Loading..

খবর-দার

২১ এপ্রিল, ২০২০ ০৬:১০ অপরাহ্ণ

রোজায় স্বাস্থ্যকর ইফতার

রোজায় স্বাস্থ্যকর ইফতার

কদিন পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এদিকে এখন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে বাসায় থাকতে হচ্ছে। এবারের রমজান মাসের খাবারদাবার নিয়ে এখন থেকেই আমাদের ভাবতে হবে। পুষ্টিকর, অল্প উপাদান দিয়ে সহজে তৈরি করা যায়, এমন খাবারগুলো আমাদের বেছে নিতে হবে।

মনে রাখবেন, সব সময়ের মতো অবশ্যই এবার রোজায় গতানুগতিক রকমারি ইফতারি থেকে বিরত থাকতে হবে। শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারে, এমন সাধারণ খাবার দিয়ে ইফতার করতে হবে। সাশ্রয়ী সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে ঘরে বানানো ইফতার সব বয়সের জন্য উপযুক্ত

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য যেহেতু বাইরে যাওয়া মানা, তাই ইফতারের আয়োজন করতে প্রতিদিন বাজারে যাওয়া কোনোভাবে ঠিক হবে না। আবার পুষ্টি চাহিদা যাতে পূরণ হয়, তাই কিছু উপায়ে আমরা খাবার নির্বাচন করতে পারি।

ইফতারের সময় রকমারি খাবার বা ভাজাপোড়া অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। চিড়া, মুড়ি, রুটি, ভাত, নুডলস, সাগু, ওটস ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেট হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। প্রোটিন হিসেবে দুধ, দই, ডিম, ডাল মাংস দিয়ে তৈরি কোনো খাবার গ্রহণ করতে পারেন। এমনভাবে খাবার তৈরি করতে হবে, যেন খাবারটি নিজেই একটা সুষম খাবার (ব্যালান্স মিল) হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ একটা খাবার থেকেই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ফ্যাট একসঙ্গে পাওয়া যায়। যেমন সবজি খিচুড়ি, যাতে ডাল, তেল, চাল, সবজিসব থাকে। এটি অনেক স্বাস্থ্যকর খাবার। আবার একইভাবে ডিম, তেল সবজি দিয়ে বানানো নুডলস, যা থেকে সহজে সব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। ইফতারে আপনি চাইলে ভাত বা রুটির সঙ্গে সবজি মাংস অথবা ডাল বা ডিম খেলেই কিন্তু সব রকম পুষ্টি উপাদান পাবেন। এতে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস অনেকটাই প্রতিরোধ হবে। তাই ইফতার আয়োজনে রকমারি ভাজাপোড়া খাবার না বানিয়ে এমন কিছু তৈরি করুন, যা শরীরের জন্যও উপকারী। ছাড়া চিড়া, দই কলা কিন্তু পুষ্টির ভারসাম্য ঠিক রাখে। পাউরুটির মধ্যে সবজি মাংস বা মাছ দিয়ে স্যান্ডউইচ থেকেও সব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। রকম একটা খাবার তার সঙ্গে দুটো খেজুর বা যেকোনো ফল একটা স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করলেই ইফতার অনেক স্বাস্থ্যকর হতে পারে।

স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে লেবুর শরবত, তোকমার শরবত, ঘরে তৈরি ফলের রস পান করতে পারেন। মনে রাখবেন, সারা দিন রোজা রাখার পর শরীর যাতে কোনোভাবেই পানিশূন্য (ডিহাইড্রেটেড) না হয়, ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাই ইফতার থেকে সাহ্‌রি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

সুস্বাস্থ্য বিবেচনায় সব সময়ই হালকা খাবার রাতে খেলে তা শরীরের জন্য ভালো। কারণে সাহ্‌রি ভালোমতো করা যায়। এতে পেটের কোনো সমস্যা হয় না, এমনকি রোজায় ওজন বাড়ে না তেমন। এই সময় সবজি স্যুপ, দুধের সঙ্গে মুড়ি, চিড়া, দই বা ডাল রুটি অর্থাৎ এমন একটা খাবার খেতে হবে, যা থেকে পরিমিত কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন পাওয়া যায়।

এতে শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভালোভাবে রোজা রাখা যায়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়টা রোজা রাখার ক্ষেত্রে একটু ধৈর্যশীল হতে হবে। অনেকের বাড়িতে এখন সহযোগী নেই। তাই বাড়ির সবাই মিলে কাজ করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ইফতারি বা অন্যান্য খাবার তৈরি না করে সাধারণ সহজ উপায়ে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সঠিক ঘুম রোজার সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। যেহেতু সাহ্‌রি খেতে হয় এবং খাবারের সময়সূচি পরিবর্তন হয়, তাই এই সময় রাত জাগা অস্বাস্থ্যকর।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হাত ধোয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাই ইফতারি, রাতের খাবার সাহ্‌রিতে শাকসবজি ফলমূল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি।

তামান্না চৌধুরি

লেখক: ঢাকার এভারকেয়ার হসপিটালের প্রধান পুষ্টিবিদ