Loading..

ম্যাগাজিন

০৮ মে, ২০২০ ০৫:০৮ অপরাহ্ণ

আমেরিকার অর্থনীতির মৃত্যুযাত্রা।

গত সপ্তাহেই আমেরিকায় বেকারত্ব ৭০ লাখে পৌঁছেছে। আমরা একটা অর্থনীতির মৃত্যুদৃশ্য দেখছি। আমেরিকার ইতিহাসের এর কাছাকাছিও কোনো নজির নেই। কারণ, সরকারের যা করার ছিল, তা করা হয়নি। নজিরবিহীন সংকটে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া দরকার। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেস ও প্রেসিডেন্ট এমন এক প্রণোদনা বিল পাস করেছেন, দরকারের তুলনায় তা খুবই সামান্য। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের এটাই প্রথম কারণ।

আসুন একটা ছোট অঙ্ক কষা যাক। বার্ষিক ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কিন অর্থনীতি। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই হলো ক্ষুদ্র ব্যবসা। ব্যবসাকে মদদ দেওয়ার জন্য কী পরিমাণ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে? মাত্র ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এটা হলো সমগ্র অর্থনীতির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রণোদনার যে ভাগটুকু ব্যবসায় মদদ দেওয়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, তা দিয়ে অর্থনীতি মাত্র এক সপ্তাহ চলতে পারবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বৃহত্তম সংকটে মাত্র এক সপ্তাহের নিদান? সংকটটা এখানেই।

অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে আছে এক সপ্তাহের অনেক বেশি দিন ধরে। স্বাভাবিকতা ফিরতেও লাগবে কয়েক মাস। তত দিনে অনেক ব্যবসা মার খাবে। ছোট ব্যবসায়ীরাই বেশি। দ্বিতীয়ত, এই প্রণোদনা আস্থা ফেরানোর মতো দ্রুত, ব্যাপক ও সরল ছিল না। তাই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ছোট ব্যবসায়ীরা ভাবছেন, কীভাবে শুরু করবেন, কার কাছে হাত পাতবেন। শতবর্ষ আগে কেইনস দেখিয়ে গিয়েছিলেন, মন্দা কাটানোর মূল চাবি হলো আস্থা। সব ঠিক হয়ে যাবে মনে করলে আমরা টাকা মজুত করে কর্মচারীদের ছাঁটাইয়ে যাব না—মন্দার দুষ্টচক্র তখন ঘুরতে পারবে না। কিন্তু যে সামান্য সহায়তা আছে, কীভাবে তা পাব, তা–ও যদি বুঝতে না পারি…তাহলে সব ভরসাই গেল। দুষ্টচক্র কাজ করা শুরু করবে। এবং এটাই ঘটছে। কেন দুই সপ্তাহেই এক কোটি লোক বেকারত্বের খাতায় নাম লেখাল? কারণ, অর্থনীতিকে চালিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট মদদ ছিল না। ফলে মানুষ বিপর্যয় আর গোলকধাঁধায় প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা হারাচ্ছে। নিয়োগদাতারা কর্মী ছাঁটাই করছেন। সবার হয়তো তা করা লাগত না, কিন্তু ভরসার অভাবে তাঁরা আর কোনো বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন না।

এর মধ্যে সংবাদমাধ্যম জোর গলায় বলে যাচ্ছে, প্রত্যেক আমেরিকান ১ হাজার ২০০ ডলারের চেক পাচ্ছে। সত্য কিন্তু খুবই আলাদা। এর জন্য অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে। বাস্তবে ৯০ ভাগ আমেরিকান কিছু পেলেও বাকি ১০ ভাগ সামান্যই পাবে। ব্যবসায়ীদের দিক থেকে আরেকটা অঙ্ক কষা যাক। ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ পরিবার। সবাইকে সমান ভাগ করে দিলে প্রতিটি পরিবার বার্ষিক দেড় লাখ ডলার সৃষ্টি করে। আসলে তো আমেরিকানরা অত ধনী না। মাঝামাঝি আয় বার্ষিক ৬০ হাজার ডলার। কারণ, ধনীরা অর্থনীতির বাকি অর্ধেকের মালিক। ৬০ হাজার ডলার বার্ষিক হলে সপ্তাহে ১ হাজার ১০০ ডলার। এর অর্থ, বহুলবন্দিত অর্থনৈতিক প্রণোদনা আসলে গড়পড়তা মার্কিনিদের এক সপ্তাহের আয়ের সমান। সুতরাং প্রণোদনা এতই ছোট যে তা এক সপ্তাহের ব্যবসা চালানোর মতো। সাধারণ মানুষের বেলায়ও তা এক সপ্তাহের জোগানের বেশি নয়। কিন্তু সেই এক সপ্তাহ তো পার হয়ে গেছে।

এখান থেকেই আসে তৃতীয় প্রশ্নটা। আরও কয়েক সপ্তাহের আগে প্রণোদনার টাকা হাতে আসছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসের বেশি। এবং যেসব শর্ত ধরা হয়েছে, অনেকের জন্য এটা অর্থহীন। কে জানে, কীভাবে ওই সব শর্ত পূরণ করে কত দিনে বরাদ্দটা মিলবে? প্রণোদনার ধরনও খুবই অস্পষ্ট। তত দিনে মানুষ ভরসা হারিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হবে। আতঙ্কিতরাই বেকারের খাতায় নাম লেখাচ্ছে।

করোনাভাইরাস আধুনিক অর্থনীতিবিনাশী ঘটনা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অর্থনৈতিক সমস্যা—কিছুই এর সমতুল্য নয়। সমাজের ২৫ ভাগ লোক হঠাৎ স্থায়ীভাবে কঠিন বেকারত্বে পতিত হলে কয়েক প্রজন্ম লাগে আগের অবস্থায় ফিরতে। অর্থনীতি ধ্বংস হলে সমাজও থাকবে না, গণতন্ত্রও উবে যাবে। উবে যাবে পরিবার, সম্পর্ক, সজ্জনতা ও আশা। অর্থনৈতিক বিপর্যয় বাকি সব বিপর্যয়ের জননী।

আর সবই হবে সরকার পর্যাপ্ত সাহায্য করেনি বলে। টাকা নেই কথাটা ঠিক নয়। অর্থ এক সামাজিক রূপকথা। সরকার চাইলে যত দিন দরকার তত দিন অর্থনীতিকে সাহায্য করতে পারে, ব্যবসা ও ব্যক্তিগত আয় দুটিই নিশ্চিত করতে পারে। প্রতি মাসেই চেক দিতে পারে মানুষকে। এর অর্থ এই নয় যে আমরা আর কারও কাছ থেকে ‘ধার’ করছি। আমরা আমাদেরই ধার দিচ্ছি। অর্থাৎ, সংকট ফুরিয়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আক্ষরিকভাবেই এই ঋণ মওকুফ করে দিতে পারে। সন্দেহ হলে চিন্তা করে দেখুন, সরকারি টাকার মালিক আসলে কে? উত্তর হলো, কেউ না। সরকার নিজের কাছ থেকে ধার নেয় যেহেতু, সেহেতু তা মওকুফও করে দিতে পারে।

না, মুদ্রাস্ফীতি হবে না। বরং যা বলা হলো তা করা না হলে মজুরি কমবে, দ্রব্যমূল্যও পড়ে যাবে। বিষয়টাকে একটা গর্ত ভরাট করার মতো ভাবুন। করোনাভাইরাস অর্থনীতির বুকের ওপর বিরাট গর্ত করেছে। হয় সরকার এটা ভরাট করবে, সুই–সুতা ধার করবে এবং কর্মসংস্থানে থাকা মানুষেরা সেলাই করবে। নাহলে কাপড়ের ছিদ্রের মতো এটা 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি