Loading..

প্রকাশনা

২৪ জুন, ২০২০ ০৮:৫৯ অপরাহ্ণ

পাল্টে গেছে চুরি বিদ্যা

পাল্টে গেছে চুরি বিদ্যা

এইচ,এম,মোবারক

মালিকের অবর্তমানে বা অসাক্ষাতে অপরের ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা কিংবা কোন মালামাল অসাধু উপায়ে সুকৌশলে হস্তগত বা স্থানান্তর করার নাম চুরি। আর এই কাজের সাথে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত থাকে তারা হলো চোর। তবে এখন আর চুরি করার জন্য প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কোন ওস্তাদের কাছে যেতে হয়না।

কারন আগের দিনের চোরের সাথে বর্তমানের চোরের কোন মিল বা বৈশিষ্ট্য কোনটায় খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ছোট বেলায় মা বাবার কাছে গল্প শুনেছি আগের দিনে নাকি পেশাদার কিছু চোর ছিল তারা প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। পর্যায় ক্রমে যার যার ওস্তাদের কাছে প্রশিক্ষন গ্রহন করার পর তারা কাজে নামতো। চোরের প্রকার ভেদও ছিল নানা রকমের । কর্মক্ষেত্রের প্রকারান্তরে চোরকে মোটামুটি ভাবে তিন ভাগে ভাগ করা হতো। যেমন: লুচনি চোর, সিধেল চোর, এবং গরু চোর।

এদের প্রত্যেকের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল যেমন, লুচনি চোর:- এরা হাতের কাছে যা পায় তাই চুরি করে। এদের নির্দিষ্ট কোন সময় ছিলনা কিবা দিন কিবা রাত। ওরা যে কোন সময় চুরি করতে অভ্যাস্থ ছিল। সিধেল চোর: এরা অনেক গভীর রাতে এলাকার সকল মানুষ ঘুমিয়ে পড়ার পর সাবল বা খুন্তি দিয়ে ঘরের দেয়াল অথবা মেঝে ছিদ্রকরে খুব সর্তকতার সাথে চুরি করতো বলে জানা যায়। চোরদের মধ্যে এরা খুব পরিশ্রমি।এরা আবার কখনও গরু চুরি করেনা। গরু চোর : চোর দের মধ্যে খানদানি এক জাতের চোর ছিল যারা নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব করতো, কেননা তারা যেনতেন কোন জিনিষ চুরি করতে অভ্যাস্থ নয়, তারা অনেক বড় মাপের চোর ছিল তাদেরকে বলা হতো গরু চোর।

আবার চুরির একটা ধারাবাহিকতা ছিল এমন যে, যারা চোর ছিল নিতান্তই গরীব এবং অসহায়। চুরি করা ছাড়া তাদের পেট চালানোর কোন উপায় ছিলনা। আর যাদের বাড়িতে চুরি করতো তারা ছিল ধনাঢ্য অর্থশালী, সম্পদশালী বা বড়লোক বা যারা অনেক টাকার মালিক।

আজ আমরা যারা শিক্ষকতা পেশায় আছি তারা আজও কথায় কথায় বলে থাকি যারা পড়া লেখায় অমনোযোগী তাদের, কিরে বড় হয়ে কি গরু চুরি করবি? আবার ধরুন কথায় আছে চোরের ঘরে নাকি দালান হয়না। এসবই আজ ভুলে ভরা পাল্টে যাচ্ছে সব। আমাদের বলা কথা আর চুরির ধরণ কোনটারই এখন আর মিল নেই।

প্রিয় পাঠক একটু লক্ষ করুন। আমি অগেই বলেছি আগের দিনে যারা চুরি করতো তারা ছিল নিতান্তই গরীব, অসহায়। তারা অনেকেই পেটের দায়ে চুরি করতো। আর যেখানে চুরি করতো তারা ছিল ধনী ও বড় লোক। যাদের সহ্য করার ক্ষমতা ছিল। কিন্তু আজ যারা চুরি করছে তারা কারা?

আর যাদের ধন সম্পদ বা টাকা পয়সা,পেটের খাবার চুরি করছে তারা কারা? অর্থাৎ এভাবেই ইতিহাস পাল্টে যাচ্ছে । আগের দিনে গরীব চুরি করতো বড়লোকদের সম্পদ আর এখন বড়লোক চুরি করছে গরীবদের সম্পদ।

অনেক আক্ষেপের সাথে আর একটু বলে রাখা যায় যে, বর্তমান চোরদের জাত, ধর্ম, রীতি নীতি নেই বলতে কিচ্ছু নেই। এরা লুচনি থেকে শুরু করে গরু পর্যন্ত যা পাই তাই চুরি করে। সেটা গরীব অসহায় কিংবা ফকিরের মাল হোক। এবার যদি দালানের কথা বলি তাহলে দেখা যাবে অনেক চোরের বাড়িতে দালান আছে এবং নিশ্চয় সেটা চুরি করা টাকা থেকে তৈরী। অতএব প্রবাদটিও তার রীতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ চোরের ঘরেও দালান ওঠে।

আসলে এগুলো কি আমাদের নিয়তির পরিহাস না কপালের দোষ ? এসবের কারন খুজতে গিয়ে একটা উদাহরণ মনে পড়ে গেল- একজন মুলা চোর, চুরি করার সময় ধরা পড়ে বলেছিল এটা আমার কোন দোষ নয় এটা ঝড়ের দোষ নিজেকে আটকাবার জন্য যেটা ধরছি সেটা উপড়ে আসছে।

তাহলে বর্তমানে যে চুরি গুলো হচ্ছে সেটাকে কি কলমের দোষ বলবো? আসলে মনে হয় তা নয় চোরের বীজ তো স্বাধীন বাংলাদেশের শুরু থেকেই ছিল। যে কারনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি ।

সেখান থেকেই চোরের ডাল পালা গজিয়ে তা আজ ডিজিটালে রুপ লাভ করেছে। সে জন্যে অনেক সুন্দর চেহারার এক ভদ্রলোক পরনে স্যুট, টাই পরা চলন্ত ট্রেনের ভিতরে যাত্রিদের সাবধান করতে গিয়ে বললেন” আপনারা চোর এবং পকেট মার হতে খুবই সাবধান থাকবেন” কেননা আজকাল আর চোরদের চেনার কোন উপায় নাই। বর্তমানে আমাদের মত শিক্ষিত ভদ্র লোকেরাও চুরি ছিনতাই করছে।

মনে করুন এই আপনার ব্যাগ, ট্রেন চলতি অবস্থায় এ.. এই ভাবে হাতে নিয়ে ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখা গেছে। দেখাতে গিয়ে তিনি নিজেই ব্যাগ হাতে নিয়ে লাফিয়ে পড়লেন। ব্যাগের মালিক ঘটনাটি ঘটে যাওয়া পর্যন্ত চেয়ে চেয়ে দেখলেন। ভদ্রলোক সেজে চুরি করার সুযোগ আছে বলেই আজ চুরি করতে যাওয়ার আগে আর গায়ে শরিষার তেল মালিশ করতে হচ্ছেনা। কোন ওস্তাদের কাছে প্রশিক্ষনও নিতে হচ্ছেনা।

কোন মতে চাই শুধু জনগনের সেবা করার সুযোগ । তা না হলে আজ কত নেতার বাড়িতে টাকা রাখার জায়গা নেই। বস্তা বস্তা টাকা আজ কুচিকুচি করে কেটে নদীর ধারে ফেলে দিচ্ছে। খাটের নিচে তেলের খনি, পুকুরে আর ঘরের মেঝেতে চালের খনি। মরনঘাতি করোনা ভাইরাসের কারনে চারিদিকে আজ মৃত্যুর মিছিল, গরীব দু:খী অসহায় মানুষ খেতে পাচ্ছেনা, খাবার অভাবে কেউ গলায় দড়ি দিয়ে মরছে, কেউবা শুন্য থালা হাতে পথের ধারে বসে চোখের জল ফেলছে। এ যেন এক নিদারুন কাহিনী।

অথচ সেই মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে আজ যারা অসহায় মানুষের মুখের খাবার কেড়ে খাচ্ছে তারা সত্যিই কি মানুষ? যদি মানুষ হয় তাহলে তারা কোন শ্রেণীর মানুষ? আর যদি চোর হয় তাহলে তারা কোন যাতের চোর? সেই শ্রেণী বিন্যাসের দায়িত্ব সম্মানিত পাঠক আপনাদের কাছে। আজ যাকেই আমরা সম্মান দিয়ে বিশ্সাস করে জনসেবার দায়িত্বভার অর্পণ করছি, সেই-ই আপনার আমার মত গরিব অসহায় মানুষের মুখের খাবার নির্দিধায় চুরি করে খাচ্ছে।

পদ হারাবার ভয় কিংবা কান ধরে উঠাবসা করার অথবা কনকনে শীতে পানিতে নেমে বসে থাকার ইতিহাসও কিন্তু কম নয় তার পরেও যদি….? চুরি করাটা যদি কেউ পেশা হিসাবে বেছে নিতে চান, তা হলে করবেন এতে আমাদের খুব বড় আপত্তি থাকার কথা নয়, কিন্তু মানুষের সেবা করার জন্য জণগনের কাছে হাতজোড় করে তাদের প্রতিনিধি হওয়ার কি প্রয়োজন ছিল?

অথচ আজ কিছুই মনে নেই সেই দিনের কথা। আর মনে থাকবেই বা কেন কজনই বা মনে রাখে? এসব কারনে আজ দেশে সৎ মানুষের রাজনীতি সংকট দেখা দিয়েছে।

পরিশেষে চোরদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলে রাখি যে, এই দিনই শেষ দিন নয়- আরো দিন আছে, এই কালই শেষ নয় পরকালও আছে!!

লেখক : এইচ, এম, মোবারক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও লেখক, রাজশাহীর বাগমারা ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি