Loading..

নেতৃত্বের গল্প

১৮ এপ্রিল, ২০২০ ০৯:১১ অপরাহ্ণ

শেখ হাসিনার বিস্ময়কর উত্থানের পিছনের গল্প
img
জাহান আরা

সহকারী প্রধান শিক্ষক

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন অনেক চড়াই-উতরাই এর মধ্য দিয়ে গেছে। তবে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে তিনটি বাঁক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম বাঁক অবশ্যই ১৯৮১ এর ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরা। দ্বিতীয় বাঁক হলো ২০০৪ এর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া। আর তৃতীয় বাঁক হলো, ২০০৮ সালে ১১ জুন দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কারান্তরীণ থেকে মুক্তি পাওয়া। শেখ হাসিনা রাজনীতিতে তাঁর তৃতীয় অধ্যায়ে সবচেয়ে বিচক্ষণ, দূরদর্শী এবং সফল। তাই শেখ হাসিনা সবসময়ই তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ যাঁরা তাঁকে কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তির লড়াইয়ে ভূমিকা রেখেছিল।

আজ বেগম জিয়ার চার মাসের কারাজীবনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই হাসিঠাট্টা করেন। তাঁরা বলেন, বিএনপি বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে একটা আন্দোলনও করতে পারেননি। কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই হলো সত্য যে, আওয়ামী লীগও শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য মনে রাখার মতোই কিছুই করতে পারেনি। বরং অনেক জাঁদরেল নেতারা শেখ হাসিনা যেন কোনো রাজনীতিতে ফিরে আসতে না পারেন সেই চেষ্টা করেছিলেন। তারপরও প্রয়াত জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা দলের সভাপতির নেতৃত্বের প্রতি অবিচল ছিলেন। তাঁদের কারণে আওয়ামী লীগ অনিবার্য ভাঙনের হাত থেকে মুক্তি পায়। অখণ্ড আওয়ামী লীগ পরোক্ষ ভাবে হলেও শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রয়াত জিল্লুর রহমানের পাশে ছিলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান খাঁন। শেখ হাসিনার মুক্তির ক্ষেত্রে আইনজীবীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সব মামলায় জামিন নিয়েই শেখ হাসিনা মুক্তি পেয়েছিলেন। অনেকে বলেন, শেখ হাসিনা প্যারোলে মুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো সব মামলায় জামিন পেয়েই তিনি মুক্তি পান। তাঁর জামিনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে নেপথ্যে সংলাপ শেখ হাসিনা মুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আর এই সংলাপের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন দু’জন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী।

শেখ হাসিনার মুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁর চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরাই প্রথম তাঁকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি তুলেছিলেন। আর এই চিকিৎসক টিমের নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। তার সঙ্গে ছিলেন ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ডা. শাহ আলম, ডা. শায়লা খাতুনসহ আরও কিছু চিকিৎসক।

আওয়ামী লীগ সভাপতির মুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল আন্তর্জাতিক চাপ। বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী শেখ হাসিনার মুক্তির ব্যাপারে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁর সাম্প্রতিক গ্রন্থে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন এ ব্যাপারে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও কথা বলেন। বাংলাদেশে সেনা সমর্থিত সরকারকেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশকে উত্তরণের জন্য ভারত চাপ দেয় মূলত: প্রণব মুখার্জীর কারণেই। আর প্রণব মুখার্জীকে এবং ভারতকে এই মতে আনতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শেখ রেহানা। শেখ রেহানা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক প্রভাব বলয়কে কাজে লাগানোর জন্য গুরুত্ব ভূমিকা পালন করেন। শেখ রেহানা সেসময় দিল্লীতে প্রণব মুখার্জী ছাড়াও সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশে সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের অন্যতম সমর্থক ছিল ভারত। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের বেশ কিছু বিষয়ে, বিশেষ করে খেলাফতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। শেখ রেহানা এই দূরত্ব প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজ শেখ হাসিনার বিস্ময়কর উত্থান, রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনেতায় আবির্ভূত হওয়ায় এঁদের অবদান অনস্বীকার্য। এঁদের কাছে শেখ হাসিনা ঋণী।