ইন্সট্রাক্টর
০৮ আগস্ট, ২০২০ ০৬:১৭ অপরাহ্ণ
শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ভশীল করে গড়ে তোলার জন্য দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা প্রদানে করণীয়...। পলাশ মজুমদার।
২১ শতকের
বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা রোবটিক বুদ্ধিমত্তার দিকে
অগ্রসর হচ্ছে যাকে আমরা বলছি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। তাছাড়া বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের
কালো থাবা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। এই অবস্থার উত্তোরণ ঘটাতে হলে অর্থনৈতিক
কর্মকান্ড হতে হবে পরিকল্পিত ও দক্ষতা নির্ভর।
সরকারের
ভাবনায়…
বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের
মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার
ও মানোন্নয়নকে আগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইতোমধ্যে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে সামনে রেখে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার
শিক্ষার্থী ভর্তির হার ২০২০ সালের মধ্যে ২০% এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% এ উন্নীত করার
কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা অধিপ্তর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের
নতুন নতুন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, মাঠপর্যায়ের প্রতিষ্ঠানসমূহের অবকাঠামোর
উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
একই সাথে সরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ আয়োজন, ইন্ডাস্ট্রি-ইনস্টিটিউট
লিংকেজ স্থাপন, যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন, জব ফেয়ার ও স্কিলস কম্পিটিশনসহ নানাবিধ
কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক মানসম্পন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয় করে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের বিশাল
জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমূখী মানব সম্পদে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
কারিগরি বিভাগের সচিব
মহোদয়ের বক্তব্য…
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের প্রাক্তন সচিব জনাব মো. আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, “আগামী
বিশ্বে নতুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দক্ষতা। দক্ষতা না থাকলে প্রতিযোগিতাশীল বিশ্বে
কেউ টিকে থাকতে পারবে না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের উপযোগী
করে গড়ে তুলতে সরকার প্রতিটি শিক্ষার্থীকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে
চায়। এই লক্ষ্য অর্জনে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক
পর্যায়ের সাধারণ ধারার প্রতিটি স্কুল-মাদ্রাসায় প্রাক-বৃত্তি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু
করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে”।
কারিগরি বিভাগের গৃহীত
কর্মসূচী…
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সংগতি রেখে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অর্জিত
জ্ঞান ও দক্ষতার মান নির্ধারণ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে জাতীয় কারিগরি
ও বৃত্তিমূলক যোগ্যতা কাঠামো National
Training & Vocational Qualification Framework (NTVQF) প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক যোগ্যতা কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড-এ NTVQF
বিভাগ গঠন করা হয়েছে। এই বিভাগের কাজ হলো শিল্পখাতের চাহিদার
ভিত্তিতে বিভিন্ন দক্ষতা ভিত্তিক কাজের আদর্শ মান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সক্ষমতাভিত্তিক
প্রশিক্ষণ প্রদানের নিমিত্ত প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে Registered Training Organization (RTO) হিসেবে স্বীকৃত ও নিবন্ধন, বিভিন্ন উপায়ে অর্জিত দক্ষতা যাচাই ও সনদায়নের জন্য
পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি Recognition of
Prior Learning-(RPL) পদ্ধতির উন্নয়ন ও অ্যাসেসমেন্ট সেন্টারগুলোর
স্বীকৃতি ও নিবন্ধন এবং Competency based
Training and Assessment(CBTA) পদ্ধতি ব্যবহার করে দক্ষতা যাচাইপূর্বক
সনদ প্রদান। ইতোমধ্যে NTVQF এর আওতায় Occupations
Competency Based Training and Assessment (CBT&A) কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন মাঠ পর্যায়ের কারিগরি
প্রতিষ্ঠানসমূহে Registered
Training Organisation (RTO) স্থাপন করা হয়েছে। দক্ষতামান
নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থা (Skills Quality
Assurance System) শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয়ভাবে সংগতিপূর্ণ
উচ্চ মানদন্ড প্রবর্তন করতে নতুন মান নিশ্চিতকরণ পদ্ধতি প্রবর্তন ও দক্ষতা উন্নয়নে
শিল্প দক্ষতা কাউন্সিল (Industry Skill
Council- ISC) গঠন করা হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের
আওতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ…
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের
হিসাব মতে, মোট প্রতিষ্ঠান ৭৯২৫টি; যার মধ্যে সরকারি কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ-০১টি,
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-০৪টি, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট-৪৯টি, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ-১টি,
টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ-৬৪টি, এছাড়া সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে-৭০টি
যেখানে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও বিভিন্ন মেয়াদের কোর্স পরিচালিত হয়। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের
অধীনে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট রয়েছে-৪২টি। যাদের মধ্যে প্রায় প্রতিটি শিক্ষক
দেশ ও বিদেশে নানা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ লাভ করেছেন। এই
দক্ষতা সীমিত সংখ্যাক শিক্ষার্থী পাচ্ছে। তাই অভিজ্ঞ ও দক্ষতা সম্পন্ন এই শিক্ষকগণকে
বিশেষ করে এসএসসি(ভোকেশনাল) ও এসএসসি(ভোকেশনাল) লেভেলের শিক্ষকগণকে শিক্ষক বাতায়নে
অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। যাতে করে বাতায়নে কারিগরি এমপিও ও নন-এমপিও মিলে প্রায় ৬,৬৪৫টি
প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে এসএসসি (ভোকেশনাল)-৮৬০টি, এইচএসসি(বিএম)-৭৪৩টি, দাখিল ও আলিম
(বিএম)-২৩ এবং বেসরকারি অন্যান্য কারিগরি প্রতিষ্ঠান-৫০১৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এদের মধ্যে আমরা প্রায় সকলেই সকল
প্রকার কারিগরি প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত।
কিছু সংখ্যাক শিক্ষক
ব্যক্তি উদ্যোগে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের মাধ্যমে কিছু প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তারাই
মূলতঃ শিক্ষক বাতায়নের অ্যাম্বাসেডর। যা সর্বমোট ১৫ জন অ্যাম্বাসেডর। শিক্ষক বাতায়নের
তথ্য মতে,
এসএসসি (ভোকেশনাল)-১১ জন তাঁরা হলেন-
(১)
কুমিল্লার- পলাশ কান্তি মজুমদার, ইন্সট্রাক্টর, চাঁদপুর জনতা হাই স্কুল এন্ড কলেজ;
(২) টাইঙ্গালের- মোহাম্মদ মাসুদ রানা, ইন্সট্রাক্টর, কদমতলী হাসান পাবকিক
হাই স্কুল; (৩) পটুয়াখালীর- মোঃ সাইদুর রহমান, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, গলাচিপা সরকারি
মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়; (৪) পাটগ্রামের- মোঃ লুৎফর রহমান, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, পানবাড়ি
হাই স্কুল; (৫) খুলনার- সৌমিত্র বিশ্বাস, ডেমোনেস্ট্রেটর, ডুমুরিয়া এনজিসি এন্ড এনসিকে
হাই স্কুল; (৬) মোঃ রকুনুজ্জামান, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, সিংগারডাবড়ী হাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ;
(৭) মাদারীপুরের- মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক; কলকিনি পাইলট বালিকা উচ্চ
বিদ্যালয়; (৮) চট্টগ্রামের- সবুজ ভট্টাচার্য্য, ডেমোনেস্ট্রেটর, রাউজান আরয়মিত্রয় ইন্সটিটিউট;
(৯) রংপুরের- মোঃ
এরশাদুল হক; ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, আনন্দনগর এমএল হাই স্কুল; (১০) লালমনিরহাটের- মোঃ
রমজান আলী, সহকারি শিক্ষক, দুহুলী এসসি হাই স্কুল এন্ড কলেজ; (১১) সিরাজগঞ্জের- মোঃ
মনিরুল ইসলাম, সিনিয়র শিক্ষক, আজিমনগর কম্পিউটার কারিগরি স্কুল ও বানিজ্যিক কলেজ।
এইসএসসি (ভোকেশনাল)-০১ জন হলেন- কুমিল্লার- মোঃ নিজামুদ্দীন,
প্রভাষক, আফজাল খান টেকনিক্যাল এন্ড কমার্স কলেজ।
এইসএসসি (বিএম)-০৪ জন হলেন- (১) জয়পুরহাটের- মোঃ মামুনুর রশিদ, ডেমোনেষ্ট্রেটর,
বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট; (২) রাজশাহীর- মোঃ এনামুল হক, অধ্যক্ষ, ভেড়াপোরা টেকনিক্যাল
এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট; (৩) বাগেরহাটের- শ্যামল কুমার সাহা, প্রভাষক,
ফাকিরহাট শেখ হাসিনা টেকনিক্যাল কলেজ; (৪) বগুড়ার- মোঃ ওবায়দুর রহমান (সুমন), প্রভাষক,
সান্তাহার টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ।
শিক্ষক বাতায়নে এসএসসি
(ভোকেশনাল) সদস্য-৩৩১জন, এইচএসসি(ভোকেশনাল) সদস্য-৭৯জন, এইচএসসি(বিএম) সদস্য-১০৩জন
এবং এইচএসসি (ডিপ্লোমা ইন কর্মাস) সদস্য-১৫জন। সর্বমোট সদস্য= ৫২৮জন। যেখানে সারা দেশে
কারিগরি সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় দশ হাজারের কাছাকাছি। গড়ে ১০জন শিক্ষক হলে
প্রায় এক লক্ষ শিক্ষক রয়েছে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তাই বাতায়ন কর্তৃপক্ষের
প্রতি আকুল আবেদেন থাকবে সাধারণ ধারায় যেভাবে ৪,২৪৭৩৩ জন শিক্ষককে যেভাবে অনুপ্রাণিত
করা হয় সেভাবে যেন কারিগরি বিভাগের শিক্ষকদেরকে সেভাবে উৎসাহিত করে বাতায়নে অন্তর্ভূক্ত
করে বাতায়ন সমৃদ্ধ করা হয়। এবং কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষণ বিহীন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের
সুযোগ দিয়ে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ করে দিলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। অর্জিত হবে অর্থনীতির
কাঙ্খিত লক্ষ্য।
পলাশ কান্তি মজুমদার
বিএসসি ইঞ্জি.(টেক্সটাইল), এমএসসি(সিএসই), এম.এড
ইনস্ট্রাক্টর
চাঁদপুর জনতা হাই স্কুল এন্ড কলেজ
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা।
জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক (কারিগরি), জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৭
ও ২০১৯
লেখক, পুস্তক প্রণেতা ও গবেষক।
Link: https://www.youtube.com/watch?v=Bvehmh3wJnQ