উপাধ্যক্ষ
০৫ এপ্রিল, ২০২০ ১০:৪৭ অপরাহ্ণ
সাবান কীভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে ধবংস করে ?
করোনাভাইরাস গোত্রের একটি নতুন সদস্য হচ্ছে “সেভার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস-২ (ভয়াবহ তীব্র শ্বাসতন্ত্র লক্ষণ করোনাভাইরাস-২)”,সংক্ষেপে এসএআরএস-কোভি-২ যা পূর্বে সাময়িকভাবে “২০১৯ নোভেল করোনাভাইরাস” নামে পরিচিত ছিল। এটি ২০১৯ সালে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম সনাক্ত হয় । ১১ ফেব্রুয়ারি,২০২০ তারিখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগের নামকরন করে করোনাভাইরাস ডিজিস -১৯ ,সংক্ষেপে কোভিড-১৯ (COVID-19) এবং উক্ত সংস্থা ১১ মার্চ, ২০২০ তারিখে একে প্যানডেমিক বা বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে।
ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে এবং দূষিত যে কোনো বস্তুর উপরিভাগ থেকে ছড়ায়। যে কোনো বস্তুর ওপর এটি ৭২ ঘন্টা টিকে থাকতে পারে। তবে সাধারণ জীবাণুনাশকও একে মারতে পারে। অতএব, জনসমাগম এড়াতে হবে,ঘন ঘন সাবান-পানি (ক্ষারযুক্ত) বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার (৬০-৯৫ শতাংশ এলকোহলযুক্ত) হাত দিয়ে ধুতে হবে এবং হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ কনুই ঢেকে রাখতে হবে বা টিস্যু ব্যবহার করে তা ঢাকনাসহ বিনে ফেলতে হবে। অতএব, আইসোলেশন ও হোম কোয়ারেন্টাইন ব্যক্তিসহ সর্ব সাধারণের সাবান-পানি (ক্ষারযুক্ত) ব্যবহার খুবই জরুরী।
কোভিড-১৯ ভাইরাস অকোষীয় প্রাণি, যা প্রোটিন, গ্লাইকোপ্রোটিন ও লিপিড ( পূর্বের হোস্ট কোষ থেকে ধারকৃত) আবরণ এবং রাইবোনিউক্লিক এসিড (আরএনএ) নিয়ে গঠিত । গ্লাইকোপ্রোটিনগুলো যেমনঃএস (স্পাইক)প্রোটিন, এম (মেমব্রেন) প্রোটিন, ই (ইনভেলাপ) প্রোটিন, এন (নিউক্লিউকেপসিড) প্রোটিন ইত্যাদি ভাইরাস দেহে নাট-বল্টু হিসেবে কাজ করে ।
প্রোটিন ও গ্লাইকোপ্রোটিন সাবান-পানির ক্ষার,যেমন- সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের উপস্থিতিতে আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে মনোস্যাকারাইড ও এমাইনো এসিডে পরিণত হয় । এমাইনো এসিড সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের সাথে সোডিয়াম এমাইনো এসিটেট নামক লবণ এবং লিপিড অণু সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে গ্লিসারল ও লবণ (সাবান অণু) উৎপন্ন করে। এভাবে ভাইরাস দেহের আবরণ সাবান-পানি ধবংস করে। একইভাবে রাইবোনিউক্লিক এসিড (আরএনএ) সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের উপস্থিতিতে আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে পিউরিন এবং পিরিমিডিন ক্ষারক, পেন্টোজ চিনি (বিটা-ডি রাইবোজ) এবং ফসফরিক এসিড উৎপন্ন করে । পিউরিন ও পিরিমিডিন ক্ষারকগুলো শক্তিশালী ক্ষারের উপস্থিতিতে এসিড হিসাবে কাজ করে এবং সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে প্রশমিত হয়। রাইবোজ চিনির হাইড্রক্সাইড মূলকগুলো পানির সাথে আন্তঃআণবিক হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে “অণুর সংবন্ধন” ঘটে, অর্থাৎ রাইবোজ চিনির সক্রিয়তা বিনষ্ট হয়। এভাবে সাবান-পানি কোভিড-১৯ ভাইরাস (এসএআরএস-কোভি-২)-কে ধবংস করতে পারে।
রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ নিম্নরূপঃ
ক্ষার
গ্লাইকোপ্রোটিন +পানি মনোস্যাকারাইড +প্রোটিন
ক্ষার
প্রোটিন +পানি এমাইনো এসিড
এমাইনো এসিড + সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড সোডিয়াম এমাইনো এসিটেট +পানি
লিপিড + সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড গ্লিসারল +লবণ
ক্ষার
রাইবোনিউক্লিক এসিড (আরএনএ) +পানি ক্ষারক (পিউরিন এবং পিরিমিডিন )+ বিটা-ডি রাইবোজ + ফসফরিক এসিড
ক্ষারক (পিউরিন এবং পিরিমিডিন )+ সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড লবণ+পানি
যে ক্ষারের PKb মান যত ছোট সে ক্ষার তত শক্তিশালী। কাপড় কাচা সাবানে শক্তিশালী ক্ষার, সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (PKb = - 5.6) বিদ্যমান। অতএব, হাতের নাগালে ও সহজলভ্য কাপড় কাচা সাবান দ্বারা ঘন ঘন হাত ধুয়ে কোভিড-১৯ ভাইরাস (এসএআরএস-কোভি-২)-কে প্রতিরোধ করা অধিক কার্যকর।
(মো. আবু হানিফ ভূইয়া)
উপাধ্যক্ষ
চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ
চান্দিনা, কুমিল্লা
ও
প্রভাষক, রসায়ন
অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজ
রামচন্দ্রপুর, মুরাদনগর, কুমিল্লা।
তারিখঃ৫/৪/২০২০