Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০২:৪৫ অপরাহ্ণ

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্পঃ

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্পঃ
                                                                                            বেঁচে আছি তরুণের তারণ্যে
                                                                                                         মোঃ মহিন উদ্দিন
                                                                                                   তারিখঃ ৩১/১০/২০১৯ ইং

ভোর রাত সবাই যখন ঘুমিয়ে পরেছে। সকাল থেকে ঝরছে আষাঢ়ের অঝর ধারার বৃষ্টি। হঠাৎ দরজায় টুকটাক শব্দ। মনে হলো বাইরে থেকে কে যেন ডাকছে, এই দরজাটা খুলো। ভেসে আসা আওয়াজটা কামালের খুবই পরিচিত। দরজা খুলে কামাল দেখে বন্ধু তাপস দাড়িয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে আছে। কি হয়েছে ? দেশের অবস্থা ভালো নেইরে বন্ধু। কেনোরে কি হয়েছে? শুনলাম, আজ ঢাকায় গণহারে মানুষ মারছে। দুজনই মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পরে। দুজনই বাবা মায়ের একমাত্র আদুরের সন্তান। যেমন বিনয়ী,নম্র-ভদ্র স্বভাবের তেমনি মেধাবী। তাদেরকে নিয়ে দুচোখ ভরা স্বপ্ন দেখতো বাবা-মা। দেশটা তখন ছিল পাকিস্থানিদের দখলে। ওরা দেখতো পাকিস্থানিদের নির্মম নিষ্ঠুরতা, ওরা দেখতো ক্ষুধার্ত মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নেয়া। ওরা দেখতো বাবার সামনে মায়ের,ভাইয়ের সামনে বোনের অপনানের যন্ত্রণা। হ্নদয়ে ঘটতো রক্তক্ষরণ। সেই থেকে শুরু হলো প্রহিহিংসার আগুন। ভাবতো লাগলো কিভাবে বাংলার মা, মাটিকে রক্ষা করা যায়। তখন তারা ১৫ কি ১৬। টগবগে তরুনের তারণ্যতা জেগে উঠায় বলতে শুরু করলো জয় বাংলা, বাংলার জয়। কাধে কাধ, হাতে হাত মিলিয়ে বাবা মায়ের স্বপ্নকে চুড়মার চলে যায় কোন এক অজানায়। বাবা মায়ের শত বারণ তাদেরকে আটকাতে পারেনি। বাবা মাকে বলে দেশটাকে স্বাধীন আমরা চাইয়ি চাই। তার জন্য প্রয়োজনে নিজের জীবন দেবো। প্রচুর সম্ভবনাময় দক্ষ মানব স্বম্পদে পরিণত হবে আমদের বাংলার মানুষ।বিশ্বের মানচিত্রে উচু করে দাঁড়াবে বাঙ্গালীর বাংলাদেশ। দেশ তখন তুমূল উত্তেজনায়। আঘাত আর পাল্টা আঘাত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কামালের কিছু অব্যক্ত কথা বলে তাপস,যদি কখনো পৃথিবীর মায়া মমতা ছেড়ে চলে যায় মাকে বলে দিস আমি ওপারে ভালো আছি,তাছাড়া আমাকে যদি বেশি পড়ে আমি বেঁচে থাকবো বাংলার তরুনের তারণ্যের ভীড়ে। তাপস, এত কিছু ভাবার সময় নাই,বাচাতে হবে বাংলার মা ও মাটিকে। কারণ মাটি আমার, এ মাটি সারা বাংলার। এটাই ছিলো কামাল ও তাপসের শেষ কথা। ঢাকা থেকে আসা কিছু লোকের কাছ থেকে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে হাতে তুলে নেয় রাইফেল। ৫নং সেক্টরে (সুনামগঞ্জ) তার অবস্থান। শুরু হয় তুমূল গোলাবর্ষণ। ভাটিবাংলার এ সেক্টরে রাস্থাঘাট ছিল খুবই ভয়াবহ। তাতে কি হলো থেমে থাকেনি তাপস ও কামাল। জীবন বাজি রেখে চালিয়ে যেতে লাগলো যুদ্ধ। অনাহার আর অনিদ্রায় কতদিন কাটানো যায়। নিস্তেজ হতে থাকে তার দেহ,মন। পাল্টা আঘাতটাকে প্রতিহত করার জন্য সেক্টর কমাণ্ডার মেজর মীর শওকত আলীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান পরিবর্তনের কথা বলেন। মেজর মীর শওকত আলীর ডাকে তখন উচ্চারিত হতে থকে হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সে কথা

                                                                       “এবারের সংগ্রাম আমদের মুক্তির সংগ্রাম
                                                                             এবারের সংগ্রাম আমদের স্বাধীনতার সংগ্রাম
                                                                                 রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো
                                                                                      বাংলার মানুষ মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ"।

অবস্থান পরিবর্তনের জন্য পিছু হটতে চাইলে কাল হয়ে দাড়ালো আষাঢ়ের কর্দমাক্ত রাস্থাঘাট। শত্রু পক্ষকে প্রতিহত করার জন্য হাতের রাইফেলটা ছিল প্রস্তুত। নিজের ভারসাম্য রক্ষা না করার কারণে পা পিছলে পরে মাটিতে।নিজের রাইফেলের গুলিতে প্রাণ হারায় কামাল।রক্তে লালে লাল হয়ে যায় কামালের নিথর দেহ ও কর্দমাক্ত রাস্থাঘাট।সেই রাতে তাপস কামালের নিথর দেহটা মাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসে। মা অবাক চোখে থাকিয়ে থাকলে বলে, ভালো থাকিস মা। আমি ভালো আছি, চেয়ে দেখ বাংলার বুকে বেঁচে থাকা হাজারো তরুনের তারন্যের মাঝে।
                                                                                                              সমাপ্ত