Loading..

ম্যাগাজিন

২৫ জুলাই, ২০২০ ০৫:২৬ অপরাহ্ণ

মা - মেয়ে

মা, বলতে পারো সব গালিতে তোমাকে কেন জড়ানো হয়? সব বাজে ভাষার ব্যবহারে কেন তোমাকে জড়ানো হয়? না , না আমার কিছু হয়নি আমি ঠিক আছি। আজ আমার শ্বাশুড়ি ডাকছিলেন, রান্না ঘরের কাজ করে আসতে একটু দেরী হয়েছিল। অমনি তারা আমাকে জড়িইয়ে তোমাকে গালি দিল। এমন কিছু না মা , পানি এনে দেবার জন্য ডাকছিলেন।তোমার জামাই তো বলতেই লাগল , উনার মা- জন্য আমি কিছুই করি না, কেবল খাই। নিজের মা কে এক গ্লাস পানি ভরে দিতে পারলেন না, আর অন্যের মেয়ে কে গালিগালাজ করেন। তখন বলতে ইচ্ছা হয়, তোমার মা- জন্য অন্য একটা মেয়ে যা করছে তার বিপরীতে তুমি কি কর আমার মা- জন্য? জানো মা উনার ছেলে যখন বাজেভাবে কথা বলে, তখন উনি কিছুই বলেন না। তারা আমার শিক্ষা ভালো হয়নি বলে তোমাকে কত কথা শুনায়, তারা তো যোগ্য শিক্ষা পেয়েছে তাহলে তারা এমনভাবে কেন আচরণ করে।ভালো শিক্ষা পেয়েছে বলেই মনে হয় আজ তারা অন্যের মা কে নিয়ে এমন কথা বলে।আর আমার সবকিছুতেই দোষ।সবকিছু শেষে দোষী হিসাবে আমাকে দাড় করান। না গো মা ,আমি কিছুই বলি না। আমার মনে আছে তুমি বলেছ, মেয়েদের রাগ মানায় না। মেয়ে দুর্গা হবে ,লক্ষ্মী হবে কিন্তু চন্ডী হবে না।কেবল ভয় লাগে এই মানসিকতা নিয়েই বড় হচ্ছে না তো আমার ছেলেটা, সেও অন্য মেয়েদের সম্মান করা শিখবে না।তখন আবার দোষটা আমার ঘাড়েই আসবে। মা তোমার মনে আছে একদিন বান্ধবী বাসা থেকে ফিরতে দেরী হয়ে ছিল বলে সবাই তোমাকে কত কিছুই বলছিলেন।বাসার সবাই বলছিল, তোমার আদর আমাকে নষ্ট করে দিচ্ছে,এসব শিখেয়েছ আমাকে, আর কতকিছু। আমি কেবল দেখলাম তুমি চুপ হয়ে সব শুনে গেলে। কিন্তু কি অদ্ভুত না বল , সেই বছরে যখন আমি প্রথম এলাম তখন সবাই বাবার কত প্রশংসা করল,তখন আমি তোমার কেউ না। আমার সব দোষ, ব্যর্থতা কেবল তোমার কিন্তু আমার ভালো, সাফল্য কিছুই তোমার নয়। কেউ তখন দেখল না, বাবা পড়ার খোজ নিলেও রাত জেগে পাশে ছিলে তুমি। জানো মা এখন আর চুলার তাপ গায়ে লাগে না,কাটা হাতের জ্বালা কি বুঝি না।এখন আর তোমার মতো আমারও আর আসুখ বাধে না। তখন একটু কাজ করলেই তোমার মনে হতো আমার মেয়ে কতকিছুই করছে, আর এখন সারাদিন কাজ করলেও আমি কিছুই করি না। কেন বলত তখন এমন আগলে রাখলে? মা, তুমি তোমাকে আগলে রাখতে তাই না, তোমার রক্ত আর মাংসে তৈরি অন্য দেহে কে আগলে রাখতে- যেভাবে আমি এখন আমার মেয়ে কে আগলে রাখি। একদিন সব অলস, ফাঁকিবাজ, কাজচোর মেয়ে কর্মঠ মা হয়ে যায়।ঘুমকাতুর সেই মেয়েটাও একদিন নিদ্রাহীন মা হয়ে যায়।সে সারাদিন কাজ করেও অসুস্থ সন্তানের কাছে রাত জেগে থাকে। আড্ডা পাগল সেই মেয়েটা অফিসের পর চায়ের কাপে বন্ধুদের সাথে দেখা করার সময় পায় না মা ,সবার পছন্দের খাবার তো তুমি জানো , রান্না করে দাও। কেন তাহলে নিজের পছন্দের খাবারটা রান্না করো নাবাসার আর কারো পছন্দ না কিংবা খাবে না বলে তুমিও আর খাবে না ? বাশি খাবারটা কি কেবল তোমার থালেই যাবে? আমার যখনই তোমাকে প্রয়োজন হয়েছে তোমাকে পেয়েছি, তোমার প্রয়োজনে কি আমাকে কাছে পেয়েছিলে?? মা শোন ভালোবাসা নামক ভয়ানক অস্ত্র দিয়ে নিজেকে মেরে ফেলো না। নিজেকে একটু ভালোবাসো না , তোমার জন্য আমিই সব বলেই হয়তো তোমার কষ্টের তীব্রতা এতো নিরব

তোমার মেয়ে

বি দ্র্যঃ সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। লেখার প্রচেষ্টা মাত্র।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি