Loading..

খবর-দার

০৫ অক্টোবর, ২০২০ ১০:৪০ অপরাহ্ণ

‘শিক্ষকের মর্যাদার জয় হউক’# দুলাল হালদার # সহকারি শিক্ষক # কুমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় # ছাতক, সুনামগঞ্জ।

‘শিক্ষকের মর্যাদার জয় হউক’ 

কবি কাজী কাদের নেওয়াজ তার শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতায় লিখেছেন-

‘ আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।’

          সত্যিই তাই। শিক্ষকের মর্যাদার জয় সর্বত্র হওয়া উচিত। শিক্ষকেরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। একজন মহান আদর্শ শিক্ষক তার নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে তার পরিবারকে তুচ্ছ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণের কাজ করে থাকেন করেন নিঃস্বার্থভাবে। এমন এমন শিক্ষক আছেন যারা সারা দিন রাত শুধু কাজ করেন শিশুদের কল্যাণের জন্য। তাদের যাতে ভাল হয়, তারা যাতে নিজ নিজ জ্ঞান আহরণ করে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয় এই খেয়ালেই তারা থাকেন। তাদের পড়াতে গিয়ে, তাদের ভালোর কথা চিন্তা করে নিজের নাওয়া খাওয়া ভুলে এমন কি নিজ পরিবার কি খাচ্ছে, কি পড়ছে তার খবর রাখেন না।

          বর্তমান করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তা সত্যেহ এই মহামারীর সময়েও তারা যে শিশুদের জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রেখেছে তার তুলনা হয় না। এই সময়ে ডিজিটাল বা অনলাইন ব্যবস্থার যে উত্তরণ ঘটেছে তা অন্য কোন সেক্টরেও দেখা যায়নি। দিন রাত অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছেন। এই অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় কাজটি করেছেন জাতি গঠনের কারিগর মহান শিক্ষকেরাই। স্যাল্যুট জানাই সেই সব মহান শিক্ষকদের।      

          শিক্ষক আমাদের হাত ধরেন, মনের দরজা খোলেন, হৃদয় স্পর্শ করেন। শিক্ষকরা জোগান অনুপ্রেরণা। পরামর্শদাতা হয়ে পাশে থাকেন সবসময়। কৌতূহলের বীজ রোপণ করে কল্পনাকে দিশা দেখান তারা। ভাল শিক্ষকের কারণেই সাধারণ পড়ুয়াও অসাধারণ কাজ করে ফেলে। জ্ঞানের পথে চালিত করে জীবনের দিশা ঠিক করে দেয়ার নামই শিক্ষক। নিজেদের সময়, শক্তি, এবং ভালোবাসার বিনিময়ে শিশুদের শিক্ষিত করে তোলে তোলেন তারা। সেরা শিক্ষক হৃদয় থেকে শিক্ষা দেন, বই থেকে নয়। শিক্ষক সম্পর্কে এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, ‘যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।’

         শিক্ষক দিবস এমন একটা দিন যা ছাত্রাবস্থা শেষ হয়ে গেলেও মুছে যায় না। বাবা মায়ের পর সন্তান যাঁদের কাছে সব থেকে বেশি সময় কাটায় তাঁরাই শিক্ষক। এমনও শিক্ষক আছেন যাদের বেঁচে থাকার কো্নো সম্মানের স্থানও নেই, নেই মাথার উপর কোনো ছাদ। সারা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন পরের বাসায়। এতে তার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই। ছাত্র-ছাত্রীরা মানুষ হলেই তাদের সার্থকতা। শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, শিক্ষকতা একটি মহান ব্রত। গোটা মনুষ্য সমাজের মধ্যে নৈতিক বিচারে শিক্ষকদের চেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি এবং শিক্ষকতার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা আর একটিও নেই। একজন আদর্শ শিক্ষক জানেন তার চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ এবং ভবিষ্যৎ বিড়ম্বনাময়। তবু তিনি হৃদয়ের টানে এই সুকঠিন জীবিকার পথ বেছে নেন। এজন্য তাকে জীবনব্যাপী সংগ্রাম করতে হলেও তিনি আদর্শচ্যুত হন না।

          বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পালন করা হয়। এ বছর সংস্থাটির সদস্যভুক্ত ১০০ দেশে ৪০১টি শিক্ষক সংগঠন দিবসটি উদ্‌যাপন করছে। বিশ্বের সব শিক্ষকের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেসকোর ডাকে এ দিবসটি পালন হয়ে থাকে। ১৯৯5 সাল থেকে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস।

          ইউনেসকো বলছে, বিশ্বে বর্তমানে ২৬ কোটি ৪০ লাখ শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিশ্বব্যাপী প্রায় সাত কোটি নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন। মেয়েশিশু, প্রতিবন্ধী, শরণার্থী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ব্যবধান অনেক বেশি। এই ব্যবধান দূর করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। শিক্ষক দিবস হলো শিক্ষকদের সম্মানার্থে পালিত একটি বিশেষ দিবস যা বাংলাদেশ এবং ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপিত হয়। এদিন শিক্ষকদেরকে তাদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সম্মাননা দেয়া হয়। ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপিত হলেও সেপ্টম্বরের ৫ তারিখ ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব শিক্ষক দিবস।

          বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস যথাযথ সম্মানের সাথে। এ বছর মুজিববর্ষ হওয়ায় দিনটির মর্যাদা আরোও বেড়ে গেলো। তবে আর স্কুল, কলেজে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয় এবারে ভার্চুয়াল পদ্ধতিই সকলে বেচে নিয়েছে শিক্ষক দিবস উদযাপনের জন্য। শিক্ষকতা কেবল চাকরি নয়, এটি একটি মহান পেশা। সমাজ গঠনে, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে, সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে একজন আদর্শ শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। মেধা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান-দক্ষতায় পরিপূর্ণ শিক্ষক হচ্ছেন দেশ ও জাতির অমূল্য মানবসম্পদ। জাতির বুনিয়াদ গঠনে ও জাতীয় ঐতিহ্য-লালনে শিক্ষকের ভূমিকা যে কোনো পেশাজীবীর চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। আজও তাঁরা তাঁদের বিরামহীন জ্ঞান উজাড় করে দিয়ে গড়ে যাচ্ছেন একের পর এক ছাত্রছাত্রী।

          সব শেষে বলতে চাই, শিক্ষকরাই সমাজ তথা দেশের দর্পণ। তাদেরকে অবহেলা করে দেশ বা জাতির উন্নতি কখনো সম্ভব নয়। আজ শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষকের গুণগান গাওয়া হচ্ছে। ভালো ভালো বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, সুন্দর সুন্দর বানী দিচ্ছেন ভালো কথা। সরকারের সকল বিভাগে, সমাজ, দেশ তথা সারা বিশ্বের সর্বত্র জাতি গড়ার কারিগর মহান শিক্ষকদের সর্বচ্চো সম্মান দিতে হবে। তাদের জীবন মান উন্নীত করে, তাদের নিরাপত্তা দিয়ে সুরক্ষিত রাখতে হবে। তা না হলে এই মহান শিক্ষকদের পক্ষে সকল শুভ পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হবে। সবশেষে আমি আবারো বলছি সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকের মর্যাদার জয় হউক। জয় হউক বিশ্বের সকল শিক্ষকদের। অফুরন্ত শুভেচ্ছা আর উষ্ণ অভিনন্দন সকল শিক্ষকদের প্রতি। মুজিববর্ষের উষ্ণ শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন। সফল হউক মুজিববর্ষ।    

শুভেচ্ছান্তে- দুলাল হালদার

 জেলা অ্যাম্বাসেডর, সুনামগঞ্জ।

 সহকারি শিক্ষক

কুমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ছাতক,সুনামগঞ্জ।

তারিখঃ ০৫/১০/২০20খ্রিঃ

Email:[email protected]