Loading..

নেতৃত্বের গল্প

২১ মার্চ, ২০২০ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ

সমস্যা সমাধানভিত্তিক শিখন ও গাঠনিক মূল্যায়ন-প্রজেক্ট -৩

এসডিজি-৪-এর মূল লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা ও জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসার। একুশ শতকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরণ, শিক্ষকের শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার্থীর শিখন দক্ষতা ও ক্ষমতা বিংশ শতাব্দীর চেয়ে ভিন্ন। একুশ শতকের শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে চিন্তা করা হয় একজন effective learner হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবছর ফ্রেরুয়ারী মাসে আমি এটুআই প্রোগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এর উদ্যোগে “শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সমাধানভিত্তিক শিখন ও গাঠনিক মূল্যায়ন” এর উপর একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করি। জানতে পারি আমার চতুর্থ শ্রেণির ছোট্ট ছোট্ট শিক্ষার্থীরা যারা ভালোভাবে খাবার নিয়ে খেতে পারে না, তারা নাকি সমাজ পরিবর্তনে ভুমিকা রাখবে। এটাও কী সম্ভব ? অবিশ্বাস্য ঘটনা! সেখান থেকে একটি পরিকল্পনা নিয়ে বিদ্যালয়ে আসি। বিদ্যালয়ে সকল শিক্ষকদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করি। এরপর সমস্যা সমাধান ভিত্তিক শিখন প্রজেক্টের কর্ম পরিকল্পনার প্রথম ধাপ ৪র্থ শ্রেণির "মা"দের সাথে ছোট্ট একটা সচেতনতামুলক মতবিনিময়ের আয়োজন করি। বিষয়টি অভিভাবকদের মধ্যে খুবই আগ্রহের সৃষ্টি করে। কিছুটা চিন্তা,কিছুটা ভয় নিয়ে ৪র্থ শ্রেণীকক্ষে গেলাম। এরপর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। ছেলেমেয়েদের আগ্রহ, উৎসাহ আর উত্তেজনা দেখে মনটা আমার আনন্দে ভরে গেল। প্রত্যেকটি প্রজেক্টের জন্য তিনদিন তিনটি পিরিয়ড লেগেছিল আমার। এই শিখন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের প্রথমে আলাদা আলাদা দলে ভাগ করে কিছু পরিকল্পিত কাজ দেওয়া হয়। এরপর সমস্যা সমাধান ভিওিক কাজগুলো সম্পাদন করতে তারা ক্লাসরুমে ও ক্লাসরুমের আশে পাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ , অনুসন্ধান বা পরীক্ষণ করে। সমস্যাটি সমাধান করার জন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেমন: মা-বাবা,ভাই-বোন,শিক্ষক, প্রতিবেশি,নিউজ পেপার ইত্যাদি থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। কোন কোন সময় তাদের এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছেও যাওয়া লাগতে পারে। এরপর সমস্যাটির কারণ চিহ্নিত করবে। সমস্যাটির ফলে কী ঘটছে, অর্থাৎ সমস্যার ফলাফল বের করবে। কিভাবে সমস্যাটির সমাধান করা যায় তা বের করবে । তারা দলে বসে মতামতগুলো বিশ্লেষন করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পরিকল্পনা করে তা সবার কাছে উপস্থাপনা করে । ক্ষেত্র বিশেষ সমস্যার সমাধান করে ফেলে। সবশেষে সমস্যা চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে সমাধান করা পর্যন্ত তারা যে কাজগুলো করেছে তা ধাপে ধাপে উপস্থাপন করে। গ্রুপের প্রত্যেককে উপস্থাপন করতে হয়েছে। কে কোন অংশ উপস্থাপন করবে তা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রথমদিন স্বাস্থ্যবিধি অধ্যায়ে ‘পানিবাহিত রোগ কিভাবে ছড়ায় ?’ সে বিষয়ের উপর ৪৫মিনিটের একটি ক্লাস নিয়েছি। তারপর প্রত্যেক দলকে ছুটির পর তাদের বাড়ি যাওয়ার পথে ও নিজ নিজ এলাকায় পানি দুষিত হওয়ার মাধ্যমগুলো সনাক্ত করতে বলেছি। শিক্ষার্থীদের এলাকার পানিদূষনের তথ্য সংগ্রহ করতে অবাক করার মতো কিছু তথ্য নিয়ে এসেছিল। পুরো গ্রামে ৩০টি কাঁচা টয়লেট আছে। যার কিছু পুকুর এবং নলকুপ সংলগ্ন। ৪টি পুকুরে মানুষ এবং গরু গোসল করে, কাপড় ধোয়া, বাসন পরিষ্কার একত্রে হয়। যে কারনে গ্রামে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পানিবাহিত রোগ বেশি। "সমস্যা-সমাধান ভিত্তিক শিখন ও গাঠনিক মূল্যায়ন" এর পাইলটিং কাজের প্রদর্শনী ২০/০৭/২০১৯ইং তারিখ ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।যেখানে প্রতিফলিত হয়েছে, চারটি প্রজেক্টের ফলাফল, বাচ্চাদের শিখন এবং পরিবর্তন গুলো। এখানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনাব মোঃ গিয়াস উদ্দীন আহমেদ স্যার অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়,জনাব একেএম রিয়াজুল হাসান স্যার , সদস্য, প্রাথমিক শিক্ষাক্রম, এনসিটিবি, বিশেষ অতিথি জনাব মোঃ আবুল কালাম আজাদ স্যার বিভাগীয় উপ পরিচালক,রাজশাহী বিভাগ, জনাব মো: আব্দুস সালাম স্যার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রাজশাহী, জনাব মোঃ গোফরান হালিম স্যার,সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, রাজশাহী, জনাব অঞ্জনা সরকার ম্যাম সুপার ,রাজশাহী পিটিআই, জনাব মোঃ ওলিউজ্জামান স্যার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুঠিয়া, রাজশাহী, জনাব মো মীর মামুনুর রহমান স্যার , উপজেলা শিক্ষা অফিসার পুঠিয়া রাজশাহী, শেফালী ম্যাডাম। আরো উপস্থিত ছিলেন a2i কর্মকর্তা আমার শ্রদ্ধেয় জনাব ফারুক আহমেদ স্যার, জনাব আফজাল হোসেন সারোয়ার স্যার, মারুফ স্যার এবং আমার খুবই প্রিয় সাবিহা ম্যাম। উক্ত প্রজেক্ট ফেয়ারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুঠিয়া, রাজশাহী স্যার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরে সাথে সাথে ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। কিছুদিন আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানতে পেয়েছি ধাদাশ গ্রামে কয়েকটি স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট দেয়া হয়েছে। মনে করি এর পুরো কৃতিত্ব আমার শিক্ষার্থীদের। সমাজের সমস্যা সমাধানে তারা যে ভুমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে তার জন্য শিক্ষক হিসেবে আমি খুব গর্ব বোধ করছি।