Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

০৪ জুন, ২০২০ ০৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

উপকারী সবজি কাঁকরোল

উপকারী সবজি কাঁকরোল

মৌসুমি ফল ও সবজি থেকে যদি আমাদের দৈনিক পুষ্টি এবং বিভিন্ন রোগের পথ্যের চাহিদা পূরণ হয়ে যায় তাহলে আমরা বিভিন্ন রোগে কম আক্রান্ত হব। এমন অনেক মৌসুমি ফল ও সবজি আছে যা খেলেও উপকারিতাগুলো আমরা জানি না। তাই এসবের গুণাগুণগুলো জেনে-বুঝে খেলে অনেক রোগাক্রান্ত অবস্থায়ও ভালো থাকতে পারব।

 

মৌসুমের সবজিগুলোর মধ্যে কাঁকরোল অন্যতম। যদিও এ সবজি অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না; কিন্তু সারা গায়ে কাঁটাযুক্ত এ সবজির বিস্ময়কর পুষ্টিগুণাগুণ ও উপকারিতার কথা বিভিন্ন গবেষণায় বারবার উঠে এসেছে। কারণ এর পুষ্টিগুণাগুণের পাশাপাশি অনেক ভেষজ গুণাগুণও আছে, যা আমাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য অসম্ভব উপকারী।

 

জেনে অবাক হবেন, কাঁকরোলের গাছ থেকে শুরু করে পাতা, শেকড়, ফল ও বীজ সবকিছুই আমাদের দেহের জন্য উপকারী। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ আছে। বিভিন্ন খনিজপদার্থ যেমন- আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম ছাড়াও এটি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্রোমিয়ামের ভালো উৎস। এতে আরও থাকে ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, লুটেইন, জিয়াজেন্থিন যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কাঁকরোলে টমেটোর চেয়ে ৭০ গুণ বেশি লাইকোপিন থাকে, গাজরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি বিটা ক্যারোটিন থাকে এবং ভুট্টার চেয়ে ৪০ গুণ বেশি জিয়াজেন্থিন থাকে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কাঁকরোল রাখা ভালো। এবার কাঁকরোলের কিছু উপকারিতা জেনে নেই-

1। ওজন কমাতেঃ

এতে কমলা-লেবু থেকে ৪০ শতাংশ বেশি ভিটামিন ‘সি’ থাকে। ভিটামিন ‘সি’ শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং এটি লো ক্যালরির সবজি। ১০০ গ্রাম কাঁকরোলে মাত্র ১৭ ক্যালরি থাকে। তাই ওজন কমাতে অবশ্যই কাঁকরোল খেতে পারেন। হজম শক্তিও বাড়ায় এটি।

২। তারুণ্য ধরে রাখেঃ

কোষের কাজকে উদ্দীপিত করে এবং স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে ত্বকের বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করতে সাহায্য করে কাঁকরোল। কারণ এতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভনয়েড। যেমন- বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন, লুটেইন, জিয়াজেন্থিন ওকোলাজেন থাকে যা অ্যান্টি অ্যাজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে; ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তেও বাধা দেয়। কাঁকরোলের জুস খেলে ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর হতে সাহায্য করে।

৩। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ

কাঁকরোলের রয়েছে হাইপোগ্লাইসেমিক গুণাগুণ। এটি অগ্নাশয়ের বিটাসেলকে সুরক্ষিত রাখে ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ইন্সুলিন নিঃসরণ ও সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কম ক্যালরির ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার; তাই এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য ডায়াবেটিস কমাতে কাঁকরোল ভাজি করে বা চাইলে কচি কাঁকরোল জুস করেও খেতে পারেন।

৪। কিডনির পাথর নির্মূলেঃ

কিডনির পাথর নির্মূলেও কাঁকরোল খুবই উপকারী। ১ গ্লাস পানি বা দুধে ১০ গ্রাম কাঁকরোল বাটা মিশিয়ে নিয়মিত খেলে কিডনি ও ব্লাডারের পাথর দূর হয়।

