Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

৩১ জুলাই, ২০২০ ১২:২২ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের বনজ সম্পদ

বনভূমি প্রকৃতির দান। এই বন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধন করছে না, পরিবেশের ভারসাম্য রাসহ পুরো জীবজগত বেঁচে থাকার জন্য এ বন রেখে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানব জাতির আহার, বাসস্থান, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কর্মকান্ডের উৎস বনভূমি। পৃথিবীর ফুসফুস হচ্ছে এই বনাঞ্চল। বাতাসে ছেড়ে দেওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড গাছ শোষণ করছে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে মানুষসহ সমস্ত প্রাণীকুলকে বাঁচিয়ে রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি জরিপ থেকে জানা গেছে, ১ একর বনভূমি ৬টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং ৪টন অক্সিজেন বাতাসে ছেড়ে দেয়। যা ১৮জন মানুষের ১বছরের অক্সিজেনের চাহিদা পুরণ করে।
২১মার্চ আন্তর্জাতিক বন দিবস। বন সু-রায় ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির ল্েয সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি পালন করছে। বিশ্বব্যাপী শিল্প বিপ্লবের পর থেকে পরিবেশ দূষণ শুরু হয়। বর্তমানে পরিবেশ দূষণে পৃথিবীর প্রায় সব মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হতে চলেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রা করতে হলে জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বিশ্বের মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ১৫হাজার মিলিয়ন হেক্টর। মোট ভূমির ৭৮ভাগ চাষাবাদের অনুপযোগী, ২২ভাগ ভূমি চাষাবাদ যোগ্য। ২০০বছর আগেও বিশ্বের ৪৭ ভাগ এলাকা বন ভূমিতে পরিবেষ্টিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে ২৯ভাগ এলাকা বনভূমি রয়েছে। পরিবেশের ভারাসাম্য রার জন্য একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশে মোট বনভূমির পরিমান রয়েছে ১৭.৪ ভাগ। দেশের মোট আয়তন ১লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিঃ মিঃ। এর মধ্যে বনাঞ্চল ২৩ হাজার ৯’শ ৯৮ বর্গ কিঃ মিঃ। জনসংখ্যা চাহিদার তুলনায় বনভূমির পরিমাণ খুবই কম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়ানো-ছিটানো যে অল্প বনভূমি রয়েছে তাও মানুষ নির্বিচারে কেটে সাবাড় করছে। দেশের মানুষের কাঠ ও জ্বালানি কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে বনভূমি দ্রুত সংকুচিত হয়ে আসছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা পৃথিবী থেকে দ্রুত বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রতি মিনিটে পৃথিবী থেকে ১৯০ একর বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রয়োজনে পরিবেশ তথা বন ধ্বংস হবার মূল কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় ২ শত কোটি মানুষ প্রত্য ও পরোভাবে বনজ সম্পদের উপর ভিত্তি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। বন আমাদের প্রত্যাহিক রান্নাসহ বিভিন্ন জ্বালানি কাজের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। মানব জাতি ও জীব জগতের চিকিৎসা সেবায় ঔষধ তৈরীতে প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি উদ্ভিদ ও প্রাণি ব্যবহার হচ্ছে। বন আমাদের ভেষজ ঔষধ ও ঔষধ শিল্পের কাচামালের অন্যতম যোগানদাতা। যুক্তরাজ্যের এক গবেষনায় জানাগেছে, বিশ্বে ৬০ ভাগ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা নির্ভর করে বনজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর। পর্যটন শিল্পও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এই বন। উপকুলীয় বন বা ম্যানগ্রোভ বন জলোচ্ছাস, ঘুর্ণিষড়, সাইকোন, সুনামী সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকে বাঁধাগ্রস্থ করে দেশের উপকুলীয় জনপদকে রা করে থাকে।
বনাঞ্চল মানব জাতি ও জীব জগতের জন্য অপরিহার্য। বৃ তার সর্বাঙ্গ উজাড় করে দিচ্ছে মানব সভ্যতার কল্যানে। এই বন নানাভাবে মানব কল্যানে নিবেদিত হচ্ছে। আর মানব সন্তান তার ভোগ বিলাসে নির্বিচারে বৃ নিধন করে বন উজাড় করছে। পৃথিবী থেকে বিগত ৫০ বছরে ৫০ ভাগ বন উজাড় হয়েছে। প্রতি বছর পৃথিবী থেকে ৮.৩ মিলিয়ন হেক্টর বন উজাড় হচ্ছে। এ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে বাংলাদেশের আয়তনের ২০ গুন সম আয়তনের বনভূমি উজাড় হয়ে গেছে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি