সহকারী প্রধান শিক্ষক
১৫ এপ্রিল, ২০২০ ০৭:৫৮ অপরাহ্ণ
মানব জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যই হলো মৃত্যু, যার জন্য একমাত্র যোগ্যতা হলো জন্মগ্রহণ করা।
আমরা সবাই ইমাম গাজ্জালী (র:) এর নাম শুনেছি।
একাদশ শতাব্দীতে মানুষকে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, ও পাপাচারমুক্ত করতে সত্য ও সুন্দরের ঝান্ডা নিয়ে দুনিয়ার জমিনকে আলোকিত করেছিলেন যে মহামানব তাঁর নাম ইমাম গাজ্জালী (র)।
ইরানের খোরাসান প্রদেশের তুস নগরীতে ১০৫৮ খৃষ্টাব্দে ইমাম গাজ্জালী (র:) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম আবু হামেদ মোহাম্মদ গাজ্জালী (র:)। সকলের কাছে তিনি ইমাম গাজ্জাীল (র:) নামেই পরিচিত।
ইসলামিক প্রজ্ঞা ছাড়াও তাঁর ছিল অংকশাস্ত্র ও জ্যোতিবিজ্ঞানে অসাধারণ পান্ডিত্য। বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন, যা সারা দুনিয়ায় ইংরেজীসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর অসংখ্য লেখা থেকে ছোট একটি গল্প বর্তমান সময়ের সাথে খুবই প্রাসঙ্গিক:
একদা এক ব্যক্তি জঙ্গলে হাটছিলেন, হঠাৎ দেখলেন এক সিংহ তার পিছু নিয়েছে। তিনি প্রাণভয়ে দৌড়াতে লাগলেন।
কিছুদূর গিয়ে একটি গর্ত দেখতে পেলেন, এবং বাঁচার জন্য ওর ভিতর ঝাঁপ দিলেন। নিচে পড়তে পড়তে তিনি একটি ঝুলন্ত দড়ি দেখে ধরে ফেললেন, এবং ঐ অবস্থায় ঝুলে রইলেন।
উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন কুয়ার মুখে সিংহটি তাকে খাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।
আর গর্তের ভিতরে নিচে চেয়ে দেখলেন বিশাল এক সাপ তাকে গিলে খাবার জন্য ওঁৎ পেতে আছে।
মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখতে পেলেন যে, একটি সাদা আর একটি কালো ইঁদুর তার ধরে রাখা দড়িটি কামড়ে কামড়ে আস্তে আস্তে ছিঁড়ে ফেলছে।
ঠিক এমন অবস্থায়, হঠাৎ তার সামনে গর্তের সাথে লাগোয়া গাছে একটা মৌচাক দেখতে পেলেন এবং মৌচাকের মধুতে আঙ্গুল ডুবিয়ে তা চেটে দেখলেন এবং মধু খেতে মনোনিবেশ করলেন।
সেই মধুর মিষ্টতা এতই বেশি ছিল যে, তিনি কিছু মুহূর্তের জন্য উপরের গর্জনরত সিংহ, নিচে ওঁৎ পেতে থাকা সাপ, আর দড়ি কাঁটা ইঁদুরদের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন।
রূপক অর্থে এই সিংহটি হচ্ছে আমাদের মৃত্যু---যা আমাদের জন্মের পর থেকেই সর্বক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
সেই সাপটি হচ্ছে কবর---যা আমাদের জন্য সর্বদাই অপেক্ষমান।
দড়িটি হচ্ছে আমাদের জীবন---যাকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকা।
সাদা ইঁদুর হল দিন আর কালো ইঁদুর হল রাত---যারা প্রতিনিয়ত জীবনের আয়ু কমিয়ে দিয়ে আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আর সেই মৌচাক হল দুনিয়া---যার সামান্য মিষ্টতা পেয়ে আমরা চতুর্মুখি সব বিপদের কথা ভুলে গেছি।
এই গল্পটি আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষনীয়।
মানব জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যই হলো মৃত্যু, যার জন্য একমাত্র যোগ্যতা হলো জন্মগ্রহণ করা।
একদিনের শিশু থেকে শতায়ু মানুষ সবাই মৃত্যুর উপযুক্ত।
সে করোনা ভাইরাসেই হউক বা অন্য কোন কিছুতে- মরতে একদিন হবেই। করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যু যেমন আমাদের কাছে চলে আসেনি তেমনি মৃত্যু কোনোদিনই আমাদের থেকে দূরে ছিলোনা। মূল কথা হলো: আমরা কি প্রস্তুত সেই মৃত্যুর জন্য???
ইমাম গাজ্জাীল (র:) সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতেন।
আল্লাহকে পাবার জন্য তিনি ঘরবাড়ি ছেড়েছেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন মৃত্যুই বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার পর্দাকে সরিয়ে দেয়।