Loading..

ম্যাগাজিন

২৩ আগস্ট, ২০২০ ১২:৪৭ অপরাহ্ণ

শিক্ষা কী এবং কেন? যতীন্দ্র মোহন দাশ,প্রধান শিক্ষক,শান্তিপুর সপ্রাবি,সুনামগঞ্জ সদর, সুনামগঞ্জ।

১                                                                               

শিক্ষা কী এবং কেন?

যতীন্দ্র মোহন দাশ

প্রধান শিক্ষক

শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

সুনামগঞ্জ সদর,সুনামগঞ্জ।

 

ইংরেজী Education শব্দের বাংলা রুপ শিক্ষা। এ Education শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীগণ নানামত প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে এ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Educare থেকে। Educare বলতে “To bring up” “To nourish” “To develop”এ সব বুঝায়। ভাবগত বিচারে একথা গুলো থেকে আমরা বুঝি, শিক্ষা ব্যাক্তিকে লালন করে, অন্য কথায় তাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে।

 Education শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কে অনেকে  Educare শব্দটির কথাও উল্লেখ করেন । আর  Educare বলতে বুঝানো হয়-“To draw out” “To lead outইত্যাদি। এ কথা গুলোর শাব্দিক অর্থ-“বের করে নিয়ে” অথবা ভিতরের জিনিসকে বাইরে আসার সুযোগ দেয়া। এই বের করার বিষয় হিসেবে তারা দেখেছেন মানুষের সুপ্ত সম্ভাবনাকে।

Education শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে তৃতীয় একটি মত প্রচলিত আছে। এ মতানুযায়ী Education শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Educatum থেকে। এ ল্যাটিন শব্দটি নির্দেশ করে শিক্ষাদানের কাজটিকে।

উপরোক্ত তিনটি শব্দের ব্যাখ্যা সূত্রে আমরা বাংলা শিক্ষা শব্দটির উৎপত্তি- খুঁজে নিব। সংস্কৃত ধাতু ‘শাস’ থেকে এসেছে শিক্ষা শব্দটি। শাস কথাটির অর্থ হচ্ছে-শাসন,নিয়ন্ত্রণ,নির্দেশ বা উপদেশ দান। শাব্দিক অর্থে শাস কথাটিতে একটি আরোপিত ব্যবস্থার ইঙ্গিত রয়েছে।

 

 

                                               ২

 

শিক্ষার আর একটি সমার্থক শদ হচ্ছে ‘বিদ্যা’। এ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘বিদ’ ধাতু থেকে। ‘বিদ’ বলতে জানা বা জ্ঞান আহরণ করা বুঝানো হয়। জানা বলতে শিক্ষার ব্যাপক ও বিচিত্র ক্ষেত্রকে নির্দেশ করা হয়েছে।

 

বিভিন্ন যুগে শিক্ষাবিদ ও দার্শনিকগণ শিক্ষাকে বিভিন্ন ভাবে বর্ননা করেছেন। এরিষ্টটল  বলেন –“সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করার নাম-ই শিক্ষা”Education is the creation of a sound mind in a sound body”.

প্লেটো বলেন- “শিক্ষা হচ্ছে সঠিক মুহুর্তে আনন্দ ও বেদনা অনুভব করতে পারার ক্ষমতা  বা শক্তি”।Education is the capacity to feel pleasure and pain in the right moment”

জীন জ্যাক রুশো বলেন-“শিক্ষা হচ্ছে শিশুর স্বতঃস্ফুর্ত আত্নবিকাশ” “Education  is childs development from withen.”

জোহান হেনরিক  পেস্তালৎসি বলেন-“শিক্ষা হচ্ছে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিসমূহের  স্বাভাবিক ,সুষম,ও প্রগতিশীল বিকাশ।“ ‘Education is natural harmonious and progressive development of mans innate power.’

ফেডারিক হার্বাট বলেন-“শিক্ষা হচ্ছে মানুষের নৈতিক চরিত্রের বিকাশ সাধন।“ “ Education is the development of moral character.’

জন ডিউই বলেন-“ক্রমাগত অভিজ্ঞতার পূনর্গঠনের মাধ্যমে জীবন যাপনের নামই শিক্ষা।“ ‘Education is the process of living through continuous reconstruction of experiences.”

শিক্ষা সম্পর্কে বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বলেন-“ সর্বোত্তম শিক্ষা হচ্ছে সেই শিক্ষা যা আমাদের কেবল তথ্যই পরিবেশন করেনা বরং অস্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য-আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।“ ‘The best Education is that which does not give us information but makes our life in harmony with all existence.’

