Loading..

ভিডিও ক্লাস

২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

জাতির জনক শেখ মুজিব

মধুমতির কোলঘেঁষে ছোট্ট একটি সবুজ গ্রাম টুঙ্গিপাড়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই টুঙ্গিপাড়াতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বংশীয় গোড়াপত্তন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষেরা ছিলেন ইরাক থেকে আগত দরবেশ শেখ আউয়ালের বংশধর।

ইতিহাস ঘেটে জানা যায় ১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দের দিকে বায়েজিদ বোস্তামি (রহ:) এর সঙ্গী হিসেবে শেখ আউয়াল এ বঙ্গীয় এলাকায় ইসলাম প্রচারের জন্য আসেন। বায়েজিদ বোস্তামি (রহ:) একদিন শেখ আউয়ালকে নির্দেশ দেন মেঘনা পাড়ের এলাকায় গিয়ে ইসলাম প্রচার করার জন্য। গুরুর আদেশ মেনে শেখ আউয়াল  চলে আসেন মেঘনা বিধৌত সোনারগাঁও-এ। বিয়ে করেন স্থানীয় এক বাঙালি কন্যাকে। জন্ম হয় শেখ জহিরুদ্দিন নামের এক পুত্র সন্তান।

পরবর্তীতে শেখ জহিরুদ্দিনের সন্তান তেকড়ী শেখ সোনারগাঁ ছেড়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে খুলনায় পাড়ি জমান। তেকড়ী শেখের সন্তান শেখ বোরহান উদ্দিন মধুমতি ও ঘাঘোর নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা টুঙ্গিপাড়া গ্রামটির কথা শোনেন তাঁর এক বন্ধুর কাছে। রূপসা নদী পাড়ি দিয়ে একদিন তিনি বন্ধুর সাথে চলে আসেন টুঙ্গিপাড়ায়। বিয়ে করেন কাজী পরিবারে, ঘর বাঁধেন চিরকালের জন্য। এভাবেই টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারের গোড়াপত্তন ঘটে। 

বোরহান উদ্দিনের ছিল তিন পুত্র সন্তান। তারা হলেন: শেখ আকরাম, শেখ তাজ মোহাম্মদ ও শেখ কুদরতুল্লা। শেখ আকরামের ছিল দুই ছেলে- শেখ জাকির ও শেখ ওয়াসিম। বঙ্গবন্ধুর দাদা শেখ আব্দুল হামিদ ছিলেন শেখ জাকিরের সন্তান। শেখ জাকিরের তিন ছেলে- শেখ আব্দুল মজিদ, শেখ আব্দুল রাসেল ও শেখ আবদুল হামিদ।

শেখ আবদুল হামিদের তিন ছেলে- শেখ লুৎফর রহমান, শেখ শফিউর রহমান ও শেখ হাবিবুর রহমান। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ শেখ আব্দুল হামিদের ছেলে শেখ লুৎফর রহমানের ঘর আলো করে জন্ম নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  বঙ্গবন্ধুর মাতার নাম সায়েরা খাতুন।


শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী; তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।

১৯৩৪ সনে শেখ মুজিব ১৪ বছর বয়সে দূর সম্পর্কের চাচাতো বোন শেখ ফজিলাতুন্নেসার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বঙ্গবন্ধু ও শেখ ফজিলাতুন্নেসা দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। আর পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলেও ওই সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। অন্যদিকে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও দুই কন্যা যথাক্রমে টিউলিপ সিদ্দিকী ও আজমিনা সিদ্দিক। 

অন্যান্য দিনের মতোই রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ই অগাস্ট রাত ৮টা নাগাদ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ফেরেন।

খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত ১২টার মধ্যেই সে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে যায়।

তখন সে বাড়ির নীচ তলায় একটি কক্ষে কর্মরত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী এফ এম মুহিতুল ইসলাম। রাত তিনটা নাগাদ ঘুমাতে যান মি: ইসলাম।

এর কিছুক্ষণ পরেই সে বাড়িতে টেলিফোনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি মি: ইসলামকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। কারণ রাষ্ট্রপতি তার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন।

মুহিতুল ইসলাম ২০১৬ সালে মারা যান। ১৯৯৬ সালে মি: ইসলাম শেখ মুজিব হত্যা মামলার বাদী হয়েছিলেন।

এর আগে ২০১০ সালে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাতকারে মি: ইসলাম বলেন, " বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় আক্রমণ করছে। অবস্থায় আমি পুলিশকে টেলিফোনের চেষ্টা করছিলাম। তারপরে বঙ্গবন্ধু উপর থেকে নিচে নেমে এলেন। গেঞ্জি গায়ে লুঙ্গি পরা। তখন উনি আমাকে বললেন যে আমার কাছে দে।

"আমার কাছ থেকে তিনি রিসিভারটা নিলেন। নিয়ে বললেন যে , হ্যালো আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি। উনি একথা বলার সাথে সাথেই বৃষ্টির মতো গুলি আসা শুরু হলো। উনি গাড়ি বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে বললেন যে পুলিশ সেন্ট্রি,আর্মি সেন্ট্রি - এতো গুলি চলছে তোমরা কী করো? আমিও ওনার পিছু এসে দাঁড়ালাম। উনি একথা বলেই উপরে উঠে চলে গেলেন।"

গোলাগুলির সময় রাষ্ট্রপতিসহ তাঁর বাড়ির কেউ ঘটনা সম্পর্কে আঁচ করতে পারেন নি।

শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামালকে যখন বাড়ির নিচ তলায় গুলি করে হত্যা করা হয় তখন ঘটনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল, বলছিলেন মুহিতুল ইসলাম।

ধানমন্ডির সে বাড়িতে সশস্ত্র হত্যাকারীরা প্রথমে হত্যা করে শেখ কামালকে। গোলাগুলির আওয়াজ শোনার পর ঘটনা সম্পর্কে জানতে বাড়ির নিচ তলায় নেমে আসেন শেখ কামাল।

"পাঁচ-ছয়জন আর্মি, কেউ কালো পোশাকধারী কেউ খাকি পোশাকধারী - ওনার সামনে এসে বললো হ্যান্ডস আপ। কামাল ভাই বলছে, আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল। তখনই সাথে-সাথে ব্রাশ ফায়ার।"

গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শেখ কামাল।

রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে যখন আক্রমণ হয় তখন কোন ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই হত্যাকারীরা পুরো বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।

মুহিতুল ইসলাম বলছিলেন, একজন রাষ্ট্রপতির বাড়িতে যে ধরণের নিরাপত্তা থাকা দরকার সেটি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ছিল না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির বাড়িতে আক্রমণের পরেও কোন তরফ থেকে কোন ধরনের সহায়তা আসেনি।

শেখ কামালকে হত্যার পর হত্যাকারীরা বেপরোয়া গুলি চালিয়ে বাড়ির উপরের দিকে যাচ্ছিল। উপরে উঠেই শুরু হয় নির্বিচার হত্যাকাণ্ড। চারিদিকে তখন শুধু গুলির শব্দ।

" উপরে তো তাণ্ডবলীলা চলছে। চারিদিকে একটা বীভৎস অবস্থা। ঠিক সে মুহূর্তে উপর থেকে চিৎকার শুরু করলো যে পাইছি পাইছি। এরপরে বঙ্গবন্ধুর একটা কণ্ঠ শুনলাম। তিনি বললেন, তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাস? এরপরে ব্রাশ ফায়ার। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ আমরা আর শুনতে পাইনি," সে রাতের ঘটনা এভাবে বর্ণনা করলেন মুহিতুল ইসলাম