সহকারী প্রধান শিক্ষক
১১ এপ্রিল, ২০২০ ১১:১২ পূর্বাহ্ণ
সারমর্ম : নবম-দশম শ্রেণি । বাংলা দ্বিতীয় পত্র
সারমর্ম : নবম-দশম শ্রেণি । বাংলা দ্বিতীয় পত্র
১. কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক-অনলে তখনই পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে।
সারমর্ম : স্বর্গ ও নরক শুধু সুদূর কোনো পরলোকের ব্যাপার নয়। ইহলোকেও এর অস্তিত্ব বিদ্যমান। বিবেকহীন মানুষের নিষ্ঠুর অপকর্মের কারণে জীবন হয়ে ওঠে নরকতুল্য। আবার মানুষ ভালো কর্মের দ্বারাই এই পৃথিবীতে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করে।
২. কে তুমি খুঁজিছ জগদীশে ভাই আকাশ-পাতাল জুড়ে
কে তুমি ফিরিছ বনে জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ,
বুকের মাণিক বুকে ধরে তুমি খোঁজো তারে দেশ-দেশ,
সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে, তুমি আছো চোখ বুজে,
স্রষ্টার খোঁজে আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে।
ইচ্ছা অন্ধ। আঁখি খোলো, দেখ দর্পণে নিজ কায়া,
সবার মাঝে প্রকাশ তাঁহার সবার মাঝে তিনি,
আমারে দেখিয়া আমার অজানা জন্মদাতারে চিনি।
সারমর্ম : সমস্ত সৃষ্টির মধ্যেই সৃষ্টিকর্তার অবস্থান। স্রষ্টার সন্ধানে যারা বিশ্বময় চষে বেড়ায়, তারা ব্যর্থ হতে বাধ্য। স্রষ্টাকে খুঁজতে হয় জ্ঞান চক্ষুতে, চর্ম চক্ষুতে নয়। তাহলেই চারপাশের প্রকৃতিতে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রকাশমান হবে। বৈরাগ্য সাধনা করে তাঁকে পাওয়া যায় না।
৩. বিপদে মোরে রক্ষা করো,
এ নহে মোর প্রার্থনা
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখ তাপে-ব্যথিত চিত্তে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে, নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্চনা,
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা,
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
আমার ভার লাঘব করি নাই-বা দিলে সান্ত্বনা।
বহিতে পারি এমনি যেন হয়।
সারমর্ম : বিধাতার কাছে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য যেমন কোনো করুণা ভিক্ষা নয়, তেমনি দুঃখ-কষ্টকে জর্জরিত হলেও কোনো সান্ত্বনা বাক্যের প্রয়োজন নেই। এসব পরিস্থিতি উত্তরণে শুধু প্রয়োজন মানসিক দৃঢ়তা ও সংগ্রামশীলতা। সৃষ্টিকর্তা যেন মানুষকে দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-বঞ্চনা মোকাবেলা করার জন্য মানসিক শক্তি দান করেন, এটাই সবার কাম্য হওয়া উচিত।
৪. আসিতেছে শুভ দিন
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।
হাতুড়ি, শাবল গাইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দুইপাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরই গান।
তাদের ব্যথিত বঙ্গে পা ফেলে আসে নব উত্থান।
সারমর্ম : পেশিবহুল শ্রমজীবী মানুষের হাত ধরেই সব সৃষ্টির আয়োজন। আজকের মানবসভ্যতা তাদেরই ত্যাগের ফসল। নতুন দিনের শুভ সূচনায় যাদের কঠোর পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে এই সমাজ ও সভ্যতা, সেই মজুর, মুটে ও কুলিদের মনুষ্যত্বকে যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে। গাইতে হবে তাদের জয়গান।
৫. পরের মুখে শেখা বুলি পাখির মতো কেন বলিস?
পরের ভঙ্গি নকল করে নটের মতো কেন চলিস?
তোর নিজস্ব সর্বাঙ্গে তোর, দিলেন ধাতা আপন হাতে।
মুছে সেটুকু বাজে হলি, গৌরব কী বাড়ল তাতে?
আপনারে যে ভেঙেচুরে গড়তে চায় পরের ছাঁচে,
অলীক, ফাঁকি মেকি যে জন নামটা তার কদিন বাঁচে?
পরের চুরি ছেড়ে দিয়ে আপন মাঝে ডুবে যারে,
খাঁটি ধন যা সেথায় পাবি, আর কোথাও পাবি নারে।
সারমর্ম : যেকোনো ক্ষেত্রে পরের অনুকরণ করা নিন্দনীয় ও অমর্যাদাকর। কারণ তা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির সৃজনশীল বিকাশের সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়। স্রষ্টা প্রদত্ত নিজের যা কিছু রয়েছে, তা যত তুচ্ছ ও সাধারণই হোক না কেন, তার মাধ্যমে সাধনা সিদ্ধি লাভ করার মধ্যেই রয়েছে যথার্থ গৌরব। তাই অনুকরণের পথ পরিত্যাগ করে নিজের মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
৬. পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি,
এ জীবন-মন সকলি দাও,
তার মতো সুখ কোথাও কী আছে,
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণেও সুখ,
‘সুখ-সুখ’ করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে, যতই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে,
আসে নাই কেহ অবনী ’পরে
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
সারমর্ম : আপন স্বার্থের কথা না ভেবে পরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত। স্বীয় স্বার্থে বিভোর হয়ে সুখের আশা করলে জীবনে দুঃখই নেমে আসবে। কেন না আত্মকেন্দ্রিকতার মধ্যে সুখ নেই। প্রতিটি মানুষ একে-অন্যের কল্যাণে ব্রতী হবে, এটি মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য।
৭. দৈন্য যদি আসে, আসুক, লজ্জা কি বা তাহে,
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথি মুখের পানে যদি নাহি চাহে,
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্ররূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে,
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস,
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় ভেঙে পড়ে,
ঊর্ধ্বে দুই হাত বাড়াস।
সারমর্ম : বিপদ-আপদ ও বিপর্যয়ের সময় ভেঙে পড়লে চলবে না। এটি জীবনেরই অংশ। অভাব-অনটন, দুঃখ-দৈন্য ইত্যাদিকে জয় করে, ভয় ও লজ্জাকে বিসর্জন দিয়ে সামনে এগিয়ে চলায়ই জীবনের সার্থকতা। বস্তুত দৃঢ় মনোবল নিয়ে সব প্রতিকূলতা ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করার মধ্য দিয়েই জীবনের সাফল্য অর্জিত হয়।