৫। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়ঃ

কাঁকরোল হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিতে পারে। গবেষণায় জানা যায়, যাদের শরীরে লাইকোপিনের মাত্রা বেশি তাদের থেকে যাদের শরীরে এর মাত্রা কম থাকে, তাদের ৫০ শতাংশ বেশি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা রয়েছে। কাঁকরোল খুব সহজেই এ সমস্যা দূর করতে পারে। কারণ এটি শরীরের লাইকোপেনের মাত্রা ঠিক রাখতেও সাহায্য করে।

৬। ফ্যাটি লিভারের নিয়ন্ত্রণেঃ

আজকাল অনেকেই ফ্যাটি লিভার রোগে আক্তান্ত হচ্ছেন। কাঁকরোল নিয়মিত খাওয়ার ফলে ফ্যাটি লিভার রোগের ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া সম্ভব। যেহেতু কাঁকরোলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভনয়েড থাকে, যা দেহের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‌্যাডিকেল দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া এর রয়েছে অ্যান্টিলিপিড প্যারোক্সিডেটিভ গুণাগুণ, যা ফ্যাটের অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে। যার ফলে কাঁকরোল ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৭। খুসখুসে কাশির কমাতেঃ

মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ছোট বাচ্চাদেরও কাশির সমস্যা দেখা দেয়; তাই কুসুম গরম পানিতে ৩ গ্রাম কাঁকরোল পাউডার বা বাটা মিশিয়ে দিনে ৩ বার খেলে খুসখুসে কাশি ভালো হবে।

৮। স্নায়ুবিক ও জন্মগত ত্রুটি কমাতেঃ

গর্ভাবস্তায় অনেক মায়েদের স্নায়ুবিক ত্রুটি দেখা দেয়। কাঁকরোলে থাকা ভিটামিন ‘বি’ ও ‘সি’ স্নায়ুবিক ত্রুটি কমাতে সাহায্য করে। এতে ফোলেট ও গর্ভাবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পুষ্টি উপাদান থাকে; যা গর্ভকালীন বেশ ভালো একটি খাবার।

৯। ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ

দেহে ফ্রি র‌্যাডিকেলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ক্যান্সারের প্রধান কারণ। তাজা কাঁকরোলে ভিটামিন ‘সি’ অনেক বেশি থাকে যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। দেহের ফ্রি র‌্যাডিকেলের সংখ্যা কমাতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এতে নির্দিষ্ট একটি প্রোটিন থাকে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করতে পারে। এজন্য কাঁকরোলকে ‘স্বর্গীয় সবজি’ আখ্যা দেয়া হয়।

১০। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ

এটি উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তারা নিশ্চিন্তে কাঁকরোল খেতে পারেন।

১১। অ্যানেমিয়া প্রতিরোধেঃ

কাঁকরোলে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন ‘সি’ ও ফলিক এসিড থাকে; তাই এটি নিয়মিত খেলে অ্যানেমিয়ার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

১২। দৃষ্টিশক্তির বাড়াতেঃ

কাঁকরোলে চোখের জন্য উপকারী ভিটামিন, বিটাক্যারোটিন ও অন্যান্য উপাদান থাকে, যা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে এবং চোখের ছানি প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

১৩। বিষণ্ণতা কমাতেঃ

কাঁকরোলে সেলেনিয়াম, মিনারেল এবং ভিটামিন থাকে, যা নার্ভাস সিস্টেমের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। তাই এটি বিষণ্ণতা কমাতেও সাহায্য করে।

মৌসুমি সবজি যেমন সহজলভ্য থাকে, তেমনি দামেও কম থাকে। এখন চলছে কাঁকরোলের মৌসুম। তাই দৈনিক পুষ্টিচাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগের পথ্য হিসেবেও এ কাঁকরোল আমরা খেতে পারি। #

 

মোঃ মিজানুর রহমান মিজান

ICT4E অ্যাম্বাসেডর দিনাজপুর

            

সিনিয়র শিক্ষক(কম্পিউটার)

মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়

বিরামপুর, দিনাজপুর।

মোবাঃ ০১৭৪০৯৭৯৩৯৭.

[সুত্রঃ দৈঃ যুগান্তর]

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি