Loading..

প্রকাশনা

০৪ অক্টোবর, ২০২০ ১০:০৮ অপরাহ্ণ

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা- শিক্ষক পরিবারের ৩য় প্রজম্মের।

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা-শিক্ষক পরিবারের ৩য় প্রজম্মের

শিক্ষক পরিবারের ৩য় প্রজম্ম আমি।

শিক্ষকের নাতনী, শিক্ষকের মেয়ে ও নিজে শিক্ষক হয়ে বিশ্বের সকল শিক্ষক-ছাত্রকে জানাই শুভেচ্ছা।

দাদা ছিলেন দিঘলি উচ্চ বিদ্যালয় , সদর, লক্ষীপুর এর শিক্ষক। বাবা ছিলেন রূপাচরা সফিউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়, সদর, লক্ষীপুর এর শিক্ষক।

"আসছ মাষ্টরের(শিক্ষক) ঘরে, দেখবা টেকা(টাকা) না থাকলে কি হইব, হাড়া(খাটুনি)আছে৷"

আমার মায়ের কাছ থেকে শুনেছি মা যখন নতুন বউ হয়ে সংসারে আসে একদিন  আমার দাদি মাকে এ কথা বলেছেন ৷

আমার দাদা ছিলেন বেসরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক৷ প্রথমে নোয়াখালীর চাটখিল হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন৷ পরে লক্ষ্মীপুরের দিঘলী হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন৷

শুনেছি ,দাদার বাবা ছিলেন মূলতঃ কৃষক৷ সেই সাথে সিজনাল জিনিসপত্রের ব্যবসা করতেন৷ সাত মেয়ে ,এক ছেলে ছিল তাঁর৷ তিনি চেয়েছিলেন পড়ালেখা বাদ দিয়ে দাদা তাঁর ব্যবসাটা ধরুক৷

কিন্তু দাদা চেয়েছিলেন পড়ালেখা করতে- শিক্ষক হতে৷ তাই একদিন ঘরে থাকা পাট বিক্রি করে বেরিয়ে পড়লেন৷ পরিবারের কাছে বেশ কয়েকবছর কোন খবর ছিলনা কোথায় ছিলেন৷

চাটখিল এক বাড়িতে লজিং থেকে পড়ালেখা করে BN পাস করে , বাড়িতে আসলেন৷ এরপর শিক্ষকতায় ঢুকলেন৷

তাই সবাই ডাকত BN স্যার৷ নাম ছিল সৈয়দ আহমেদ৷

বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা ভেতরে জর্জরিত হলেও বাহিরে ঠাট আর নাম - সুনাম আছে৷

দাদা-দাদির সংসারেও সেই অবস্থা ছিল৷ শিক্ষিত মানুষ, স্যার! সেই সুনামে দূরের দূরের আত্মীয়-স্বজনও বেড়াতে আসত৷ পাড়া - প্রতিবেশি আবদার নিয়ে আসত৷ আর এসবের বেশিরভাগ সামলাতে হত দাদীকে৷

স্কুল ছিল বাড়ি হতে দূরে, তাই ভোরে ঘুম থেকে উঠে দাদিকে রান্না-বান্না করার খাটুনিটা করতে হত৷ ফজর নামায পড়েই চুলা ধরাত৷ আবার বিকালে স্কুল থেকে আসার আগেই খাবার রেডি রাখা৷ শিক্ষিত হেতু যে সে খাবার তো নয়!

দাদার বাবার অনেক সম্পত্তি ছিল৷ কোন ভাই না থাকায় উত্তরাধিকার সূত্রে দাদাই সব পেয়েছেন৷

ফসল ঘরের খাবার রেখে উদ্ধৃত বিক্রি করতেন৷ তবুও তিন ছেলে চার মেয়ের সংসারে খুব জৌলস ছিল না৷ টানাটানির ঘানি ছিল৷

দাদার বাবা নাকি তাই মাঝে তিরষ্কার করত৷

শিক্ষক হিসাবে আমার দাদা বড় কাজ করেছেন সমাজের অন্যদের মাঝে শিক্ষার সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন৷ অনেককে নিজের খরচে পড়িয়েছেন৷

নিজের সন্তানদের সুশিক্ষিত করে তুলেছেন৷ সামাজিক দায়িত্ব, কুসংস্কারমুক্ত করে গড়ে তুলেছেন৷

এখনও বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া দাদার কোন ছাত্রের সাথে দেখা হলে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন দাদাকে৷

দাদার নাতনী হিসাবে সমীহ করেন আমাকে৷ তখন এক সুখ পাই৷

স্বাধীনতার যুদ্ধের ঝড়ে ভেঙ্গে যায় দাদার অনেক স্বপ্ন৷ বড় ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে শহীদ হয়৷ ছেলের কথা শুনে তিনিও স্টোক করেন৷(তখন শুনেছি কলিজা ধরেছে)৷ মারা যান এক মাসের ব্যবধানে৷

মেঝ ছেলে(আমার বাবা) তখন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছেন। ছোট ছেলে কুমিল্লা বোর্ডে মেট্রিকে সপ্তম স্ট্যান্ড করেন৷ ছোট ছেলে -মেয়েদের রেখে কোন ব্যাংক ব্যালেন্স ছাড়াই দাদা চলে গেলেন পারাপারে৷অন্য সন্তানদের নিয়ে জীবন সাঁতরিয়ে কূলে উঠেছেন আমার দাদী৷

 

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি