Loading..

খবর-দার

২৯ জুন, ২০২০ ০৭:৩৬ অপরাহ্ণ

দেশে করোনাভাইরাস বিস্ফোরণের আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

     

দেশে করোনাভাইরাস বিস্ফোরণের আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা



 এবার ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঈদ উদ্যাপনে মানুষ দল বেঁধে ঢাকা ছাড়বে।

এছাড়া কোরবানির চাহিদা মেটাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে পশু বিক্রির অস্থায়ী হাট। দুটি পর্যায়ই করোনা সংক্রমণের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত। সোমবার (২৯ জুন) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাশেদ রাব্বি। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ঈদুল ফিতরের সময় অবাধে ঢাকা ছাড়ার মাধ্যমে বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। কাজেই এবার দুটি ধাপেই নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩০টি অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) ১৮টি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসবে ১২টি হাট।

এগুলোর সঙ্গে গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটেও চলবে কোরবানির পশু বেচাকেনা। ঢাকার বাইরের হাটগুলো ইজারার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এসব হাটে পশু কেনাবেচা করতে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হবে।

এতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ বা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। ফলে দেশে করোনার সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া কোরবানি উপলক্ষে অনেক মানুষ গ্রামে যাবে।

ফলে ঈদুল ফিতরের তুলনায় কোরবানিতে আরও ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে। চাঁদ ওঠা সাপেক্ষে আগামী মাসের শেষে ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কোরবানি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এখানে বাধা দেয়ার সুযোগ নেই। কোরবানি উপলক্ষে প্রতিবছর হাট বসে।

এবারের প্রেক্ষপট ভিন্ন হলেও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটছে না। তবে বর্তমান সময়ে যেন সামাজিক দূরত্ব মেনে হাট পরিচালিত হয়, সেখানে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কোরবানির পশুর হাটটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।

তাই হাট স্থাপনের ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ রাখতে হবে যেন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাট বসানো না হয়। হাটে যেন পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রাখা হয়।

নয়তো সংক্রমণ অনেক বেড়ে যেতে পারে। ঈদে বাড়ি যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোজার ঈদের সময়ে সরকার সবাইকে বাসায় থেকে ঈদ করতে অনুরোধ জানায়।

কিন্তু কেউ সেকথা শোনেনি। তখন যানবাহন বন্ধ ছিল, এখন বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের যানবাহন চালু রয়েছে।

তবে আমদের অনুরোধ থাকবে- যার যার অবস্থান থেকে ঈদ পালন করুন। যদি একান্তই গ্রামে যেতে হয়, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। নয়তো সংক্রমণ বাড়বে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়বে। তখন সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ১৪ জুন ১৪টি হাটের অস্থায়ী ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তর শাহজাহানপুরের মৈত্রী সংঘ মাঠ এলাকার খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচরের ইসলাম চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে দক্ষিণ বুড়িগঙ্গা বাঁধ পর্যন্ত খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট এলাকার খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারের আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠ সংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকা, আফতাবনগরের (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই, এফ, জি ও এইচ এবং সেকশন-১ ও ২ এর খালি জায়গা, আশুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা এবং লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের আশপাশের খালি জায়গা।

অন্যদিকে ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তরে এবার ১২টি স্থানে পশুর হাট বসানো হবে। সম্ভাব্য স্থানগুলো হল- ভাষানটেক রাস্তার নির্মাণাধীন অব্যবহৃত-পরিত্যক্ত অংশ এবং পাশের খালি জায়গা, ভাটারা সংলগ্ন এলাকা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা (আফতাবনগর), মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কের পাশে পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন থেকে উত্তরদিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা। ডিএনসিসিতে আরও একটি স্থান হাটের জন্য নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া দুই সিটিতে আরও ৬টি হাট স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে।

জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশুর হাট পরিচালনার জন্য একটি নির্দেশনা প্রণয়ন করা হয়েছে। যেটি অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেটি নিরীক্ষণ করে অনুমোদিত হলে হাট পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা যায়, করোনাকালীন হাট স্থাপনে যে নির্দেশনা খসড়া তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, হাট স্থাপনে অবশ্যই খোলামেলা জায়াগা নির্ধারণ করতে হবে। রাস্তার পাশে, অলিগলিতে হাট পরিচালনা করা যাবে না। হাটে গাদাগাদি করে পশু রাখা যাবে না, সেখানে পশু থেকে পশুতে এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে নির্দিষ্ট নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

হাটে প্রবেশের মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া হাটে যারা পশু কেনাবেচাসহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকবেন, তারাসহ সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের কনসালটেন্ট ও করোনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন  বলেন, কোরবানি উপলক্ষে পশুর হাট বসবে। সেখানে জনসমাগম হবে। আবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামমুখী হবে, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া-আসা করবে। এতে রোগটির সংক্রমণ আরও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়বে।

সেটি কতটা ছড়াবে, তা অনুমান করে বলা মুশকিল। তবে দেশে করোনা সংক্রমণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অবস্থাসম্পন্ন মুসলিমরা যদি কোরবানির অর্থ দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া এবং গ্রামে যাওয়া থেকে বিরত থকে, তাহলে ভয়াবহতা এড়ানো সম্ভব হবে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ঈদ-পরবর্তী পরিস্থিতি আমরা দেখেছি। ঈদে অবাধে বাড়িতে যাওয়া এবং ঢাকায় ফেরার কারণে দেশে করোনা সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়েছে। গ্রামেও নীরব সংক্রমণ ঘটেছে। কোরবানির ঈদে যদি হাট বসে এবং অবাধ যাতায়াত অব্যাহত থাকে, তাহলে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়বে।

উভয় প্রক্রিয়ায় সারা দেশে ব্যাপক হারে রোগটি ছড়াবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তিনি বলেন, যেহেতু কোরবানির হাট স্থানীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তাই তারা সারা দেশের পশুপালকারীদের কাছ থেকে পশু কিনে অনলাইনে বিক্রি করতে পারে। তাহলে হাটের ভিড় এড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি কোরবানির অর্থনীতি সচল থাকবে এবং সংক্রমণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোরবানি উপলক্ষে পশুর হাট বসছে। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ নেই।

কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে হাট কীভাবে পরিচালিত হবে, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে সেরকম প্রস্তাব প্রণয়ন করা হচ্ছে। সেটি চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে, যাতে সেটি মেনে হাট পরিচালনা করতে পারে।