম খোলা থাকে। বাংলা ‘ই এবং উ’ এ জাতীয় স্বরধ্বনি।

## অর্ধ-স্বরধ্বনি : এ শ্রেণির স্বরধ্বনিগুলোর উচ্চারণে ঠোঁট পূর্বের তুলনায় অধিক খোলা থাকে। এ জতীয় বাংলা স্বরধ্বনি হচ্ছে – এ এবং ও’।

## অর্ধ-বিবৃত স্বরধ্বনি : এ জাতীয় স্বরধ্বনিগুলোর উচ্চারণে ঠোঁট বিবৃত স্বরধ্বনির তুলনায় কম কিন্তু অর্ধ-সংবৃত স্বরধ্বনির উচ্চারণের চেয়ে অধিক খোলা থাকে এ জাতীয় বাংলা স্বরধ্বনি হলো ‘অ্যা এবং অ’।

## বিবৃত-স্বরধ্বনি : এ জাতীয় স্বরধ্বনির উচ্চারণে ঠোঁট সবচেয়ে বেশি খোলা থাকে বাংলা বিবৃত স্বরধ্বনি হলো ‘আ’।

### জিভের উচ্চতা ও ঠোঁটের উন্মুক্তি অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনি :

জিভের উচ্চতা

 

 জিভের অবস্থান

 

ঠোঁটের উন্মুক্তি

সম্মুখ

মধ্য

পশ্চাৎ

 

উচ্চ

 

সংবৃত

উচ্চ-মধ্য

 

অর্ধ-সংবৃত

নিম্ন-মধ্য

অ্যা

 

অর্ধ-বিবৃত

নিম্ন

 

 

বিবৃত

বন্ধুরা, উচ্চারণ নিয়ে আমার এ আলোচনায় আশা করছি তোমরা উপকৃত হবে পরবর্তীতে উচ্চারণ নিয়ে আবার লেখার চেষ্টা করবো

(সূত্র: প্রায়োগিক বাংলা, বাওবি)

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি