Loading..

ম্যাগাজিন

০১ আগস্ট, ২০২০ ১২:৩৬ অপরাহ্ণ

“পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে করণীয়”

“পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে করণীয়”


বিগত কয়েক বছর যাবত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আউট একটা ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার পর এমনকি পুরস্কার ঘোষণা করার পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে একশ্রেণির মানুষ নামক ঘৃন্যকীট প্রশ্নপত্র আউট করে যাচ্ছে। আর এদের অপকর্মের দায় পড়ছে শিক্ষক, শিক্ষামন্ত্রণালয়, বিজি প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কোচিং সেন্টারের মালিক এমনকি খোদ শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের উপর। আমি একজন শিক্ষক আর যখন দেখি শিক্ষকদের কুলাঙ্গার বলে গালি দেওয়া হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই মনটা দুঃখভারাক্রান্ত হয়। প্রশ্নপত্র আউট করার জন্য কারা দায়ী আমি সে দিকে না গিয়ে আমার মতো ছা-পোষা শিক্ষকরা যাতে এই অপবাদ থেকে মুক্তি পেতে পারে সেজন্য ২/১টা প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করছি-


১। MCQ অংশ বাদ দিয়ে পূর্ণ নম্বরের ২ সেট শুধু মাত্র সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হবে। যার ভিতর ডিগ্রি (পাস) কোর্সের প্রশ্নপত্রের অনুরূপ ১০-১৫টি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন সংযুক্ত থাকতে পারে। যার উত্তর হবে এককথায় এবং নম্বর থাকবে ১ করে। ২ সেট প্রশ্নপত্রই কেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে কিন্তু ট্রাঙ্কের ভিতর কোন সেটে পরীক্ষা হবে সে নির্দেশনা থাকবে না। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে পরীক্ষা শুরুর ১ ঘন্টা পূর্বে মন্ত্রণালয় থেকে জানাতে হবে কোন সেটের পরীক্ষা হবে। জেলা প্রশাসক মহোদয় পরীক্ষা শুরু ২৫ মিনিট পূর্বে কেন্দ্র সচিবকে এই সংবাদটি জানিয়ে দিবেন অমুক সেট খুলুন। যেহেতু পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে স্বস্ব আসনে বসে যাবে তাই পরীক্ষার হলে প্রবেশের পূর্বে তারা কোন ক্রমেই জানতে পারবে না কোন সেটের পরীক্ষা হবে। MCQ অংশ না থাকলে রুমে রুমে প্রশ্নপত্র বণ্টন করতে তেমন একটা সময় লাগবে না।


২। প্যাকেটের ভিতর একত্রে খোলা অবস্থায় ২০০/১০০/৫০/২০/১০ এভাবে প্রশ্নপত্র না দিয়ে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর জন্য আলাদা আলাদা সিলগালা করা খামের ভিতর প্রশ্নপত্র ঢুকিয়ে যে কেন্দ্র যে বিষয়ে যত জন পরীক্ষার্থী তার থেকে ২/১ সিলগালা করা খাম বেশি সরবরাহ করা। এতে করে পরীক্ষা শুরু পূর্বে পরীক্ষার্থী ছাড়া আর কেহই প্রশ্নপত্র দেখতে পাবেন না। কারণ পরীক্ষার্থী নিজেই সিল গালা করা খাম খুলবে। পরীক্ষা শেষে অতিরিক্ত সিলগালা করা খাম এবং কোন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তার খাম অবিকৃত অবস্থায় কেন্দ্রে যে সরকারী কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকবেন তিনি সযতেœ জেলা প্রশাসক কিংবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের কাছে জমা দিবেন।


৩। সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হবার পর একটি বিষয়ের যেকোন একটি পত্রের প্রশ্নপত্র তৈরির জন্য অনেকজন শিক্ষক জড়িত থাকেন। একজন শিক্ষক যে বিষয়টি বছরের পর বছর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। যদি ঐ বিষয়ের প্রশ্নটি ঐ শিক্ষক একবার দেখেন, তাহলে হুবহু মনে রাখা কোন ব্যাপারই নয়। এর জন্য প্রশ্নপত্র স্ক্যানিং করে আনা, চুরি করে আনা কিংবা লিখে আনার কোন প্রয়োজনই হয় না। তাই আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে বিষয় এবং পত্রওয়ারী ৫০০ থেকে ১০০০টি উদ্দীপকসহ প্রশ্ন নিয়ে একটি প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করা। যেখানে যাবতীয় নির্দেশনা থাকবে। অর্থাৎ অধ্যায় থেকে কতটি প্রশ্ন হবে বা দেওয়া যাবে। পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের পর উক্ত প্রশ্ন ব্যাংক থেকে নির্দেশনা মোতাবেক উদ্দীপক/প্রশ্ন নিয়ে যেকোন একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি যেকোন বিষয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। এর পর পূর্ব প্রস্তাবনা ১নং কিংবা ২নং অনুসরণ করলেই চলবে। এ কাজের দায়িত্ব বোর্ডগুলোর উপর ভাগ করে দেয়া যেতে পারে।


তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত। তাই আমার সর্বশেষ প্রস্তাবনা হচ্ছে দেশের প্রথিতযশা আই.সি.টি বিশেজ্ঞদের নিয়ে “প্রশ্ন ফাঁস রোধ কমিটি” গঠন করে তাদের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে প্রশ্নপত্র আউট করা হয় তা রোধ করা সম্ভব।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি