Loading..

মুজিব শতবর্ষ

২০ অক্টোবর, ২০২০ ১২:৫৩ অপরাহ্ণ

ভরণপোষণ বিধিমালা খসড়া তৈরি :মা-বাবার পরিচর্যা বাধ্যতামূলক...

প্রত্যেক সন্তানকে তার মা-বাবার যথোপযুক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। সন্তান নিজে উপস্থিত থাকতে না পারলে তার স্ত্রী, সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যদের দিয়ে তাদের উপযুক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো মা-বাবার একমাত্র ছেলে সস্ত্রীক চাকরি নিয়ে দূরে বা প্রবাসে থাকলে ‘উপযুক্ত প্রতিনিধির’ মাধ্যমে তাদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কারণে সন্তান মা-বাবাকে সঙ্গে রেখে ভরণপোষণ করতে না পারলে সরকারি-বেসরকারি ‘পরিচর্যা কেন্দ্রে’ রেখে পরিচর্যা করতে পারবে। এমন বিধান রেখে ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিধিমালার’ খসড়া তৈরি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা এ বিধিমালা চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেপ্টেম্বর মাসের সমন্বয় সভায় বলা হয়েছে, চলতি মাসেই এ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে হবে। সভায় জানানো হয়, এ বিষয়ে খসড়া বিধিমালা করা হয়েছে। খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করতে হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় অক্টোবর মাসের মধ্যে বিধিমালা চূড়ান্ত করতে হবে। অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও আইন), সংস্থা প্রধানরা ও উপসচিব (আইন ও সংস্থা) এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

জানা গেছে, ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩’ অধীনে ২০১৭ সালে মা-বাবার ভরণপোষণ বিধিমালা করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। পরে ওই খসড়ার সংশোধন করা হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (আইন ও সংস্থা অধিশাখা) মো. গিয়াস উদ্দিন মোগল বলেন, আশা করছি, ২০ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে পারব। ইতোমধ্যে স্টেকহোল্ডারদের মতামতও নেয়া হয়েছে।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, একমাত্র ছেলে সস্ত্রীক চাকরি নিয়ে দূরে বা প্রবাসে থাকলে ‘উপযুক্ত প্রতিনিধির’ মাধ্যমে মা-বাবার সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে ‘উপযুক্ত প্রতিনিধি’ বলতে সন্তানের কোনো নিকটাত্মীয় চাচা, চাচি, ফুপা, ফুপু, মামা, মামি, খালা, খালু, ভাই, ভাবি, ভগ্নি, ভগ্নিপতি, শ্যালক, শ্যালিকা বা এ ধরনের রক্ত-সম্পর্কীয় কেউ, বিশ্বস্ত কর্মী বা প্রতিবেশীকে বোঝানো হয়েছে। প্রত্যেক সন্তান মা-বাবাকে সঙ্গে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। একাধিক সন্তান থাকলে মা-বাবা কোন সন্তানের সঙ্গে বসবাস করবেন, তা তাদের ইচ্ছানুযায়ী হবে। সন্তান বা তার স্ত্রী-সন্তান মা-বাবার সেবা ঠিকমতো করছে কিনা তা যাচাই করতে সারা দেশের ওয়ার্ড পর্যায়ে সহায়ক কমিটি থাকবে। এছাড়া ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা, সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় পর্যায়ে এজন্য কমিটি থাকবে বলে খসড়া বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়া বিধিমালায় আরও বলা হয়, কোনো সন্তান বা তার স্ত্রী উপযুক্ত ভরণপোষণ ও সেবা নিশ্চিত না করলে সে বিষয়ে সহায়ক কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবেন মা-বাবা। অভিযোগ পাওয়ার পর কমিটি সরেজমিন গিয়ে মা-বাবা ও সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করবে। আলোচনার ভিত্তিতে তা সুরাহা না হলে কমিটি মা-বাবাকে অভিযোগ দাখিল করতে বলবে। ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালত তা নিষ্পত্তি করবে। এছাড়া সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ বা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করতে পারবে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে করা ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন’র নির্দেশনা অনুসারে ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিধিমালা’র এ খসড়া তৈরি করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সন্তান তার মা-বাবাকে সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করবে। সন্তান একাধিক হলে মা-বাবা কার কাছে থাকবেন, সে বিষয়ে তাদের ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সন্তান একজন হলে এবং কোনো উপযুক্ত কারণে একত্রে বসবাস করা সম্ভব না হলে আলোচনার মাধ্যমে বা ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ কমিটি’ নির্ধারিত অর্থ মা-বাবাকে দিতে হবে। একাধিক সন্তান থাকলে ও উপযুক্ত কারণে তারা একত্রে বসবাস না করলে মা-বাবার দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনীয় অর্থ নির্ধারণ করে প্রত্যেক সন্তান সম্মিলিতভাবে তা মা-বাবাকে দেবে।

কোনো মা-বাবার সন্তান জীবিত না থাকলে কিংবা ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে সংশ্লিষ্ট সহায়ক কমিটি তাদের মা-বাবাকে পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠাতে পারবে। খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাবিত কমিটিগুলো হল- সমাজকল্যাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে মা-বাবার ভরণপোষণবিষয়ক জাতীয় কমিটি, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে শহর কমিটি, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পৌর কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউনিয়ন কমিটি এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সদস্যের নেতৃত্বে সহায়ক কমিটি। ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ তহবিল’ নামে স্থায়ী ও চলতি তহবিল থাকবে জানিয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, স্থায়ী তহবিল গঠনের পর সরকার তাতে অনুদান হিসেবে অর্থ দেবে। স্থায়ী তহবিলে ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। দানপত্রে কোনো নির্দিষ্ট মা-বাবার নাম উল্লেখ থাকলে ওই অর্থে আগে তাদের প্রয়োজন মেটানো হবে, এরপর অর্থ উদ্বৃত্ত থাকলে সরকার তা ব্যয় করতে পারবে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি