Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

০২ জুন, ২০২০ ০৬:২৩ অপরাহ্ণ

উদ্ভাবনের গল্প-০৩ " আলোর পথে যাত্রা" মোঃ সামছুল হোসেন

উদ্ভাবনের গল্প -০৩

 

"আলোর পথে যাত্রা"

                            মোঃ সামছুল হোসেন

 

স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক ছুটিতে। প্রক্সি ক্লাশ নেয়ার জন্য 8ম শ্রেণিতে একদিন গেলাম । জিজ্ঞেস করলাম পড়া কি ছিল শিক্ষার্থীরা জানাল “সালাত”। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করলাম সালাত আদায় কর? অনেকেই বলল নিয়মিত না। আমি বললাম লজ্জা বা ভয়ের কিছুই নেই। তোমরা ২ মিনিট ভাবো তারপর আমরা এক এক জন করে বলবো “ কেন আমরা সালাতে অনিয়ম করি?”

তারপর একজন শিক্ষার্থীকে কারন বলতে বললাম যে জানালো “ শয়তান আমাদের সালাত থেকে সরিয়ে রাখে”। এভাবে কয়েকজন বিভিন্ন কারন বলার পর একজন শিক্ষার্থী জানালো স্যার নামাজে মাঝে মাঝে নিয়মিত হলেও কেন জানি মনোযোগ দিয়ে নামাজ পড়তে পারি না। সে আরো উল্টো প্রশ্ন করে বসলো স্যার “কেন আমাদের নামাজে মন বসে না?”

এর ওনেক গুলো কারন রয়েছে। তবে আমার কাছে সবচেয়ে সহজ উত্তর হল “ আমরা নামাজে কি পড়ছি বা সূরা গূলোতে কী বলছি তার অর্থ জানিনা । আমরা মুখস্থ কিছু সূরা আরবিতে পড়ে নামাজ শেষ করি। আর অর্থ জানিনা বলে ঐ কথা গুলো আমাদের অন্তরে বা নামাজে প্রভাব ফেলে না”। তাহলে আপাতত আমাদের কী করতে হবে ? নামাজ আমরা পড়বো বুজে শুনে। কীভাবে স্যার? আবার প্রশ্ন? আমার জবাব অন্তত আমরা নামজে যে সূরাগুলো পড়ি তার বাংলা অর্থ জানতে হবে। আর বাংলা অর্থ জেনে যখন আমরা নামাজ পড়বো তখন অবশ্যই নামাজে আমাদের মন বসবে ধীরে ধীরে।

সেদিনের মত ক্লাশ থেকে চলে আসলেও মনের মধ্যে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে লাগলো শিক্ষার্থীদের কিভাবে অন্তত ছোট ছোট সূরাগুলোর বাংলা অর্থ জানানো যায়। সৃষ্টিকর্তার কি অপার মহিমা। এর সপ্তাহখানেকের ভেতরে আমার প্রতিষ্টানের একজন দাতা সদস্য ও প্রতিষ্টানের সাবেক কৃতি শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী জনাব রেজওয়ান খাঁন আমাকে ফোন করে জানালেন “আল কোরআন ফাউন্ডেশন, ইউকে” এর উদ্যোগে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বাংলা অর্থ সহ “আল কোরআন” বিতরণ করে থাকেন। তিনি আমাদের প্রতিষ্টানে বাংলা অর্থ সহ “আল কোরআন” শরীফ বিতরণ করতে চান আমরা রাজী কি না ? তা জানানোর জন্য বললেন ?

আমি প্রথমে শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করলাম তাদের আগ্রহ আছে কি না। তাদের স্বতস্ফুর্ত আগ্রহ আমাকে সাহস যোগালো। ভারপ্রাপ্ত প্রতিষ্টান প্রধান জনাব রুহুল আমিন স্যার সহ ম্যনেজিং কমিটির সবার সাথে আলাপ করে তাদের রাজী করালাম। সেই সাথে উনাকে জানিয়ে দিলাম আমরা রাজী। তারপর ৬০০ কপি বাংলা অর্থ সহ “আল কোরআন” তিনি ইউকে থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসলেন। অবশেষে এক শুভ দিনে একটি ছোট্ট ঘরোয়া অনুষ্টান করে সকল শিক্ষক,শিক্ষার্থী, কিছু অবিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিলাম 580 কপি।

মজার বিষয় হল ভিন্নধর্মী ৪ জন শিক্ষার্থীও বাংলা অর্থ সহ “আল কোরআন” নেয়ার জন্য খুবই অনুরুধ করতে লাগলো। সর্বোচ্চ আদবের সাথে রাখতে হবে এই শর্তে তাদেরকেও দিলাম।

আমি মনে করি, যেকোন ধর্ম গ্রন্থই হোক না কেন তা যেন অর্থ জেনে বুজে শুনে পড়া হয়। তাহলে যে যে ধর্মেরই হোক না কেন তার তার ধর্ম তাকে একজন ভালো মানুষ হতে সাহায্য করবে। কেননা কোন ধর্মই বলে না “ তুমি চুরি কর, মিথ্যা বল, অন্যের হক নষ্ট কর”।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি  সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি, তারপর যুক্তরাজ্য প্রবাসী জনাব রেজওয়ান খাঁন ও “আল কোরআন ফাউন্ডেশন,ইউকে” আমার সকল শিক্ষার্থী,শিক্ষক, অভিবাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যবৃন্দের প্রতি যারা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাকে সফল ভাবে এই মহান কাজ শেষ করতে নিঃস্বার্থ ভাবে সহযোগীতা করেছেন । 

আমি আমাদের বাংলা অর্থ সহ “আল কোরআন” বিতরনের ব্যবস্থা করে আমার শিক্ষার্থীদের এক নতুন “ আলোর পথে যাত্রা ” করালাম। যদি তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হয় তবেই আমার এই পরিশ্রম সার্থক হবে।