                                      ৩

 

শিক্ষা কেন?:-

শিক্ষা হচ্ছে একটি মানবীয় প্রচেষ্টা যার কাজ মানুষকে নিয়েই এবং একান্তভাবে মানুষের জগৎকে ঘিরেই তা আবর্তিত। শিক্ষা জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে বিভিন্ন মূখী দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। শিক্ষা হচ্ছে জীবন ব্যাপী একটি প্রক্রিয়া। পবিত্র  মহাগ্রন্থ আল কোরআনের প্রথম বাণী ‘ইকরা’ অর্থাৎ ‘পড়’।

কোন বিষয়ে জ্ঞান,দক্ষতা, ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধন,সঠিক সময়ে আনন্দ ও বেদনার অনুভূতি প্রকাশের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যাক্তির বিকাশে নিবেদিত। এ বিকাশ ব্যক্তির সর্বোতমুখী ও পরিপূর্ণ বিকাশকে নির্দেশ করে। ব্যক্তিকে বাঞ্চিত তথা কল্যাণ  ধর্মী আচরণে উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে শিক্ষা। শিক্ষার মাধ্যমে আমরা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জন করি। এ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে সমস্ত কলাকৌশল আয়ত্ব করা একান্ত প্রয়োজন তা আমরা পেয়ে থাকি শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলী এবং প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের মাধ্যমে তাকে জীবন ও জগতের কল্যাণ সাধনের উপযোগী করে গড়ে তোলা শিক্ষার কাজ। শিক্ষার  প্রয়োজন কেন বা কোন কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন-স্ব-স্ব- ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহে ও মনীষীগণ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। “ হিন্দু,বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টধর্মে জ্ঞান অন্বেষণ করার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্বনবী  হযরত মুহাম্মদ  (সাঃ) বলেছেন- জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর জন্য ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। দার্শনিক প্লেটো’র মতে-‘মনের ও দেহের পরিপূর্ণ উন্নতি ও বিকাশ সাধনের জন্য  প্রয়োজনীয় সবকিছুই শিক্ষার উদ্দেশ্য বলে-পরিগণিত।’ সক্রেটিস এর মতে-“ সত্যের আবিষ্কার ও মিথ্যার অপনোদন হচ্ছে শিক্ষার উদ্দেশ্য।”হার্বাটের মতে-“ শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিশুর সভাবনা ও অনুরাগের পূর্ণ-বিকাশ এবং তার নৈতিক চরিত্রের আকাংখিত প্রকাশ। ফ্রেডারিক ফ্রোয়েবেল বলেন- “ শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে একটি সুন্দর,বিশ্বাসযোগ্য ও পবিত্র জীবনের উপলব্দি।” দার্শনিক ইকবাল বলেন- “আত্নশক্তি জাগরণই শিক্ষার লক্ষ্য”।

 

 

                                                    ৪

মানব জীবনে শিক্ষার প্রধান কাজ হচ্ছে ব্যক্তিকে ইস্পিত আচরণে উদ্বুদ্ধ করা। মানবীয়  পরিবেশ পরিবর্তনশীল। নিয়ত পরিবর্তনশীল এই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য তার প্রধান হাতিয়ার হলো শিক্ষা। শিক্ষাই ব্যক্তিকে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে। ব্যক্তির জীবন যাপন পদ্ধতিকে উন্নততর করা শিক্ষার একটি অন্যতম কাজ। মানুষের যে আচরণ তার অস্তিত্ব রক্ষা ও সার্থক জীবন যাপনের জন্য সহায়ক সে সব আচরণই শুধু পরিবেশের কাছ থেকে আমরা পাই। মানুষের উপর   পরিবেশের প্রভাব যেমন সুদূর প্রসারী পরিবেশের উপর মানুষের প্রভাব ও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। মানূষ পরিবেশের কাছে  আত্নসমর্পন না করে প্রয়োজন মত পরিবেশকে  নিয়ন্ত্রণ করে। যে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশে আদি মানুষ জন্মেছিলো আজ সে পরিবেশ নেই আর সে আদি মানুষেরাও নেই। মানুষের প্রচেষ্টার ফলে নতুন নতুন শহর,কল কারখানা ও পথ ঘাট তৈরি হচ্ছে। মানূষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে নতুন নতুন চিন্তা চেতনার আবির্ভাব ঘটেছে। ফলে মানুষের পাথেয় যে সোনার কাঠি তারই নাম শিক্ষা। শিক্ষার কাজ ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিবেশের সঙ্গতি বিধানে সহায়তা দান। বস্তুত ব্যক্তির এমন শিক্ষার প্রয়োজন যা দিয়ে সে অতীত অভিজ্ঞতার পুনর্বিনাসের মাধ্যমে সভ্যতার অগ্রগতির ধারাকে প্রবাহমান রাখতে পারে। কাজেই ব্যক্তিকে উন্নতর সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন, তাকে লালন করার যোগ্যতা ও ক্ষমতার অধিকারী করে তোলা শিক্ষার দায়িত্ব। ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের কল্যাণ সাধিত করে তোলা শিক্ষার দায়িত্ব। শিক্ষার দ্বারা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের কল্যাণ সাধিত হয়। ব্যক্তির জ্ঞানের বিকাশ,দক্ষতা অর্জন,আগ্রহ সৃষ্টিতে এবং মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে শিক্ষার ভূমিকা অনন্য।  

 

সহায়ক গ্রন্থ:

শিক্ষানীতি পরিচিতি: ড. শামসুল কবির ও আ,স,ম মুজাম্মিল হক ও মুহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম ।

শিক্ষার ইতিহাস: জ্যোৎস্না বিকাশ চৌধূরী ও মুহাম্মদ ইবনে ইনাম।   

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি