Loading..

খবর-দার

১৪ এপ্রিল, ২০২০ ০৯:৪৭ অপরাহ্ণ

"রক্তদোষ "- মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক, হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়।


রক্তদোষ 

মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম

=======

ভিজিএফ-এর চাল চুরি হচ্ছে। চাল মিলছে স্থনীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ঘরে, গুদামে, মিলে ও আড়তে। চাল মিলেছে ঘরের ভিটিতে মাটির নিচে। পুকুরের পানির নিচে মিলছে টনে টনে চাল। ত্রাণের ট্রাক লুঠ করার ঘটনাও ঘটেছে।

বিদেশে মানুষ সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছে ব্ল্যাংক চেক, সোনাদানা, সর্বস্ব। আমাদের দেশে মৃত্যুর মুখোমুখী দাঁড়িয়ে মানুষ লুঠতরাজে মেতেছে সরকারের দেওয়া গরিবের চাল আর নিরন্নের ত্রাণ। করোনাকালে করুণাসিক্ত হওয়ার বদলে মানুষ মেতেছে মারামারিতে। টেঁটা-কোঁচ-বল্লম নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে। কী বীভৎসতা! প্রতিপক্ষের কর্তিত পা হাতে নিয়ে বিজয় মিছিল করেছে সেই স্লোগান দিয়ে যেটি ছিল ১৯৭১ সালের বিজয়মন্ত্র। ফরিদপুর এলাকায় করোনাকালে কিছু মানুষ বসিয়েছিলেন জুয়ার আড্ডা। এলাকার কিছু মানুষ বাধা দিতে গেলে সেটা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে ভাগ হয়ে যায় গ্রামবাসী। মারামারি করে অর্ধশত হাসপাতালে, একজন করেছেন অগস্তযাত্রা।

ডাক্তার-রোগীর আচরণ খবরের বিষয় হয়েছে বেশ। ডাক্তাররা একদিকে করোনা যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনার, আবার তারাই পলাতক। ডাক্তারদের বরখাস্ত করার ঘটনায় একজন ডাক্তার দুঃখ করে বলেছেন, এদেশে ডাক্তাদের চয়ে কাজের বুয়াদের সম্মান বেশি, তাদের কাজের নিরাপত্তা বেশি। কথাটা পুরোপুরি না হোক একটুখানিও সত্য হলে জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। খবর বেরিয়েছে যে, কুয়েত-বাংলাদেশ হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স-হেলথ টেকনোলজিস্টদের খাবার বন্ধ। করোনার ভয়ে রন্ধনকারী নাকি পালিয়ে গেছে, বাজেটও নাকি শেষ। এদিকে করোনা হাইড করে মিথ্যা রোগের কথা বলে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা, ঘুরছে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। ডাক্তার-নার্সদের ঠেলে দিচ্ছে ঝুঁকিতে। করোনা সন্দেহে একজন গর্ভবতী মা পাননি চিকিৎসা। ভ্যানের ওপর মারা যান তিনি। গ্রামের মাটিতে শেষ শয্যাও হয়নি তার। বাবার লাশ রেখে ভেগেছে সন্তানেরা। করোনা সন্দেহে ঢাকায় রেফার করার পর স্বজনরা হাসপাতালের চত্বরে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার পর মুখ থুবড়ে পড়ে মরে ছিল একটি মানবসন্তান।

সময়টা ইয়া নফসির। জীবনমৃ্ত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্ব। জীবনের নশ্বরতাবোধ আপনাকে আচ্ছন্ন করতে পারে কিন্তু সকলকে নয়। আপনি আমি সংখ্যায় নেহাৎ কম। মানুষ নামীয় অমানুষে দেশটা ভরে গেছে।

বাঙালি এমন একটা জাতি যার ধমনীতে বহু রক্তের মিশেল। রক্তের মধ্যেই মনে হয় ভেজাল আর দোষ। আর্য, দ্রাবিড়, মঙ্গোলীয়, আফ্রিকান, ইউরোপীয় বহু রক্তস্রোত মিশেছে বলে পুস্তকের বয়ান। আমার মনে হয় এ স্রোতে হায়েনা, কেউটে, শেয়াল  এবং সার মেয়র শোণিত ধারাও মিশেছে কোনোভাবে। নইলে এই সময়ে এসব ঘটনা ঘটে কীভাবে?

মনটা খারাপ হলো? তাহলে ষোলকলা পূরণ করতে পড়ুন, প্রথম আলোর রিপোর্ট ‘মা খালি কান্দে তুমি আইস’। একমুঠো ভাত চেয়ে পেয়েছিল বাবার হাতের চড়। চালচোর আর  ত্রাণখোরদের মুখে থু থু ছিটিয়ে অভিমানে চিরবিদায় নিয়েছে বেলকুচির কচি মেয়ে আফরোজা।